হারিকেন আরমা: ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণ পেছানোর শঙ্কা 

হারিকেন আরমায় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ক্ষয়ক্ষতির কারণে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2017, 01:53 PM
Updated : 14 Sept 2017, 03:24 AM

‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ প্রকল্পের পরিচালক মো. মেজবাহুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হারিকেনের প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও বুলগেরিয়ার দুটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের তারিখ থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কম্পানি ‘স্পেসএক্স’ এর ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে আসছে ১৬ ডিসেম্বরে ফ্লোরিডার লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি চলছিল।

কিন্তু সূচিতে গড়বড় হলে বাংলাদেশর প্রথম উপগ্রহের উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মেজবাহুজ্জামান।

ক্যারিবীয় অঞ্চলে তাণ্ডব চালানোর পর গত সোমবার ফ্লোরিডার মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানে হারিকেন আরমা। প্রবল ঝড়ে রাজ্যের ৩৪ লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে, বিভিন্ন নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।

প্রকল্প পরিচালক জানান, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ এর সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট রিভিউ (এসআরআর) এবং প্রিলিমিনারি ডিজাইন রিভিউ (পিডিআর) ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্টেনা তৈরি এবং কমিউনিকেশন ও সার্ভিস মডিউল তৈরির কাজও শেষ।

উৎক্ষেপণের প্রস্তুতিতে বিভিন্ন পরীক্ষাও এরই মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানান মেজবাহুজ্জামান।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণের এই কাজ চলছে ফ্রান্সের থালিস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে। নির্মাণ, পরীক্ষা ও পর্যালোচনা শেষে বিশেষ কার্গো বিমানে করে সেটি লঞ্চ সাইট কেইপ কেনাভেরালে পাঠানোর কথা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কেইপ কেনাভেরালে স্পেসএক্স এর ফ্যাসিলিটি থেকে কোনো কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের আগে লঞ্চ প্যাডের প্রস্তুতিতে দুই মাস সময় লাগে। লঞ্চ ভেহিকল ফ্যালকন-৯ এর ইন্ট্রিগ্রেশনসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শুরু করতে হয় নির্ধারিত তারিখের এক মাস আগে থেকে।

ফলে দুটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সময় পিছিয়ে যাওয়ার প্রভাব বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ওপর পড়তে পারে বলে তারা মনে করছেন।    

২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এই ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায় ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কিনতে থালিসের সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি।

‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে অর্থায়নের জন্য হংক সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সঙ্গে গতবছর প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করা হয়।

সরকার আশা করছে, এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পর বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনের জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি স্থানে কাজ চলছে।