নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে দেশের ২৯টি স্থান

চলমান বন্যার মধ্যে দেশের ২৯টি স্থান নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2017, 02:58 PM
Updated : 21 August 2017, 03:56 PM

প্রতিষ্ঠানটির রিভার, ডেল্টা অ্যান্ড কোস্টাল মরফোলজি বিভাগের জুনিয়র স্পেশালিস্ট সুদীপ্ত কুমার হোড় জানান, চলতি বছরের স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ করে ঝুঁকির ওই স্থানগুলো তারা চিহ্নিত করেছেন।

“এ বছর দেশের ২৯টি লোকেশনে নদীক্ষয় হতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। তার মধ্যে যমুনায় ২০টি, গঙ্গায় পাঁচটি ও পদ্মায় চারটি এলাকাকে আমরা চিহ্নিত করেছি।”

ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এ তথ্য পৌঁছে দিতে বেশ কিছু জায়গায় সতর্কীকরণের কাজ শুরুর কথাও জানান তিনি।

তবে ওই ২৯টি এলাকার সুনির্দিষ্ট তালিকা অনুষ্ঠানে জানানো হয়নি।

সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘স্থানীয় পর্যায়ে নদীভাঙনের ঝুঁকি, পূর্বাভাস, সতর্কীকরণ, প্রচার ও করণীয় বিষয়ক পরামর্শসভায় ২০১৭ সালের জন্য নদী ভাঙনের পূর্বাভাস তুলে ধরেন সুদীপ্ত।

সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, সিইজিআইএস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের যৌথ এ পরামর্শ সভায় নদী ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোকে একটি জেলার আওতায় নিয়ে আসারও প্রস্তাব আসে।

সভায় জানানো হয়, জলবায়ু পরিবর্তন, বড় নদীগুলোর চ্যানেল পরিবর্তন এবং বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ার কারণে দেশে নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। ফলে প্রতি বছর নদী তীরবর্তী অসংখ্য মানুষ বসতভিটাসহ আবাদী জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন।

এ অবস্থায় নদী ভাঙনের আগাম তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো রক্ষা করতে নদীর তীর সংরক্ষণ, নতুন বাঁধ নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম অনুষ্ঠানে বলেন, “মানুষের দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাদের জমি ও জীবিকার ব্যবস্থা নিশ্চিতে স্থানীয়ভাবে অ্যাডভোকেসির ব্যবস্থা থাকতে হবে।”

তিনি বলেন, বন্যার পর যে পলি জমা হয়, তাতে ভালো সবজি চাষ করা যায়। কিন্তু সেখানে বাজার থাকে না। সেজন্য মার্কেট লিংকেজ তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

পদ্মা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন ‘স্বাভাবিক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সেজন্য নিচু এলাকায় বসবাসের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো তৈরির পাশাপাশি স্কুল-ঘরবাড়িগুলো এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে তা সরিয়ে নেওয়া যায়। ‍

“জীবনব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নির্মাণের অবকাঠামো তৈরি করে সেটাকে ন্যাশনাল ক্যারেক্টারের মধ্যে আনতে হবে।”

প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দুর্গত মানুষকে সহায়তা করা হয় না অভিযোগ করে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, “ভাঙন যেখানে হয়, সেখানকার মানুষ কেন গরিব হয়ে যাচ্ছে? কারণ জমি জলে গেলে তা কোনভাবে তারা উদ্ধার করতে পারছেন না, প্রভাবশালী কেউ সেই জমিটা নিজের নামে করে নিচ্ছে।”

এজন্য নদী সংলগ্ন জেলাগুলোকে একটি প্রশাসনিক জেলার আওতাভুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে শামসুল আলম বলেন, “যারা এ নদীর ওপর দিয়ে যাবে, মাছ ধরবে; তারা ট্যাক্স দেবে। আর সে টাকাতেই এ এলাকার খরচ চলবে। এটা ফ্যান্টাসি মনে হলেও বাস্তবায়ন করা গেলে ভাঙন-প্রবণ এলাকার মানুষের জন্য তা সহায়ক হবে।”

ডিএমসিসি কর্মসূচির পরিচালক গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, নদী ভাঙনের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতা তখনই সার্থক হবে, যদি তা সময়মত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় এবং নদী শাসনের কর্মকাণ্ডে সেসব তথ্য ব্যবহার করা সম্ভব হয়। আর তা করতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ত্রাণ তৎপরতায় উদাসীনতার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসকের সময়ের অভাবে সময়মত রিলিফ দেওয়া হয় না। এমনকি দুই-তিন দিন পরও দেওয়া হচ্ছে, আনুষ্ঠানিকতা হয়নি বলে রিলিফ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি।

“তৈরির পর দুই মাস পার হয়ে গেলেও ব্রিজের উদ্বোধন করা হচ্ছে না আনুষ্ঠানিকতা হচ্ছে না বলে। সাধারণ মানুষের সাথে এ মশকরা বন্ধ করুন।”

সিইজিআইএস-এর উপনির্বাহী পরিচালক ড. মমিনুল হক সরকার বলেন, বন্যা, সাইক্লোনের কারণে ব্যক্তির ক্ষতি হলেও সে জমি হারায় না। কিন্তু নদী ভাঙনে মানুষ জমি, এমনকি ভিটেবাড়িও হারায়। এ সমস্যা নিরসনে নদী ব্যবস্থাপনার দিকে বেশি নজর দিতে হবে।

ডিএমসিসি গত বছর থেকে সিইজিআইএস-এর কারিগরি সহযোগিতায় ‘নদীভাঙনের ঝুঁকি, পূর্বাভাস ও পরামর্শ’ শীর্ষক প্রকল্প বিভিন্ন জেলায় বাস্তবায়ন করছে।

এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় চলতি বছর আট জেলার ১৬টি উপজেলার ১৩টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সতর্কীকরণ-বার্তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এ পরামর্শসভার আয়োজন করা হয়।  

অন্যদের মধ্যে ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেইঞ্জ কর্মসূচির পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সৈয়দা মেহেরুন নেছা কবীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।