বিচারকদের চাকরি বিধিমালার গেজেট আগামী সপ্তাহে: আইনমন্ত্রী

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট আগামী সপ্তাহের মধ্যে হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2017, 03:00 PM
Updated : 16 July 2017, 03:00 PM

সোমবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা একান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।

পাশাপাশি উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।”

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করতে গত ২ জুলাই সরকারকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে আপিল বিভাগ বলেছিল, এটাই ‘শেষ সুযোগ’।

আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা ওই গেজেট প্রকাশ করে এদিন আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশনা থাকলেও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আবারও সময়ের আবেদন করেন।

শুনানির পর দুই সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এটা শেষ সুযোগ।”

পরদিনই বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ১৫ জুলাইয়ের আগেই গেজেট হয়ে যাবে।

আপিল বিভাগের দেওয়া দুই সপ্তাহ সময় অনুযায়ী আপিল বিভাগের রোববারের কার্যতালিকার প্রথমেই ছিল মামলাটি।

কিন্তু সকালে আপিল বিভাগ বসার পর কার্যতালিকা উপস্থাপন করা হলে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ‘নট টুডে’ আদেশ দেন।

বেলা ৩টার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টে এসে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একান্তে বৈঠকে বসেন।

প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠকের পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা গেজেটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আগামী সপ্তাহ নাগাদ ইনশাল্লাহ সম্পন্ন হবে।”

মন্ত্রণালয় যে খসড়া দিয়েছিল সেটা, না কি সুপ্রিম কোর্ট যে খসড়া করে দিয়েছিল সেটা- কোনটি হবে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, “আমরা সব ধরণের আলাপ-আলোচনা করছি, যেটা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যেটা গ্রহণযোগ্য হবে সেটাই হবে।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “আলোচনা চলছে। রুল বাই রুল আলোচনা করছি। সবগুলোর আলোচনা এখনও শেষ হয় নাই। আগামী বৃহস্পতিবার ৩টার সময় আবার বসব।”

কবে নাগাদ তা চূড়ান্ত হতে পারে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, “আমার মনে হয় বৃহস্পতিবার নাগাদ সম্পন্ন হয়ে যাবে।”

ঘটনাক্রম

মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়।

ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গত ২৮ আগাস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ।

এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।

এরপর দফায় দফায় সময় দেওয়া হলেও সরকার মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ওই বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ না করায় গত ৮ ডিসেম্বর দুই সচিবকে তলব করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

দুই সচিবের হাজিরার আগে ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি নোটিসে বলা হয়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রাষ্ট্রপতি ‘সিদ্ধান্ত’ দিয়েছেন।

আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক পরদিন আদালতের তলবে হাজির হলে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিধিমালা নিয়ে “রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হয়েছে।”

সেদিন শুনানি করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয় আপিল বিভাগ।

এরপর আরও ১১ দফায় সাড়ে সাত মাস সময় পেয়েছে সরকার।