একজন রোহিঙ্গাও না খেয়ে মরবে না: ত্রাণমন্ত্রী

প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের খাদ্য নিয়ে কোনো সঙ্কটে পড়তে দেবেন না বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2017, 11:36 AM
Updated : 21 Sept 2017, 05:16 PM

তিনি বলেছেন, “একটি মানুষও না খেয়ে মারা যাবে না, সে বিশ্বাস আপনারা রাখতে পারেন। আমরা সেভাবেই আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।”

রোহিঙ্গাদের শরণার্থী পরিস্থিতি জানাতে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন মন্ত্রী মায়া।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলেন, “এ পর্যন্ত না খেয়ে মারা গেছে এমন দৃষ্টান্ত কোথাও নেই, এটাই বাংলাদেশের সাফল্য।”

প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে তিন সপ্তাহে ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে এসেছে। কক্সবাজারে আগের ৪ লাখের সঙ্গে নতুন শরণার্থীদের রাখতে আশ্রয় কেন্দ্রে ১৪ হাজার ঘর করেছে সরকার।

বিশাল সংখ্যার এই শরণার্থীর জন্য নানা উদ্যোগে ত্রাণ সরবরাহ করা হলেও তা অপ্রতুল বলে ওই এলাকা ঘুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক দেখেছেন, ব্যবস্থাপনায়ও দেখা গেছে গলদ।

এই বিষয়ে প্রশ্নে মায়া বলেন, “আপনাদের বুঝতে হবে, এই অল্প সময়ে চার থেকে পাঁচ লাখ লোক হঠাৎ করে চলে এসেছে। যেসব জায়গায় তারা রয়েছেন, সেই জায়গা থাকার উপযোগী না। অতিবৃষ্টি চলছে, মানুষ কিন্তু স্থির থাকবে পারছে না, সেখানে তো কিছুটা প্রোবলেম থাকবেই।”

তবে এখন ‘৮০ ভাগ’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে দাবি করে তিনি বলেন, “খাদ্য সহায়তা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছাচ্ছে, বিলি-বণ্টন হচ্ছে, কোনো বিশৃঙ্খলা হচ্ছে না।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান বিশ্ববাসীর ‘মন ছুঁয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সব দেশ এগিয়ে আসছে, যারা একটু নমনীয় ছিল তারাও কিন্তু অনেক দূর এগিয়ে এসেছেন, অন্যরাও এগিয়ে আসবেন।”

শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোর বিষয়ে মায়া বলেন, “বিরাট কাজকে সহযোগিতা করার জন্য সেনাবাহিনীকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছি।

“ইতোমধ্যেই তারা কাজও করছেন। রাস্তা করা, শেল্টার তৈরি করা। পাহাড়ে তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তা করা সাধারণের পক্ষে সম্ভব না।”

এই শরণার্থীদের অস্থায়ীভাবে রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এরা মিয়ানমারের নাগরিক, তাদের ফিরে যেতে হবে। না যাওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার সহযোগিতা আমরা দেব, এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা।”

সচিব জানান, প্রথম দিন থেকেই ত্রাণ গ্রহণের কাজটি সেনাবাহিনী করছে।

বিশাল সংখ্যার শরণার্থীদের অবস্থানের সময় ‘নানান পদের সমস্যা হতে পারে’ বলেও স্বীকার করেন মন্ত্রী মায়া।

তিনি বলেন, “কান কিন্তু চারদিকে খোলা রাখা দরকার। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনীর পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি কেউ কিন্তু বসে নাই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দায়িত্ব ভাগ করে প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছে, একটু সময় দরকার।”

সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া- ছবি: পিআইডি

ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়ে সরকার

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিশ্রুত সহায়তা থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ২০ টন আটা এসেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৫০০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও নগদ ৩০ লাখ নগদ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। 

ত্রাণ বিতরণের কাজ বাংলাদেশ সরকার সমন্বয় করছে বলে জানান সচিব শাহ কামাল।

“অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের সঙ্গে থাকছে। ত্রাণ আসা অব্যাহত আছে, আমরা মনে করছি আমাদের সমস্যা উত্তরণে দেশি-বিদেশি ত্রাণ সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

“চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিমান বন্দর দিয়ে ত্রাণ গ্রহণ করা হচ্ছে। যারা ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন তারা পররাষ্ট্র এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে ত্রাণ দিচ্ছেন। এটা ইএফডি রিসিভ করছে।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর শ্রমিক ও ট্রাক দিচ্ছে ত্রাণ পৌঁছাতে। এরপর তা কক্সবাজার নিয়ে পাঁচটি গুদামে রাখা হচ্ছে বলে জানান শাহ কামাল।

“সেখান থেকে স্থানান্তর করতে উখিয়ার কুতুপালংয়ে ১৪টি গুদাম ঘর নির্মাণ করছি, ইতোমধ্যে ছয়টি হয়ে গেছে, বাকি আটটি হচ্ছে। ত্রাণ ১৪টি গুদামে রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী বিতরণ করা হবে।”

সচিব জানান, তুরস্ক প্রতিদিন ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে খাবার দিচ্ছে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) দিচ্ছে ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে। এছাড়া জেলা প্রশাসন এক লাখ মানুষকে খাবার দিচ্ছে।

শাহ কামাল বলেন, “প্রতিনিয়ত ত্রাণ আসছে। কেউ কেউ অর্থ, কেউ চাল, ডাল, গম, চিড়া, কেউ তাঁবু, কেউ কেউ প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে সহায়তা করছে।”

কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে চলছে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

২ মাসের মধ্যে নিবন্ধন

আগামী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, নিবন্ধন শেষ করতে আরও দুই মাস সময় লাগবে। আগে ১০টি পয়েন্ট থেকে নিবন্ধনের কাজ হলেও বৃহস্পতিবার থেকে ৩০টি পয়েন্টে এই নিবন্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়বে।

পাসপোর্স অধিদপ্তর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন করাচ্ছে বলে জানান সচিব।

২৫ অগাস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে এসেছেন, এদের মধ্যে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন হয়েছে ৫ হাজার ৫৭৫ জনের।