ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে রায়ের স্থগিতাদেশ ফের বাড়ল

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ ফের বাড়িয়েছে আপিল বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2017, 06:07 AM
Updated : 16 August 2017, 06:07 AM

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের করা আবেদনে সাড়া দিয়ে বুধবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ স্থগিতাদেশ ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।

এ নিয়ে ষষ্ঠ দফায় রায় স্থগিতের সময় বাড়ানো হল। এর আগে গত ১ অগাস্ট অ্যাটর্নি জেনারেলের আবেদনে সময় বাড়িয়ে দিয়েছিল আপিল বিভাগ।

বুধবার মামলাটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এলে অ্যাটর্নি জেনারেল প্রস্তুতির কথা বলে আসন্ন অবকাশের পর পর্যন্ত রায় স্থগিতের সময় বাড়ানোর আবেদন করেন।

তিনটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ ও ২০১২ সালে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে গত ১১ মে ওই রায় দেয় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

২০০৯ সালের ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ১১টি ধারা-উপধারা অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাই কোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, এ আইন বিচার বিভাগের স্বাধীনতারও পরিপন্থি।

রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে বিষয়টি গত ২১ মে আদালতে ওঠে। অ্যাটর্নি জেনারেল ওইদিন শুনানি ছয় সপ্তাহ পেছানোর আবেদন করলে আপিল বিভাগ ২ জুলাই শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখে ওই সময় পর্যন্ত হাই কোর্টের রায় স্থগিত করে দেয়।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনে স্থগিতাদেশের মেয়াদ এনিয়ে ছয় দফা বাড়ানো হল।

আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এ মামলার সঙ্গে বুধবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আরেকটি আবেদনের শুনানি হয়।

শুনানি শেষে সম্পূরক খাদ্য হিসেবে (ফুড সাপ্লিমেন্ট) পরিচিত ‘স্পিরুলিনা’ মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা তা পরীক্ষার জন্য তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।

‘দেশান বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়া থেকে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৯৮০টি ‘স্পিরুলিনা’ আমদানি করে।

অনুমোদনহীন ওষুধ হিসেবে রাজধানীর ভাটারায় আমদানিকারক ওই প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় থেকে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি তা জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ভ্রাম্যমাণ আদালত ‘দেশান বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে রিট করলে গত বছরের ১৮মে হাই কোর্ট রুল দিয়ে জব্দ ‘স্পিরুলিনা’ ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় সরকারকে।  একইসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশও স্থগিত করে উচ্চ আদালত।

হাই কোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে গেলে ২৭ জুন হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত হয়।

জব্দ ওইসব ‘স্পিরুলিনা’র মেয়াদ এপ্রিলে শেষ হয়ে যাবে জানিয়ে সম্প্রতি তা অবমুক্তির আবেদন করে ‘দেশান বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা রিচালক ফয়সাল বিন ইলিয়াস।

এ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জামান আক্তার বুলবুল।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আগামী এপ্রিলে ‘স্পিরুলিনা’র মেয়াদ শেষ হবে। তাই সেগুলোর অবমুক্তি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল।

“সর্বোচ্চ আদালত জব্দকৃত ‘স্পিরুলিনা’ ওষুধ না সম্পূরক খাদ্য তা পরীক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন’ বিভাগের একজন অধ্যাপকের নেতৃত্বে একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ‘ফার্মাকোলজি’ বিভাগের একজন অধ্যাপককে নিয়ে একটি কমিটি করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে।” 

আগামী ১০ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানি হবে বলেও জানান এই আইনজীবী।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে ভ্রাম্যমাণ আদালত অধ্যাদেশ জারি করে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর জাতীয় সংসদে পাস করে তা আইনে পরিণত করে। এরপর থেকে এটি ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন নামে পরিচিত।

এ আইনের ৫ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আইনের ৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯ ও ১০ ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পদ্ধতি, ১১ ধারায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা ও ১৩ ধারায় আপিল সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। আর ১৫ ধারায় তফসিল সংশোধনে সরকারের ক্ষমতার বিধান রয়েছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা বাতিল করে দেওয়া হাই কোর্টের রায়ের সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছিল, “ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের এসব ধারা মাসদার হোসেন মামলার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একইসঙ্গে সংবিধানের মৌলিক দুটি স্তম্ভ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির পরিপন্থি। তাই এ ধারাগুলোকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হল।”