বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া শিশুটিকে পেলেন আসকের সেলিনা

জর্ডান ফেরত এক নারীর বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া আট মাসের শিশু সন্তান ফাতেমার অভিভাবকত্ব পেলেন আইন ও শালিস কেন্দ্রের আইনজীবী সেলিনা আক্তার।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2017, 02:46 PM
Updated : 16 August 2017, 02:59 PM

এই শিশুকে পেতে আদালতে আবেদন করেছিলেন আরও আট দম্পতি। সবার বক্তব্য শুনে বুধবার ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান বিষয়টির সিদ্ধান্ত টানেন।

আদালতের আদেশের পর খুশিতে আপ্লুত সেলিনা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ওর কোমল মুখ থেকে মা ডাক শুনতে চাই। তারপর বড় হয়ে মা-বাবার বিষয়ে ওর সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব।”

ঢাকার শান্তিনগরের ৩১ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা সেলিনার স্বামী মো. আলমগীর পেশায় ব্যবসায়ী। এই দম্পতিকে শিশুটির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য তার নামে পাঁচ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) কেনার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

বর্তমানে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আশ্রিত শিশুটিকে আগামী ২২ অগাস্ট সেলিনা-আলমগীর দম্পতির কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ৮ জুলাই জর্ডান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরা জয়দেবপুরের স্বপ্না বেগম এই শিশুটিকে পুলিশের কাছে নিয়ে যান।

সে সময় তিনি বলেন, ওই শিশুর মা তার সঙ্গে একই ফ্লাইটে ঢাকা আসেন। ওই নারীও তার মতো গৃহকর্মী হিসেবে জর্ডানে গিয়েছিলেন বলে আলাপচারিতায় জানতে পারেন।

ঢাকা বিমানবন্দরে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মালপত্র নিয়ে বেরিয়ে বিমানবন্দরের ক্যানওপি পার্কিং এলাকায় স্বজনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন স্বপ্না। এ সময় ওই নারী শিশুটিকে তার হাতে দিয়ে বলেন, “আপা আমার শিশুটাকে একটু ধরেন। ভেতরে মালপত্র রয়েছে, নিয়ে আসছি।”

এরপর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও শিশুটির মা না আসায় স্বপ্না আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যদের কাছে যান। তারা শিশুসহ স্বপ্নাকে বিমানবন্দর থানায় পাঠান। ওইদিনই বিমানবন্দর থানায় একটি জিডি হওয়ার পর শিশুটিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়। পরে সেখানে শিশুটির নাম দেওয়া হয় ফাতেমা।

এরপর ২৫ জুলাই শিশু আদালতের বিচারক হাফিজুর রহমান শিশুটির প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। ৯ অগাস্টের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেওয়ার দিন রেখে প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে না পাওয়া গেলে শিশুটিকে নিতে আগ্রহী কোনো দম্পতিকে বাছাই করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়।

ওই দিন নয় দম্পতি শিশুটিকে নিতে আদালতে আবেদন করেন। পরে শিশুটির বাবা-মাকে খুঁজে না পাওয়ার কথা আদালতকে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক আবু সাঈদ।

আবেদনকারীদের মধ্যে সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, আইনজীবী ও বিমানের কর্মকর্তা ছিলেন।

এদের মধ্যে আট দম্পতিই ছিলেন নিঃসস্তান। এক দম্পতির তিনটি ছেলে থাকায় মেয়ে পেতে তারা শিশুটির জন্য আবেদন করেন।

এই আদালতের সহকারী পিপি শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, আবেদনকারীদের মধ্যে বাংলাদেশ বিমানের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে থেকেছেন এমন এক দম্পতি, একজন সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দম্পতিসহ আরও পেশাজীবী ছিলেন।

তাদের মধ্যে অনেকে বিপুল অঙ্কের টাকা, বাড়ি ও অন্যান্য সম্পত্তি ওই শিশুর নামে লিখে দিতে চেয়েছিলেন।

“সেলিনা যেহেতু আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী, তিনি শিশুদের নিয়ে কাজও করেন। তার আয় ও ঢাকায় নিজস্ব সম্পত্তি ও বাড়ি রয়েছে। সে কারণে তার কাছেই এ শিশুর জিম্মা দেওয়া হয়েছে,” বলেন শাহাবুদ্দিন।

এখন তাদের কাছে ওই শিশুর অভিভাবকত্বের বিষয়টি বেশ কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে আদালতের আদেশে বলা হয়েছে।