বন্যার ভয় থাকলেও খাদ্য মজুদ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

দেশে আরেকটি বন্যার ‘পদধ্বনি’ শোনা যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এজন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুদ রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2017, 09:48 AM
Updated : 16 July 2017, 02:43 PM

রোববার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ১৪২১ ও ১৪২২ বঙ্গাব্দের ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আরেকটা বন্যার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। আমাদের ভৌগলিক অবস্থানটা এমন জায়গায়, প্রতিনিয়তই এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে বাঁচতে হয়।”

টানা দুই সপ্তাহের ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে ইতোমধ্যে দেশের ১৩ জেলার অন্তত ৫২ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৭ লাখ মানুষ।

সারাদেশে সরকারি, বেসরকারি, মিল মালিক, কৃষক পর্যায় মিলিয়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও সঙ্কট এড়াতে খাদ্য আমদানি করা হচ্ছে।

“আমরা অতিরিক্ত খাদ্য আমদানি করে মজুদ ঠিক রাখছি যাতে আমাদের দেশের মানুষ কোনোমতেই কষ্ট না পায়। বিভিন্ন দেশ থেকে আমরা নগদ টাকায় খাদ্য নিয়ে আসছি। পাশাপাশি খাদ্য আমদানির ওপর যে কর ছিল সেটাও কমিয়ে এনেছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে খাদ্য উদ্ধৃত্ত ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে যখন তার দল আবার ক্ষমতায় আসে তখন দেশে খাদ্যের ঘাটতি ছিল।

২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে খাদ্য উৎপাদন না বাড়াকে এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ১৪২১ ও ১৪২২ বঙ্গাব্দের ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ বিতরণ অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ীদের পদক পরিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে যেখানে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ২ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন ছিল, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩ কোটি ৮৮ লাখ মেট্রিক টন হয়। আর এবছর খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ৪ কোটি মেট্রিক টনের কাছাকাছি।

শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার সার, বীজ, কৃষি উপকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে নতুন নতুন জাতের ফসল উদ্ভাবন এবং দুই ফসলি জমিকে চার ফসলিতে উন্নীত করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

দেশে দুধ, মাছ, মাংস ও ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মাটি এত উর্বর যে, কোনো একটা কিছুর উদ্যোগ নিলেই কিন্তু সেটা উৎপাদন করতে পারি।… স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফল, আঙুর, মাশরুম থেকে শুরু করে বিভিন্ন কিছু আমরা উৎপাদন করছি।”  

মাঠ পর্যায়ের কৃষিকাজ নিয়ে ছেলে-মেয়েদের সম্মক ধারণা দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “ধান কাটা বা ধান লাগানোর মওসুমে আবশ্যই শিক্ষার্থীদের গ্রামে সেই ধানক্ষেতের পাশে নিয়ে যাওয়া উচিত... ছোটবেলা থেকেই তাদের বোঝানো উচিত এই বাংলাদেশটা কীভাবে চলছে, খাদ্য কীভাবে আসছে।”

কৃষিখাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবার ১০টি শ্রেণিতে পাঁচটি স্বর্ণ, নয়টি রৌপ্য এবং ১৮টি ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে।

পুরস্কার বিজয়ীরা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক, নগদ অর্থের চেক ও সনদ গ্রহণ করেন।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অথিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মইনুদ্দিন আব্দুল্লাহ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এবং পুরস্কার বিতরণী পর্বের সঞ্চালনা করেন।