পানি কমার সঙ্গে খোলসা হচ্ছে বন্যার ক্ষত

বন্যা কবলিত সব এলাকায় পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এই দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে, এবারের বন্যার বিস্তার কম হলেও প্রাণহানির দিক থেকে তা ১৯৮৮ ও ৯৮ সালের বন্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।  

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2017, 03:18 PM
Updated : 27 August 2017, 01:52 PM

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩২ জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৮২ লাখ মানুষ। পানিতে ভেসে ও বন্যাজনিত অন্যান্য কারণে মৃত্যু হয়েছে ১৪০ জনের।

প্রায় সোয়া ছয় লাখ ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে, ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ শতাধিক, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার, বাঁধে ক্ষতি হয়েছে সাত শতাধিক কিলোমিটার। সাড়ে ৬১ হাজার টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুর্গত এলাকায়।

ফাইল ছবি

ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাড়ে চার হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (দুব্য) সত্যব্রত সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকা স্বাভাবিক। প্রথমদিকে মাঠ কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র সংগ্রহ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এখন বিস্তারিত তথ্য পাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩২ জেলার ২১০ উপজেলা ও ৫৮টি পৌরসভা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফাইল ছবি

কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, রাঙামাটি, নীলফামারি, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নাটোর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ঢাকা, শেরপুর জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ এই দফায় বন্যার কবলে পড়েছে।

ক্ষয়ক্ষতি

>> বন্যায় ২৩ জেলার আট হাজার ৯৮২ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে জামালপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি এক হাজার ১০৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

>> এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৪০ জনের। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে দিনাজপুরে ৩০ জনের। এরপরে কুড়িগ্রামে ২৩ জন, জামালপুরে ১৭ জন, গাইবান্ধায় ১৩ জন, সিরাজগঞ্জে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে।

>> বানের জলে ৬ লাখ ২৩ হাজার ৪০১ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 >> ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

 >> দুর্গত জেলাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬১ হাজার ৫৬৬ টিউবওয়েল 

  >> ক্ষতি হয়েছে ৫০টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের

>> ৭০২ কিলোমিটার বাঁধ এবং ৫১১টি ব্রিজ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এবার মৃতের সংখ্যা আগের দুটি প্রলয়ঙ্করী বন্যার রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও ১৯৯৮ ও ১৯৮৮ সালে অনেক বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ।

ফাইল ছবি

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবারের বন্যায় দেশের ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়, যেখানে ১৯৯৮ সালে প্রায় ৬৮ শতাংশ এবং ১৯৮৮ সালে প্রায় ৬৪ শতাংশ এলাকা তলিয়েছিল।

ওই দুবার অনেক এলাকায় বন্যা দুই মাসের বেশি সময় স্থায়ী হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।

রিয়াজ আহমেদ বলছেন, বিস্তার ও স্থায়িত্বে ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের দুটি বড় বন্যার মতো ভয়াবহ না হলেও এবারের বন্যায় মৃতের সংখ্যা ওই দুই বছরের হিসাব ছাড়িয়ে গেছে।

প্রাণহানির বাড়ার কারণ হিসেবে অনেক এলাকায় বাঁধ ভেঙে আকস্মিক প্লাবনের কথা বলছেন তিনি।

গত দুই সপ্তাহ ধরে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।এখন দেশের দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলেও অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

ফাইল ছবি

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন শনিবার বলেন, দেশের উত্তর অঞ্চলের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি (কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ) উন্নতি অব্যাহত থাকবে। পদ্মা নদীর পানি কমা অব্যাহত থাকায় দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের (মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর) নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিও উন্নতির দিকে থাকবে।

পানি নেমে গেলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তিন মাস পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উত্তরাঞ্চলের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে শনিবার তিনি বলেন, “বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সরকার তিন মাস পর্যন্ত সব ধরনের সহায়তা দেবে। এক কোটি দরিদ্র মানুষকে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেওয়া হবে। …বন্যায় যারা বাড়ি-ঘর হারিয়েছে, তাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এছাড়া ভূমিহীনদের জমি দেওয়া হবে।”