আলোকচিত্রে পাহাড়ের গল্প

সবুজ পাহাড় থেকে নেমে আসা উচ্ছ্বল স্রোতস্বিনী, তার দুই পাশে পাহাড়ি উপত্যকায় গড়ে উঠেছে নানা জনপদ। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই চলে প্রতিনিয়ত, তাতে কখনও বিজয়ী মানুষ, কখনও বা পাহাড়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2017, 02:41 PM
Updated : 16 July 2017, 02:41 PM

জীবনযুদ্ধের এই খেলাকেই ফ্রেমবন্দি করেছেন ৪৪ তরুণ আলোকচিত্রী। তাদের সেসব ছবি নিয়ে ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারিতে চলছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম, মানুষ ও প্রকৃতি’।

রোববার বিকালে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।

ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষযয়ক মন্ত্রণালয় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর উদযাপন উপলক্ষে তিন দিনের এ প্রদর্শনীর আয়োজন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “আমাদের পাহাড়ি জনপদ, তাদের সংস্কৃতি প্রথা রীতি আমাদের হাজার বছরের আবহমান সংস্কৃতিকে করেছে বৈচিত্র্যময়। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য একটি দেশের সম্পদ। সব দেশের তা নেই, আমাদের আছে। নানা ধর্ম, বর্ণ আরশ্রেণি-পেশারপাহাড়ি বাঙালিদের কাজকর্ম আচার অনুষ্ঠান খাদ্যাভ্যাস রীতি নীতির মিথষ্ক্রিয়ায় আমাদের ঐতিহ্যবাহী এ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।”

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষা ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য পাহাড়ী জেলাগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন করা হয়েছে। দেশে বিদেশে তাদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রদর্শনীর সমন্বয়ক মৃধা শিহাব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকেজানান, ফেইসবুকে ছবি আহ্বান করা হয়েছিল। সেখানে প্রায় ৯০০ ছবি জমা পড়ে। সেখান থেকে ৪৪ জনের ৫০টি ছবি স্থান পেয়েছে এ প্রদর্শনীতে। আর গত এক বছরে পার্বত্য চ্ট্গ্রামে সরকার যত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে সেসব অনুষ্ঠানের ৫০টি ছবি স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

প্রদর্শনীতে ঢুকতেই নজরে পড়বে আলোকচিত্রীদের বেশকটি ল্যান্ডস্কেপ ফটো, যাতে উঠে এসেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের নদী সাঙ্গু, মাতামুহুরীর গল্প। বার্ডস আই ভিউতে আলোকচিত্রীদের ফ্রেমে ধরা পড়েছে পাহাড়ি উপত্যকায় সূর্যদয়, নদীপাড়ের জীবনযাত্রা, গিরিপথে হেঁটে চলা নারী, আর পাহাড়ি নদীতে ভেসে আসা বাঁশের চাই।

শামস আল আরেফিনের ‘এ সাম্পান বিটইউন টু হিলস’, জাহেদুল আলম চৌধুরীর সিরিজ ছবি ‘নেচার’, রায়হান জাহানের ‘হেভেনস রুট’, মোহাম্মদ সাহানের ‘রাঙামাটি লেক’ছবিগুলোতে উঠে আসে সেসব গল্পই। আলোকচিত্রীদের ফ্রেমে উঠে আসে নাফাকুং ফলস, চাইনিজ প্যাঙ্গুলিন, বান্দরবানের স্বর্ণ মন্দির।

আলোকচিত্রীদের ফ্রেমে উঠে আসে পাহাড়ি নারীর জীবন সংগ্রামের কথা। মনিরুজ্জামানের ফ্রেমে উঠে আসে পাহাড়ি নারীর ‘ক্লদ মেকিং’, নিহাদ আদনানের ‘গার্ল পাওয়ার’ আর মং চেনের ‘সুগারক্যান ফিল্ড’- ছবিগুলোতে নারীদের গল্প।

প্রাণেশ চাকমার ‘রিলিজিয়াস ফেস্টিভাল অফ খাগড়াছড়ি’, মনিরুজ্জামানের ‘ডেইলি লাইফ’ ছাড়াও ‘গোরাই ড্যান্স’, ‘রেসপেক্ট’ ছবিগুলোতে উঠে আসে পাহাড়িদের ধর্মবিশ্বাস আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা।

তিন দিনের এ প্রদর্শনী শেষ হবে মঙ্গলবার।বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে দৃক গ্যালারির দুয়ার।