নিজস্ব অর্থায়নেই ‘স্মার্ট কার্ড’ দেবে সরকার

নাগরিকদের জন্য উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র ‘স্মার্ট কার্ড বিতরণে বিশ্বব্যাংক চলতি বছর শেষে নতুন করে অর্থায়নে আগ্রহী না হওয়ায় নিজস্ব অর্থায়নেই তা চালু রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2017, 09:07 AM
Updated : 21 Sept 2017, 09:16 AM

এজন্য প্রায় একহাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ভোটার তালিকা প্রস্তুত এবং জাতীয় পরিচিতি সেবা প্রদানে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এক নতুন প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এবিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান আইডিইএ (আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস) প্রকল্পের আদলে তৈরি নতুন প্রকল্প প্রস্তাবটি শিগগিরই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে, যাতে আগামী বছরের শুরুতেই এটার বাস্তবায়ন শুরু করা যায়।

“যাচাই-বাছাই শেষে তা একনেক বৈঠকে অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করা হবে, সরকারের অনুমোদন পেলেই বছর শেষে নতুন প্রকল্পের অধীনে স্মার্ট কার্ড বিতরণ চলবে।”

২০০৮ সাল থেকে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন চালুর পর নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালনায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আইডিইএ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

এ প্রকল্পের আওতায় নাগরিকদের স্মার্ট কার্ড দিতে ২০১৫ সালে ফরাসি কোম্পানি অবার্থর টেকনলজির সঙ্গে চুক্তি হয়; কয়েক দফা বাড়ানোর পর ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে প্রকল্পটির মেয়াদ ।নতুন করে বিদ্যমান প্রকল্পটিতে অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক আগ্রহী হচ্ছে না; অন্যদিকে জটিলতার কারণে অবার্থর টেকনলজির সঙ্গে চুক্তিও বাতিল করেছে ইসি।

তবে দেশের ১০ কোটি ১৮ লাখের বেশি ভোটারের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র দেড় কোটি ভোটারের হাতে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে। চলমান প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বরের মধ্যে সবার হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও তা দুই কোটির বেশি হবে না বলে কর্তাদের ধারণা। ততদিনে যোগ হচ্ছে আরও ২৫ লাখের বেশি নতুন ভোটার।

মোখলেসুর বলেন, “স্মার্ট কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়াটি সচল রাখতে হবে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত টেকনিক্যাল অফিসগুলোর কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। স্মার্ট কার্ড উৎপাদন, পার্সোনালাইজেশন, সার্ভার স্টেশন ও প্রকল্পের লোকবলকে ধরে রেখে কাজ এগিয়ে নিতে টেকসই আরেকটা প্রকল্প নিতে হচ্ছে।”

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, নতুন প্রকল্পে স্মার্ট কার্ডের অতিরিক্ত চাহিদা সরকারি অর্থায়নে করার জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংকও তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ওদিকে না তাকিয়ে থেকে সরকারি অর্থায়নেই যাতে স্মার্টকার্ড এবং আনুষাঙ্গিক সার্ভার, ডাটা সেন্টারসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ যেগুলো চলছে সেগুলো যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্যে দ্রুত প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।”

বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি’র সহায়তায় আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালের জুলাইয়ে ৯ কোটি ভোটারকে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে স্মার্টকার্ড  উৎপাদন-বিতরণে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান অবার্থুর টেকনোলজিসের সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে। পরে এর মেয়াদ ১৮ মাস বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যপূরণও হচ্ছে না।

ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান সাইফুল হক চৌধুরী জানান,  নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের ১ লা জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের জনবল দেখানো হয়েছে ২ হাজার ২৪ জন।

নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ইতোমধ্যে জানান,  চুক্তিটির মেয়াদ শেষ, আর নবায়ন হচ্ছে না  সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে ইসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্মার্টকার্ড পারসোনালাইজেশন করে বিতরণ করা হবে। বাস্তবতা বিবেচনা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে।