পাইরেসির জন্য গান বানানো ছেড়েছি: আইয়ুব বাচ্চু

পাইরেসি বন্ধ না হওয়ায় ‘অভিমান’ থেকে গান বানানো ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু।

তাবারুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2017, 05:42 PM
Updated : 23 August 2017, 05:57 PM

তিনি বলছেন, এখন বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে ১০ টাকা দিলেই কয়েক হাজার গান দিয়ে দেয় সিডি, পেনড্রাইভ, মোবাইল বা অন্য কোনো ডিভাইসে। সেখানে গান করে আর কী হবে?

বুধবার রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাব-১ এর কার্যালয়ে পাইরেসির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ১৭ জনকে গ্রেপ্তারের খবর জানাতে এই বাহিনীর সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন আইয়ুব বাচ্চুসহ চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত জগতের কয়েকজন।

সংবাদ সম্মেলনের পর আইয়ুব বাচ্চু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাইরেসি বা কপিরাইট নিয়ে কথা বলতে বলতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। যে ছেলেরা পাইরেসি করছে, সেটা যে অপরাধ, তারা আদৌ জানে কি না সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছে। ওদেরকে কে চাকরি দিয়েছে, বা দোকানটা কার? যারা মার্কেটে এসব পাইরেসি নিয়ে আসে তাদের চিহ্নিত করতে হবে।”

‘এখন অনেক রাত’, ‘সুখেরই পৃথিবী’, ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’সহ বহু জনপ্রিয় গানের শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু।

রক ব্যান্ড দল এলআরবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আইয়ুব বাচ্চু বলেন, “এখন আমরা গান বানানো ছেড়ে দিয়েছি, এক ধরনের অভিমান থেকে। কারণ গান বানিয়ে আর কোনো কাজে দেবে না। সিনেমা সিডি হয়ে যাচ্ছে, ১০ টাকা দিলে পাইরেসিওয়ালারা আমাদের তিন হাজার গান একসাথে দিয়ে দিচ্ছে।

“যে তিন হাজার গান করতে গিয়ে তিন লক্ষ ফোঁটা ঘাম ঝরিয়েছে তারা ধনী হয়নি, কেউ ধনী হয়নি। মাঝখানে একটি সাম্রাজ্য ভেঙে গেছে।”

পাইরেসির মূলে যারা তাদের খুঁজে বেরা করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “এরা কারা? যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসা করা হোক, এদের পিছনে কে আছে?”

দেশের চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত শিল্পকে বাঁচাতে হলে পাইরেসিকে ‘অসুখ’ মনে করে তা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

চলচ্চিত্র অভিনেতা ওমর সানির মতে, পাইরেসির কারণে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এখন ‘মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে’।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ক্ষতি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। চলচ্চিত্র আজ মরুভূমির মতো একটি জায়গাতে এসে দাঁড়িয়েছে। আজ যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে সেই অবস্থা থেকেও উত্তরণ সম্ভব। যদি আমাদের সততা ও ইচ্ছা থাকে তাহলেই সম্ভব।”

কলকাতার চলচ্চিত্র এক সময় ‘খারাপ অবস্থায়’ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা সেটা কাটিয়ে উঠেছে একমাত্র সরকারের সহযোগিতার কারণে। বিষয়টি কঠোরভাবে হ্যান্ডলিং করা হলে আমাদের দেশেও পাইরেসি বন্ধ হয়ে যাবে এবং এই শিল্প আবার জাগ্রত হবে।”

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ চলচ্চিত্র ‘ধ্বংসের’ একমাত্র কারণ হিসেবে পাইরেসিকে চিহ্নিত করেন।

“একটা ছবি পাইরেসি হয়ে গেলে সেটা আর সিনেমা হলে চলে না। এতে প্রযোজকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রযোজক যদি সিনেমা থেকে টাকা না পায় তাহলে পরবর্তীতে আর কোনো সিনেমা বানাবে না।”

জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে পাইরেসি বন্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে আবদুল আজিজ বলেন, “এখন যেটা হচ্ছে, সিনেমা হল থেকে ক্যামেরা দিয়ে কপি করা হয়। এতে নির্দিষ্ট এক-দুই হল মালিকের যোগসাজশ রয়েছে। কিন্তু কোন হল থেকে কপি হয়ে যায়, তা বের করা কঠিন।”

এজন্য দেশের সব সিনেমা হলে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বক্ষণিক নজরদারির দাবি জানান তিনি।

কপিরাইট আইনে সাজা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ যদি পাইরেসি করে তাকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া উচিত।”