অঙ্গদান: আত্মীয়দের পরিধি বাড়িয়ে সংসদে বিল

মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেওয়া-নেওয়ায় পরিধি বৃদ্ধিতে আত্মীয়ের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করে জাতীয় সংসদে ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) বিল, ২০১৭’ উত্থাপন করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2017, 01:07 PM
Updated : 13 Sept 2017, 01:07 PM

সংসদের বুধবারের অধিবেশনে বিলটি তোলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

গত ১৭ জুলাই ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন- ২০১৭’ এর খসড়ায় সায় দেয় মন্ত্রিসভা।

প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে, কোনো হাসপাতাল সরকারের অনুমতি ছাড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করতে পারবে না। এই আইন কার্যকর হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে অনুমতির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। তবে সরকারি হাসপাতালের বিশেষায়িত ইউনিটে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের ক্ষেত্রে অনুমতি লাগবে না।

বিদ্যমান আইনে শুধু পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী এবং রক্ত-সম্পর্কিত আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা এই ১২ জন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান ও গ্রহণ করতে পারেন।

তবে সংশোধিত বিলে ‘নিকট আত্মীয়ে’র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, পিতা-মাতা, পুত্র-কণ্যা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী ও রক্ত সম্পর্কিত আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা, নানা-নানি, দাদা-দাদি, নাতি-নাতনি, আপন চাচাত-মামাত-ফুপাত-খালাত ভাই-বোনেরাও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান ও গ্রহণ করতে পারবেন।

মৃত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও অন্যের শরীরে সংযোজন করা যাবে।

বিলে ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে’র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, মানবদেহের কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, অন্ত্র, যকৃত, অগ্নাশয়, অস্থি, অস্থিমজ্জা, চক্ষু, চর্ম ও টিস্যুসহ মানবদেহে সংযোজনযোগ্য যে কোনো অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গকে বোঝাবে। 

বিলে আত্মীয়ের মিথ্যা তথ্য দেওয়াসহ আইন ভঙ্গের অপরাধে সাজার মেয়াদ কমলেও বাড়ানো হয়েছে জরিমানা।

এতে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি নিকটাত্মীয় সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিলে বা মিথ্যা তথ্য প্রদানে উৎসাহিত বা প্ররোচিত বা ভীতি প্রদর্শন করলে অনধিক দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। আইনের অন্যান্য বিধান লঙ্ঘন করলে অথবা লঙ্ঘনে সহায়তা করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। কোনো চিকিৎসক দণ্ডিত হলে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের দেওয়া নিবন্ধন (চিকিৎসা সনদ) বাতিল হবে।’

এছাড়াও কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ করলে অনুমতি বাতিল ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে- ‘সুস্থ ও স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির চোখ ছাড়া অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিযুক্তির কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা না থাকলে তিনি নিকটাত্মীয়কে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন। তবে চোখ ও অস্থিমজ্জা সংযোজন ও প্রতিস্থাপনে নিকটাত্মীয় হওয়ার প্রয়োজন হবে না’।

এতে আরো বলা হয়েছে, জীবদ্দশায় কোনো ব্যক্তি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করলে ওই ব্যক্তির ‘ব্রেইন ডেথ’ ঘোষণার পর আইনানুগ উত্তরাধিকারী যদি লিখিতভাবে অনুমতি দেন, তাহলে সংযোজনের জন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিযুক্ত করা যাবে।

বিলটি পরীক্ষা করে ষাট দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।