রোহিঙ্গাদের সামলাতে সমন্বিত কাজ করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের শরণার্থী পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসামরিক প্রশাসন, সেনা, নৌ, কোস্ট গার্ড ও সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুমন মাহবুব কক্সবাজার থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2017, 04:10 PM
Updated : 12 Sept 2017, 04:10 PM

কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শন এবং শরণার্থীদের ত্রাণ বিতরণ শেষে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন।

বৈঠকে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ছিলেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল হক, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদসহ স্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

এছাড়াও সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ ইকবালুর রহিম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফসহ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরাও ছিলেন বৈঠকে। 

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কক্সবাজাজারে যাওয়া বোন শেখ রেহানাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিত এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের তাগিদ দেন।

শরণার্থীদের অসুস্থতার বিষয়ে নজর দিতে বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, “ক্যাম্পে দেখলাম এক মেয়ের গায়ে জ্বর।”

বৈঠকের শুরুতেই কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন জানান, বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে এবার মিয়ানমারের ৩ লাখ ৭০ হাজার ৬০০ নাগরিক বাংলাদেশে ঢুকেছে।

কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত দিয়ে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলেও তিনি জানান।

উখিয়া সীমান্ত দিয়ে আরও ২০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে বলে আলী হোসেন জানান।

ত্রাণ কার্যক্রম পরিকল্পিতভাবে করতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেন সরকার প্রধান। 

ইউএনএইচসিআর ও আইওএময়ে মতো শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। ত্রাণ কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে বলেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের।

মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীদের বাংলাদেশে প্রবেশের সময় যথাযথভাবে তল্লাশির বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। 

কক্সবাজারে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন থাকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন।

বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে টহল জোরদারের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী, যাতে কেউ কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাতে না পারে।  

যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তত থাকারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। 

মিয়ানমারের নাগরিকদের অবশ্যই ‍বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে হবে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শত শত বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাসরত নিজেদের নাগরিকদের বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে থাকা দুঃখজনক। 

ত্রাণ কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিপীড়ন চলে আসছে কয়েক দশক ধরে। বিভিন্ন সময়ে সহিংসতার মুখে সেখান থেকে পালিয়ে এসে চার লাখের বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে।

তাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার বার আহ্বান জানানো হলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। 

এবার শরণার্থীদের এই স্রোত ঠেকাতে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মতো কোনো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে একাধিক নিরাপদ এলাকা (সেইফ জোন) গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।