বুধবার এক শুনানিতে ক্ষোভ প্রকাশের পর আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে তদন্ত কমিটি বা কমিশন গঠন করে হাই কোর্টে এই বিষয়ক প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়, যারা সংবাদপত্রের প্রতিবেদন দেখে গত ১৫ ফেব্রুয়ারিতে এই বিষয়ক রুল দিয়েছিল।
যেসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এই রুল আদালত দিয়েছিল, তার মধ্যে একটির শিরোনাম ছিল-‘ইউনূসের বিচার দাবি’।
পদ্মায় বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আটকাতে নোবেলজয়ী প্রথম বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনূসের ‘ষড়যন্ত্র’ ছিল বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে আসছেন। তবে ইউনূস সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছেন।
তখন বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ‘সুর মেলানোর’ জন্য দুটি দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সমালোচনাও করে আসছেন শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের কথা থাকলেও সংস্থাটি দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুললে তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সরকার বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়েই কাজটি শুরু করে।
এই প্রকল্পে কানাডীয় একটি কোম্পানিকে পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে সেদেশে একটি মামলা হয়েছিল, যা রায়ে নাকচ হয়ে যায়। তার আগে একই অভিযোগে বাংলাদেশে দুদক মামলা করলেও তদন্ত শেষে অভিযোগের কোনো প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানিয়েছিল।
কানাডার আদালতের রায়ের পরপরই হাই কোর্ট ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে রুল দেয়, বুধবার যার শুনানির দিন ছিল।
তদন্ত কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপক্ষ আবার সময়ের আবেদন করলে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, সেই ১৫ ফেব্রুয়ারি আদেশ হয়েছে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেও হয়নি। এখনও চিঠি চালাচালি শেষ হয়নি।
বিচারক বলেন, “লেজিসলেটিং উইংকে মে মাসে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এরপরও তাদেরকে দুই বার রিমাইন্ডার দিতে হল কেন? উনারা কী করেন, আমরা জানি না। আমরা যে আদেশ দিয়েছি সেটার বাস্তবায়ন চাই। ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হল। এর মধ্যে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেন।”
রুলে বলা হয়েছিল, প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে ‘ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৬৫ (৩ ধারা)’ অনুসারে তদন্ত কমিটি বা কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং দোষীদের কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না?
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, আইন ও সড়ক পরিবহন সচিব এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
পাশাপাশি কমিটি বা কমিশন গঠনের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে ৩০ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
পরে ২০ মার্চ রুলের জবাব ও প্রতিবেদন দিতে আট সপ্তাহের সময় চায় রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনে ৯ মে পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয় হাই কোর্ট। পরে আরও কয়েক দফা সময় নেয় রাষ্ট্রপক্ষ।