ঘুষ: বরখাস্ত প্রকৌশলীর পক্ষে তখন ছিলেন নৌমন্ত্রী

‘ঘুষের টাকাসহ’ গ্রেপ্তার নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এক বছর আগেই সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করলেও তা আমলে নেয়নি মন্ত্রণালয়।

সাজিদুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2017, 03:09 PM
Updated : 10 August 2017, 03:28 PM

ওই সময় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান তার পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন বলে এই মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একটি বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য শাজাহান খানের মোবাইলে কয়েকবার ফোন করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

গত ১৭ জুলাই মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএ ভবনে নিজের কার্যালয়ে বসে একটি জাহাজের নকশা অনুমোদনের জন্য পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার সময় ফখরুলকে আটক করে দুদক। পরে গত ২ অগাস্ট তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ফখরুল আটক হওয়ার পর ২০ জুলাই সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী বৃহস্পতিবার কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে আসা ওই কার্যবিবরণীর অনুলিপি থেকে জানা যায়, বৈঠকে কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম ২০১৬ সালের অগাস্ট মাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বরাত দিয়ে বলেন, ফখরুলের বিরুদ্ধে সেই সময় অনিয়মের অভিযোগ আসে। ফখরুলকে সেই সময় বরখাস্তের সুপারিশও করা হয়। কিন্তু সেটি মন্ত্রণালয় আমলে নেয়নি।

নৌমন্ত্রী শাজাহান খান (ফাইল ছবি)

২০১৬ সালের ওই বৈঠকে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, “প্রায় ১০ হাজার জাহাজ সার্ভে করার জন্য মাত্র চারজন সার্ভেয়ার রয়েছে। এখান থেকে যদি আবার তাকে বরখাস্ত করা হয় তাহলে সার্ভে কার্যক্রম কে পরিচালনা করবে?”

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গতমাসের বৈঠকে সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, “সেদিন সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যদি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হত, তাহলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সুনাম এভাবে ক্ষুণ্ন হত না।”

ফখরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর দুদকের পক্ষে যে মামলা করা হয়েছে তাতে বলা হয়, নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ফখরুল ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বেঙ্গল মেরিন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ২২টি জাহাজের নকশা অনুমোদনের জন্য বিভিন্ন সময় জাহাজের আকার ভেদে পাঁচ থেকে ১৬ লাখ টাকা করে ঘুষ দাবি করেন।

সর্বশেষ ‘এমভি নওফেল লিহান’ নামের একটি জাহাজের নকশা অনুমোদনের জন্য গত বছরের ১৩ এপ্রিল আবেদন করে বেঙ্গল মেরিন। এর জন্য ফখরুল ওই কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএনএম বদরুল আলমের কাছে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।

বদরুল বিষয়টি দুদককে জানালে ১৭ জুলাই ঘুষ লেনদেনের সময় ফখরুলকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

ফখরুলের পক্ষে নৌমন্ত্রীর সাফাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। যা বলার বৈঠকে বলেছিলাম। আজকের বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।”

জুলাই মাসের ওই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বেশ উত্তপ্ত হয় বলে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই সময় কমিটির প্রায় সব সদস্যই সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আগের দুর্নীতির অভিযোগ আমলে না নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করে।”

রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে কমিটির সদস্য নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, তালুকদার আব্দুল খালেক, মো. আব্দুল হাই, মো. হাবিবর রহমান, এম আব্দুল লতিফ, রনজিৎ কুমার রায়, মো. আনোযারুল আজীম (আনার) ও মমতাজ বেগম অংশ নেন।