রোহিঙ্গা সঙ্কটে চীন-ভারত পাশে থাকবে, আশায় বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় চীন ও ভারতকে পাশে পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2017, 11:19 AM
Updated : 11 Sept 2017, 05:34 PM

পরিস্থিতি শান্ত করে লাখ লাখ শরণার্থীকে ফেরত নিতে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দেওয়ার কথা সরকারের বলার চীন-ভারতকে নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।

চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানাতে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার দ্বিতীয় দফায় সোমবার এশিয়ার কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে আসেন তিনি।

আগের দিনের বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশের কোনো প্রস্তাবেই সাড়া দিচ্ছে না মিয়ানমার। উপরন্তু নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।

রাখাইন (এক সময়ের আরাকান) রাজ্যের বাসিন্দা মুসলিম রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের নাগরিক বলে মানতেই নারাজ মিয়ানমার। তারা এদের বাঙালি বলতে চায়।

জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের এক-তৃতীয়াংশ গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে রয়েছে। সাম্প্রতিক সহিংসতার পর নতুন করে আরও ৩ লাখ এসে পড়েছে।

বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ‘সেইফ জোন’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস দমনে সীমান্তে যৌথ অভিযান চালাতেও মিয়ানমারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদোয়ের উদ্বেগের মধ্যেও বাংলাদেশের কোনো প্রস্তাবেই সাড়া দিচ্ছে না বলে মিয়ানমারকে

থামাতে চীন ও ভারতের দ্বারস্ত হতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।

সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “চীন ও ভারত আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ। এই দুঃখকালীন, কষ্টকালীন সময়েও তারা আমাদের পাশে থাকবে, আগে যেভাবে থেকেছে।”

আগুন জ্বলছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার গর্জনদিয়া, সারাপাড়া, বড়ডিল ও খোনাকারাপাড়া গ্রামে। সোমবার দুপুর থেকে জ্বলতে দেখা গেছে গ্রামগুলো। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

মিয়ানমার যেভাবে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করে আসছে, ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূতও এক দিন আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একই ভাষায় কথা বলেন। বর্তমান সংঘাতের জন্য রোহিঙ্গাদেরই দায়ী করেন তিনি।

চীনের অবস্থান মিয়ানমার সরকারের পদক্ষেপের পক্ষে রয়েছে বলে যুক্তরাজ্যের দৈনিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কটে উদ্বেগ থেকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদে যে চিঠি দিয়েছেন, তার প্রসঙ্গ ধরে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির এক উপদেষ্টা এই সমর্থনের কথা বলেন।

তিনি টাইমসকে বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বিপক্ষে কোনো প্রস্তাব এলে চীন ও রাশিয়া তা আটকে দেবে।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানের আগ্রহের কথা বললেও দেশটির আচরণে ক্ষোভ এসেছে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্য থেকে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে ‘পরোক্ষ হামলা’ চালাচ্ছে। মিয়ানমারের এই পদক্ষেপকে বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ’ বলছে বিএনপি।

যেখানে সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশকে শরণার্থীর ভার বহন করতে হচ্ছে, সেই মিয়ানমারকে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দিতে সংসদে একটি প্রস্তাবও পাস হয়েছে সোমবার।

এদিন তার আগেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে এই সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গাদের ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী’ এবং সেনা ও পুলিশ চৌকিতে হামলাকারীদের ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ বলে অপপ্রচার চালানোর মাধ্যমে মিয়ানমার পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মত।

সোমবার কূটনীতিকদের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে মিয়ানমার বাদে আসিয়ান জোটভুক্ত অন্য সব দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডাকা হয়েছিল।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোয় সহাযোগিতার পাশাপাশি এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের জন্য সাহায্য চেয়েছেন।

এদিকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের হাই কমিশনার জেইদ রা’দ আল হুসেইন রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে অন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।