নতুন ভোটার: পুরুষের চেয়ে নারী বেশি

দশ বছরে প্রথমবারের মতো ভোটার তালিকা হালনাগাদে পুরুষের চেয়ে নারীদের কাছ থেকে আবেদন বেশি পেয়েছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2017, 03:23 AM
Updated : 13 August 2017, 10:58 AM

গত সপ্তাহে শেষ হওয়া এবারের হালনাগাদে নিবন্ধিতদের মধ্যে নারী সংখ্যা ৭৭ হাজার ৩৯৩ বেশি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সহকারী সচিব মো. মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায় থেকে কমিশনে যে তথ্য এসেছে, তাতে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১২ লাখ ৬১ হাজার ৮৩৫ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ২২৮ জন।

তবে এই সংখ্যায় ‘কিছুটা পরিবর্তন’ হতে পারে জানিয়ে মোশাররফ বলেন, “কারণ তিন ধাপে এসব নাগরিকদের নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। এরপরই সঠিক সংখ্যাটা জানা যাবে।”

সর্বশেষ হালনাগাদে নারী ভোটার সংখ্যা এগিয়ে থাকলেও মোট ভোটারের সংখ্যায় পুরুষের সঙ্গে বড় ব্যবধান কমাতে পারেনি জনসংখ্যার অনুপাতেও পিছিয়ে থাকা নারীরা।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ পুরুষ আর ৮ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার নারী।

বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৪৭৫, যার মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪৬৮ জন ও নারী ৫ কোটি ২ লাখ ৯৮ হাজার ৭ জন।

সে হিসাবে পুরুষ ভোটার বেশি ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৪৬১।

তবে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা চালুর পর হালনাগাদে এতো সংখ্যক নারী ভোটারের তথ্য সংগ্রহ আর হয়নি।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, ২০০৮ সালের প্রথম তালিকায় ৮ কোটি ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৪৮ ভোটারের মধ্যে নারী ৪ কোটি ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৭০৭ জন। এ সময় পুরুষ ভোটার ছিল ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭৪১ জন।

এরপর নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি ও মৃতদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে এ পর্যন্ত সাত বার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি হালনাগাদে নতুন ভোটারদের সংখ্যায় নারীরা পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে ছিল।

২০১৮ সালের ১ জানুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হবে ২৫ জুলাই থেকে ৯ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের তথ্য সংগ্রহ করেছে নির্বাচন কমিশন।

ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, “এ বছর নারী ভোটারদের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। নারী-পুরুষের ভোটার ব্যবধানও কমে আসবে এতে।”

জমা পড়া আবেদনে দেখা যায়, এবার পুরুষের চেয়ে পৌনে একলাখেরও বেশি নারী ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

হালনাগাদের নতুনদের যোগ করে ও মৃতদের বাদ দিয়ে আগামী জানুয়ারিতে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বলেন, বরাবরই হালনাগাদে নারী ভোটারদের অসচেতনতা ও অনীহা নিয়ে উদ্বেগ ছিল নির্বাচন কমিশনসহ সর্বত্র। ২০১৪ সালের পর নারী ভোটার বাড়াতে গণমাধ্যমের ব্যাপক ভূমিকার পাশাপাশি তিনটি কারণেই এবার ফল মিলেছে।

“গণমাধ্যমে বেশ লেখালেখি- আলোচনা, মাঠ কর্মকর্তাদের ইসির বিশেষ নির্দেশনা ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগে সাময়িকভাবে নারী ভোটারদের ব্যাপক সাড়া মিলেছে এবার। এখন ভোটার সংখ্যায় নারী এগিয়ে থাকলেও একীভূত মোট ভোটারের পিছিয়ে রয়েছে তারা।”

এ হার ধরে রাখতে আগামীতে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়ে শুরুর দিনটাকে ‘ভোটার দিবস’ হিসাবে ঘোষণার দাবি জানান তিনি।

আলীম বলেন, “কখনো বাড়ি বাড়ি, কখনো উপজেলা অফিসে গিয়ে হালনাগাদের কাজ করা হয়েছে। এতে করে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহে সমন্বয়হীনতাও তৈরি হয়।

“ভোটারদের সচেতন করতে কার্যকরীভাবেই প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি হাতে রাখতে হবে।”

তবে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সর্বশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, “মোটামুটি টার্গেট যেটা আশা করেছিলাম, তার চেয়ে বেশি অর্জন করেছি আমরা। যতটুকু আমরা পেয়েছি আমরা সন্তুষ্ট। কেউ যদি আমাদের বলে, এখানে কোনো তথ্য সংগ্রহ করার জন্য কেউ আসে নাই তার বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশন নেব।”

“সারা বছরই ভোটার হওয়া যাবে। নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করলে তাদের ভোটার করা হবে। সব সময় তারা এ ভোটার হতে পারবেন।”

এবার ১৩ লাখ ৩৩ হাজারেরও বেশি মৃত ভোটার বাদ যাবে তালিকা থেকে; যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এটাকেও বড় অর্জন মনে করা হচ্ছে।

স্মার্টকার্ড বিতরণের এমন সময়ে মৃত ভোটার চিহ্নিত করতে নানা উদ্যোগও নেয় ইসি।