‘সব শক্তি এক করে’ মশক নিধনে দক্ষিণের মেয়র

চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে সমালোচনার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মশক নিধনে নতুন কর্মসূচির উদ্বোধন করে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার আশা করছেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2017, 01:07 PM
Updated : 14 July 2017, 01:50 PM

শুক্রবার নগর ভবনে এই ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রামের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কম বলেও দাবি করেন মেয়র।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করে এতোদিন মশক নিধন কর্মসূচি চলছিল। নতুন কর্মসূচিতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব লোকবল ও যন্ত্রপাতি একসঙ্গে করে একবারে একটি অঞ্চল ধরে অভিযান চালানো হবে। ১৫৬টি ফগার মেশিন নিয়ে ২৯৬ জন কর্মী তাতে অংশ নেবেন।

প্রথম দিন শুক্রবার সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪ এর ১১ টি ওয়ার্ডে এই মশক নিধন কার্যক্রম শুরু হয়। ধারাবাহিকভাবে সবগুলো অঞ্চলেই এ অভিযান চালানো হবে।

এ কর্মসূচির আওতায় সকালে মশার লার্ভা নষ্ট করতে ডোবা ও নালাগুলোতে ওষুধ ছিটানো হবে। আর বিকালে উড়ন্ত মশা মারতে ব্যবহার করা হবে ফগার মেশিন। সেই সঙ্গে চলবে সচেতনতামূলক প্রচার।

মেয়র বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এ রোগকে মহামারী বলা যাবে না। আমার এলাকায় এ রোগের যে ব্যাপকতা রয়েছে তা আগামী ৩ থেকে ৪ চার সপ্তাহের মধ্যে ইনশাআল্লাহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব।”

চলতি বছর বর্ষা মওসুমের শুরু থেকে মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়া ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় সিটি করপোরেশনের সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও এ রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য সিটি করপোরেশনকে দায়ী করেছেন।    

তবে শুক্রবার দুপুরে গুলশানে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক দাবি করেন, ড্রেনের মশা চিকুনগুনিয়ার প্রধান কারণ নয়। ঘরে জন্ম নেওয়া এডিস মশার কারণে এ রোগ ছড়াচ্ছে। কিন্তু সে পর্যন্ত পৌঁছানো তো সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব না।

“আপনার ঘরের ভেতরে গিয়ে আমি মশারি টানাতে পারব না। আপনার চৌবাচ্চায় আমি ওষুধ লাগাতে পারব না। আপনার ঘরের ভেতর সামান্য স্বচ্ছ পানিতে যে মশা জন্মাচ্ছে, সেটা আমি মারতে পারব না।”

উত্তরের মেয়রের বক্তব্যের সূত্র ধরে দক্ষিণের মেয়রের কাছে একজন সাংবাদিক জানতে চান, বাসাবাড়িতে জন্ম নেওয়া মশা মারতে তারা কী করবেন?

জবাবে মেয়র খোকন বলেন, “কেউ যদি আমাদের ডেকে তার বাসার ভেতরে ওষুধ দিতে বলে, আমরা যাব।”

অবশ্য সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে এ কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব নয় জানিয়ে নাগরিকদের সহায়তাও তিনি চেয়েছেন।

চিকুনগুনিয়া নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “রোগ বালাই আসতেই পারে। আমাদের সবাইকে ধৈর্যের সঙ্গে, সাহসিকতার সঙ্গে তা মোকাবেলা করতে হবে।”

দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডোবানালা ‘কম বলে মশার উৎপাতও কম’ দাবি করে মেয়র বলেন, “আমাদের খিলগাঁও থানা এলাকার কিছু এলাকা ছাড়া বাকি এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে ডোবানালাও তেমন নেই। ফলে মশা জন্মানোর জায়গাও কম, রোগের প্রাদুর্ভাবও কম।”

তবে চিকুনগুনিয়া রোগটি বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে নতুন হওয়ায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে সমস্যা হয়েছে বলে স্বীকার করেন সাঈদ খোকন। 

“এ রোগের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মতো আমারও কোনো ধারণা ছিল না। শব্দটাই আমার কাছে অপরিচিত ছিল। যখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ এল, তখন খোঁজখবর নিলাম। চিকিৎসকদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানলাম।”

অন্যদের মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রধান প্রকৌশলী ফরাজি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মশক নিধন কার্যক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও সহায়তা দেবেন। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রচারপত্র বিলি করবেন তারা।