শিল্পকলায় জহির রায়হান চলচ্চিত্র উৎসব শুরু

‘প্রতিরোধে প্রস্তুত ক্যামেরা’- প্রতিপাদ্যে শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে দুইদিন ব্যাপী জহির রায়হান চলচ্চিত্র উৎসব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2017, 11:42 AM
Updated : 18 August 2017, 11:42 AM

চলচ্চিত্র নির্মাতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জহির রায়হানের ৮২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করেছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ।

উদ্বোধনী পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ।

জহির রায়হানের জীবন, কর্ম ও আদর্শ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি চলচ্চিত্র আন্দোলনের নানা পর্যায় এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বোধনী পর্বে আলোচনা অংশ নেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।

উদ্বোধনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জহির রায়হান নির্মিত বিভিন্ন চলচ্চিত্রের গান পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা।

এরপর দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। শুরুতেই প্রদর্শিত হয় ‘স্টপ জেনোসাইড’, এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় চলচ্চিত্র ও চারুকলা বিভাগ প্রযোজিত এবং প্রদীপ ঘোষ রচিত ও নির্দেশিত প্রামাণ্যচিত্র ‘ভাষানপানি’ প্রদর্শিত হয়।

এরপর একে একে দেখানো হয় তৌকির আহমেদ নির্মিত ‘অজ্ঞাতনামা’, কামার আহমেদ সাইমন নির্মিত ‘একটি সুতার জবানবন্দি’ এবং তানভীর মোকাম্মেল নির্মিত ‘জীবনঢুলী’। রাত সাড়ে ৮টায় শেষ হয় উৎসবের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানমালা।

শনিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে উৎসবের দ্বিতীয় ও শেষ দিনের অনুষ্ঠানমালা। এদিন দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রদর্শিত হবে প্রজন্ম টকিজের সালেহ সোবহান অনীম নির্মিত ‘পুনরাবৃত্তি’, সাঈদ আহমেদ সাকী নির্মিত ‘উপসংহার’ এবং জাহিদুর রহিম অঞ্জন নির্মিত ‘মেঘমল্লার’।

ক্যানভাসে মুক্তির অন্বেষা

নাগরিক জীবনের স্বপ্ন, স্মৃতি-চৈতন্য এবং অনুভবের গল্পগুলো ভাবিয়ে তুলে শিল্পী সৈয়দ ফিদা হোসেন ও সুলতান ইশতিয়াককে। চিত্রকলার ভুবনে শুরু হয় তাদের এক নতুন অভিযাত্রা।

এই যাত্রার শুরু যদিও প্রথমে শিল্পীর অন্তকরণে, ক্রমে এ যাত্রা জুটিয়ে ফেলে তার একান্ত নিজস্ব একটি স্বর এবং উপস্থিত করে নিত্য ঘটনাবলী এক সম্মোহনকারী গল্প।

ক্যানভাসে এমন সব গল্পের খোঁজ মিলবে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো লা গ্যালারির ‘অবসেশন’ শিরোনামের এক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে।

দুই শিল্পীর আঁকা ২৩টি চিত্রকর্ম নিয়ে সাজানো এই প্রদর্শনীটি শুরু হয় শুক্রবার বিকালে। চারুকলার অধ্যাপক জামাল আহমেদ এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। অতিথি হিসেবে এসেছিলেন অ্যাডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টারের পরিচালক এম কে আরিফ।

ফিদা ও ইশতিয়াকের ক্যানভাসে উঠে এসেছে মানবমুক্তির চির আকাঙ্ক্ষা আর আকুতির ডাক।

ক্লান্তিকর এই যান্ত্রিক জীবনে বন্দি, ফলত এক অমোঘ দম-বন্ধ-করা অনুভূতিকে অনাবৃত করে তাদের এই শিল্প অভিযাত্রা।

সুলতান ইশতিয়াকের বিশ্বাস, “ভেতরের যে সত্তা এই অভিযাত্রিককে সংজ্ঞায়িত করে, সেই সত্তা কোনো দম আটকানো অনুভূতির শিকার হতে চায়না বরং অবধারিতভাবেই চায় প্রকৃতিতে নিমগ্ন হতে, চায় মানসিক অবসাদের এই শেকল হতে অবমুক্তি।”

ফিদা হোসেন বিষয়বস্তুর নাজুক ভঙ্গুরতাকে শৈল্পিক বাস্তবতায় তুলে ধরেছেন। তার লক্ষ্য ছিল না চলমান বাস্তবতাকে তুলে ধরা। একেবারে নতুন এক ধারায় তিনি বিষয়বস্তুর পাশাপাশি অনুসঙ্গ হিসেবে নিয়েছেন চতুর্পাশের পরিবেশ ও প্রতিবেশকেও।

ইশতিয়াকের ক্যানভাসের বৈশিষ্ট্য তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনিন্দ্য বৈভব। প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রামরত মানুষ আর তাদের স্বপ্নের কথা তিনি তুলে এনেছেন রংতুলির ছোঁয়ায়।

আগামী ৩০ অগাস্ট পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনীটি।

সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্রবার ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ।

‘সম্প্রীতির শিল্পযাত্রা’

জাতীয় শোক দিবস পালনের অংশ হিসেবে সম্প্রীতি নাট্যোৎসব পর্ষদ ও শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় শুক্রবার শুরু হয়েছে  ‘ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়া সম্প্রীতির শিল্পযাত্রা’।

সম্প্রীতির শিল্পযাত্রার উদ্বোধন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান। অতিথি হিসেবে এসেছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী জানান, জাতির জনকের চেতনা ও প্রেরণায় নতুন শক্তি ও সাহসের শপথ নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধে সকলকে সচেতন করা ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে এ সম্প্রীতির শিল্পযাত্রা।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের জাগরণী কোরিওগ্রাফি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এ শিল্পযাত্রা শুরু হয়। নাট্যজন কামাল বায়েজিদের নেতৃত্বে সারা দেশের শতাধিক সংস্কৃতিকর্মী এ শিল্পযাত্রায় অংশ নিচ্ছে। পথ বিরতিতে মাওয়া ফেরীঘাটে, কাওরাকান্দি ফেরীঘাটে, গোপালগঞ্জ শহরে এবং জাতির জনকের সমাধিস্থলে পরিবেশিত হবে জাগরণী কোরিওগ্রাফি।