তাজরিনে প্রাণহানি: সাক্ষীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন

পাঁচ বছর আগে সাভারের আশুলিয়ায় তাজরিন ফ্যাশনসে আগুনে শতাধিক পোশাক কর্মীর প্রাণহানির মামলায় সাক্ষী আনতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ।

প্রকাশ বিশ্বাসপ্রকাশ বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2017, 07:05 PM
Updated : 13 August 2017, 07:07 PM

বিচার শুরুর দুই বছরে শতাধিক সাক্ষীর মধ্যে মাত্র সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন নিহতদের এক সহকর্মী।

ঢাকার প্রথম  অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস এম সাইফুল ইসলামের এ মামলার শুনানি চলছে।

রোববার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন থাকলেও তা হয়নি।রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী শাহানাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আদালত এলাকায় পাওয়া যায়নি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে তার মোবাইলে বিকাল পৌনে ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ৬ বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে এসএমএস পাঠিয়েও তার কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত ২ এপ্রিল  সাক্ষী আনতে না পারায় রাষ্ট্রপক্ষের ওই আইনজীবীকে ভর্ৎসনা করেছিলেন বিচারক।

তাজরীন ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন, ফাইল ছবি

এ বিষয়ে জানতে চাইলে  ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি খন্দকার আব্দুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকের সাক্ষীর বিষয়ে আমাকে জানানোই হয়নি।এসব স্পর্শকাতর মামলার  প্রতিটি পদক্ষেপের খবর আমাকে জানানোর জন্য  সকল অতিরিক্ত পিপি ও সহকারী  পিপিকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারপরেও আমার কথা মানা হচ্ছে না।”

সোমবার এই মামলার নথি দেখার পাশাপাশি অতিরিক্ত পিপির সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

পোশাক শ্রমিকদের পক্ষে আদালতে এ মামলার দেখভালের দায়িত্বে থাকা গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের পক্ষ নিয়ে বিচার প্রলম্বিত করে লোকজনের মন থেকে ওই ঘটনাকে ভুলিয়ে দেওয়ার  অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।”

আগামী ৮ অক্টোবর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রেখেছেন বিচারক।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশনসে আগুন লেগে ১১১ জন শ্রমিক নিহত হন। দগ্ধ ও আহত হন আরও শতাধিক শ্রমিক।

শ্রমিকদের বের হতে না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে তাজরিন ফ্যাশনসের মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী মাহমুদাসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়।

তদন্ত করে ১৩ মাস পর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির পরিদর্শক এ কে এম মহসীন উজ জামান খান।

অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ৩০৪ (ক) ধারা অনুযায়ী ‘অপরাধজনক নরহত্যা’ ও ‘অবহেলার কারণে মৃত্যুর’ অভিযোগ আনা হয়।

এতে বলা হয়, ভবনের নকশায় ত্রুটি ও জরুরি নির্গমনের পথ না থাকায় এবং আগুন লাগার পর শ্রমিকরা বাইরে বেরোতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মীরা আগ্নিকাণ্ডকে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া বলে শ্রমিকদের কাজে ফেরত পাঠিয়ে কলাপসিবল গেইট লাগিয়ে দেন।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল।

২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারক। এরপর শুনানি বিভিন্ন তারিখে সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হয় রাষ্ট্রপক্ষ।