লন্ডন গেলেন খালেদা

যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2017, 02:28 PM
Updated : 15 July 2017, 03:09 PM

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের পথে যাত্রা করেন তিনি।

চিকিৎসার জন্য এই সফর বলা হলেও তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বেশ আগ্রহ রয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, তার নেত্রী চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন।

লন্ডনে তারেক রহমান আছেন, যিনি বিএনপিতে মায়ের পরের পদটিতে রয়েছেন। দেশে হুলিয়া নিয়ে যুক্তরাজ্যে থাকা ছেলের সঙ্গে প্রবাসেই খালেদা জিয়া মিলিত হচ্ছেন গত এক দশক ধরে। 

এই সফরেও খালেদা ছেলে তারেক রহমানের  বাসায় থাকবেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। সেখানে তারেকের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান ছাড়াও প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শামিলা রহমান সিঁথি, তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমানও রয়েছেন।

সফরে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে রয়েছেন একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমা আখতার।

তার সঙ্গে একই বিমানে লন্ডন গেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।

আগের দিন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা থেকে এবং ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ব্যাংকক থেকে লন্ডন গেছেন।

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা এবং আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার আগে খালেদার এই লন্ডন সফর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আগ্রহ রয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলে আসছেন, প্রবাসে থাকা জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেকের ইশারাই বিএনপি পরিচালিত হয়।

যাওয়ার আগে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া, সেখানে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়।

২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর যুক্তরাজ্যে খালেদার এটি তৃতীয় সফর। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া লন্ডন গিয়েছিলেন। সেবার তারেকসহ পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করেই দেড় মাস পর ফিরেছিলেন তিনি। সে সময়ও তারেক ও তার স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই সন্তান লন্ডনে ছিলেন।

এবার কোরবানির ঈদ হবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ঈদ করে এলে দেড় মাসের বেশি সময় দেশের বাইরে থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

খালেদা কবে নাগাদ ফিরবেন- সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা নির্ভর করবে তার চিকিৎসার উপর।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুবাইয়ে দুই ঘণ্টার যাত্রাবিরতির পর রোববার সকালে লন্ডন পৌঁছাবেন খালেদা জিয়া।

“ম্যাডামের চোখের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ঠিক হয়ে গেছে।”

রাত সোয়া ৭টায় ভিআইপি গেইট দিয়ে বিমানবন্দরে ঢোকেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।

খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা উপলক্ষে বিকাল থেকে বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদায় জানান।

ভিআইপি টার্মিনালের বাইরে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর নাসির, আবদুল মান্নান, আবদুস সালাম, শামসুজ্জামান দুদু, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, কবির মুরাদ, রুহুল কবির রিজভী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সানাউল্লাহ মিয়া, নাজিমউদ্দিন আলম, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, কাজী আবুল বাশার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ দলীয় প্রধানকে বিদায় জানান।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদায় জানাতে খিলক্ষেতের হোটেল লো মেরিডিয়ান থেকে বিমানবন্দরের প্রবেশ পথ পর্যন্ত কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অবস্থান নেন। নেতা-কর্মীদের ভিড় ডিঙিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বনানী থেকেই এগিয়ে নিতে নিরাপত্তা কর্মীদের প্রচণ্ড বেগ পেতে হয়।

নেতা-কর্মীদের সাথে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ইয়াসীন আলী, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, মুন্সী বজলুল বাসিত আনজু, আহসানউল্লাহ হাসান, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদারসহ বিভিন্ন সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা ছিলেন।

খালেদা দেশে ফিরেই ‘সহায়ক সরকারের রূপরেখা

বিএনপি নেত্রীকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে আসা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “নেত্রীর সফর নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, তিনি শুধু চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। তারপরও তিনি একটি বৃহৎ দলের সভানেত্রী, আমাদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে আছেন। তার বাসায় থাকবেন তিনি।

“দুই নেতার মধ্যে দেশের রাজনীতির ব্যাপারে, সংগঠনের ব্যাপারে আলোচনা হবে। এখানে আমরা প্রত্যাশা করছি, অতি শিগগিরই চিকিৎসা শেষ করে তিনি দেশে ফিরে আসবেন। দেশে ফিরে তিনি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন।”

কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “চিকিৎসা যতদিন প্রয়োজন হয়, এটা আমরা বলতে পারব না, আমাদের নেত্রীও বলতে পারবেন না। ডাক্তাররা সেটা বলবেন, সেই মোতাবেক নেত্রী দেশে ফিরবেন।”