সোয়া এক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পথে: জাতিসংঘ

রাখাইন অঞ্চলের রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব অথবা বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2017, 06:28 AM
Updated : 6 Sept 2017, 06:28 AM

মঙ্গলবার জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে বলা হয়, অগাস্টের শেষ দিকে নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর প্রায় সোয় এক লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের পথে পা বাড়িয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৪ অগাস্ট রাখাইনের পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলার যে ঘটনা ঘটেছে তার নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।

“কিন্তু এরপর থেকে আমরা কেবল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সহিংসতা আর নির্বিচারে হামলার খবর পাচ্ছি।”   

রাখাইন অঞ্চলের রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও মহাসচিব উদ্বেগ প্রকাশ করেন। 

 

গুতেরেস বলেন, তিনি তার উদ্বেগের কথা নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন এবং মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধের পদক্ষের নিতে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।   

তিনি বলেছেন, রাখাইনের মুসলমান রোহিঙ্গাদের অধিকারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত হয়ে আসছে এবং বিষয়টি যে এখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

পরিস্থিতির আরও অবনতি ঠেকাতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধানের পথ খুঁজতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। 

সেই সঙ্গে সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সহায়তা দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

“এই সঙ্কটের মূল খুঁজে বের করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে আর বিলম্বের সুযোগ নেই। রাখাইনের মুসলমানদের নাগরিকত্ব দেওয়া বা আপাতত তাদের বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে করে তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কাজ করার সুযোগ পায় এবং স্বাভাবিক মানুষের মত জীবনযাপন করতে পারে।”

জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আগামী তিন মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ডলার সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা-আইওএম এর পরিচালক (অপারেশনস) মোহাম্মদ আবদিকার বলেছেন, রাখাইনের পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার আগেই আরও বহু মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়বে, তার স্পষ্ট লক্ষণ তারা দেখতে পাচ্ছেন। পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা না পেলে এই রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।     

মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বাংলাদেশ বহন করে চলেছে গত কয়েক দশক ধরে। বাংলাদেশ সরকার তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি।

এর মধ্যে গত ২৪ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনাক্যাম্পে হামলার পর থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের এই ঢল চলছে।

গত কয়েক দিন ধরে কক্সবাজারের কুতুপালং থেকে শুরু করে থাইংখালী পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাহাড়ে পাহাড়ে বাঁশ আর পলিথিনের অসংখ্য ঝুপড়ি গড়ে তুলেছে তারা। রোহিঙ্গাদের নতুন বসতি দেখা গেছে টেকনাফ সীমান্তবর্তী হোয়াইক্যং ইউনিয়নসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকাতেও।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা প্রতিদিনই আসছে। তারা যেভাবে পাহাড়ের যত্রতত্র আশ্রয় নিচ্ছে, তাতে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, গতবছর অক্টোবরে রাখাইনে সহিংসতার পর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হলে উখিয়ার বালুখালিতে বনবিভাগের কাছে ৫০ একর জমি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। গত বছর আসা কয়েক হাজার রোহিঙ্গা সেখানে আছে। নতুন করে যারা আসছে, তাদেরও সেখানে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার কথা ভাবছে জেলা প্রশাসন।