মূল সড়কটি এখনও চলাচলের উপযোগী থাকলেও পাশের সড়কগুলোতে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিক-আপ রেখে আবার দখলে নেওয়া হয়েছে। তেজগাঁও এলাকার বেশিরভাগ সড়কই এখন ট্রাকের দখলে।
বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির হিসাবে, তেজগাঁও এলাকা থেকে কমপক্ষে সাত হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ চলাচল করে। কিন্তু তেজগাঁও স্ট্যান্ডে দেড় হাজারের মত ট্রাক রাখার জায়গায় আছে; বাকিগুলো সড়কে রাখা হয়।
গত বছর সাতরাস্তা থেকে রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন করে সড়ক বিভাজকে লাগানো হয় গাছপালা। সড়কটি দখলমুক্ত হওয়ায় এর সুফলও পেতে শুরু করে নগরবাসী।
কিন্তু বুধবার তেজগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভূমি ও জরিপ অধিদপ্তরের সামনের সড়ক জুড়ে রাখা হয়েছে ট্রাক। একটি সড়কদ্বীপের তিনপাশে সড়ক এবং দুপাশেই ট্রাক রেখে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সেখানে সালাউদ্দিন নামের এক ট্রাক চালক বলেন, ভেতরে জায়গা না থাকায় সড়কে ট্রাক রেখেছেন তিনি। উচ্ছেদ হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই আবার সড়কে ট্রাক রাখা শুরু করেছেন।
“পুলিশ মাঝেমইদ্যে ঝামেলা করলে নেতারা পুলিশকে ম্যানেজ করে, ট্যাকাটুকা দেয়। তাইলে পুলিশ আর কিছু বলে না।”
ভূমি ও জরিপ অধিদপ্তরের প্রধান ফটক থেকে বিজি প্রেস স্টাফ কোয়ার্টার, সিএসডি গুদামের ২ নম্বর গেইট, সিএসডি ভাঙা গেইট মোড় হয়ে পুরোনো এফডিসি সড়কের পুরোটাই এখন ট্রাকের দখলে।
“পুরো রাস্তা তারা আবার দখল করে নিয়েছে। আমাদের বাসা থেকে বের হতে, বাসায় ঢুকতে ঝামেলা হয়। গাড়ি ঢুকতে তো সমস্যা আরও বেশি। আর ট্রাকের চালক-হেলপারদের অনেকে সবার সামনে মাদক সেবন করে। সরকারি বাসায় থাকি, ছাড়তেও পারি না।”
সিএসডি ভাঙা গেইট থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সড়কও চলে গেছে ট্রাকের দখলে। সড়কের এসব অংশে ট্রাক রাখার পাশাপাশি বিকল যানবাহন মেরামতও করা হচ্ছে। পুরো সড়কে জমে আছে কালিঝুলি। অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে। এ সড়কে হেঁটে চলারও উপায় নাই।
রেলক্রসিংয়ের কাছে সড়কেই ট্রাক রেখেছিলেন সাদ্দাম হোসেন নামের এক চালক। তিনিও বললেন, নির্ধারিত স্থানে জায়#গা না পেয়ে রাস্তায় রেখেছেন।
ওই সড়ক ঘুরে দেখা যায়, ট্রাক রেখে ইঞ্জিনের কাজ, দুর্ঘটনার শিকার যানবাহন মেরামত, নতুন ট্রাক ও কভার্ডভ্যানের বডি সংযোজন সবই সেখানে করা হচ্ছে। এই সড়কটিও পথচারীদের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সাত রাস্তা থেকে আজমেরি মোড়, সেটেলমেন্ট প্রেসের পাশ দিয়ে এফডিসি মোড়ের দিকে যাওয়ার সড়কে বহু ট্রাক-পিকআপ ভ্যান রেখে দেওয়া হয়েছে। একই অবস্থা দেখা গেছে সাতরাস্তা থেকে টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের পাশ দিয়ে দক্ষিণ বেগুনবাড়ি যাওয়ার সড়কে। এ সড়কের অর্ধেকের বেশি অংশ ছোট ট্রাকের দখলে।
আকিজ সিএনজি কনভার্শন সেন্টারের সামনে একটি ট্রাক রেখে তা পরিষ্কার করছিলেন চালকের সহকারী খোকন মিয়া। সড়কে ট্রাক রাখার কারণ জানতে চাইলে খোকন বলেন, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে সব বড় ট্রাক রাখা হয়। পিক-আপ ও ছোট ট্রাকগুলো বাইরে রাখা হয়।
বিজি প্রেস ও বিআরটিসি কেন্দ্রীয় ট্রাক ডিপোর পাশের সড়ক, বিজি প্রেস ও ইস্টার্ন টিউবের রাস্তা, বিজি প্রেস উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা, তেজগাঁও কলোনি বাজার সড়কের পরিস্থিতিও মোটামুটি এক। আর রাতে তিব্বত বাসস্ট্যান্ড থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত সড়কেও শতশত ট্রাক রাখা হয়। সকাল পর্যন্ত সড়ক জুড়ে থাকে এসব যানবাহন।
বাংলাদেশ ট্রাক, কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মূল সড়ক থেকে ট্রাক সরানো গেলেও জায়গা না থাকায় আশপাশের সড়কে চালকরা ট্রাক রাখছেন। চালকদের তারা সেখান থেকে সরাতে পারছেন না।
“আমরাও অনেক চেষ্টা করেছি সড়কটা ক্লিয়ার করার। কিন্তু জায়গা না দিলে তারা যেতে চায় না। আমাদের বলেছিল গাবতলীতে একটা ট্রাক স্ট্যান্ড করে দেবে। সেটারও কোনো খবর নেই।”
রাজধানীতে পরিকল্পিত কোনো ট্রাক টার্মিনাল না থাকার কারণেই এ অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রুস্তম আলী।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাস্তাগুলো আবার অবৈধ দখলে চলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তারাও চিন্তিত।
“আমরাও মাঝেমধ্যে দেখি সেখানে আড়ালে আবডালে রাখে। আবার আমরা যখন একটু নড়েচড়ে বসি, পুলিশকে বলি তখন তারা চলে যায়। এই লুকোচুরির মতো আরকি। আমরা আবারও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে বিষয়টি জানাব।”
ট্রাক স্ট্যান্ড সরিয়ে গাবতলীতে নেওয়ার উদ্যোগের কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানান আমিনুল ইসলাম।
“তেজগাঁওয়ের কিছু ট্রাক গাবতলীর আমিনবাজারে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে আমাদের একটি ট্রাক স্ট্যান্ড আছে। সেটার পরিধি আরও বাড়ানোর কথা ছিল, যেন সেখানে আরও বেশি ট্রাকের জায়গা দেওয়া যায়। মেয়র মহোদয় অসুস্থ্য হয়ে দেশের বাইরে আছেন। ফলে এই চ্যাপ্টারটা আর নাড়াচাড়া করা হয়নি। দেখি আমরা এবার সেটা নিয়ে কাজ শুরু করব।”