সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আদালতের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আইন প্রণেতারা।
Published : 09 Jul 2017, 10:58 PM
আপিল বিভাগের রায় নিয়ে রোববার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় ওই মামলায় এমিচি কিউরি এবং প্রধান বিচারপতিকে নিয়েও সমালোচনা করেন কয়েকজন সংসদ সদস্য।
বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী তিন বছর আগে এই সংসদই পাস করেছিল।
এরপর গত বছর হাই কোর্টের রায়ে ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সংসদ সদস্যরা। তখন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদকে আশ্বস্ত করেছিলেন, এই রায় টিকবে না।
গত ৩ জুলাই আপিলের রায়ে হাই কোর্টের রায়ই বহাল রাখে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।
ওই রায়ের পর সংসদ অধিবেশন বসার প্রথম দিন রোববার মাগরিবের নামাজের বিরতির পর আলোচনার সূত্রপাত ঘটান জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল।
আলোচনার মাঝপথে অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত হন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আড়াই ঘণ্টা ধরে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এ বিষয়ে পরবর্তীতে নির্ধারিত আলোচনার ইঙ্গিত দেন।
সংশোধনের ইতিবৃত্ত
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের সময় বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর আমলে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনের পর তা রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার আমলে বিচারক অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংবিধানে যোগ হয়েছিল। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ওই ক্ষমতা সংসদের হাতে ফেরাতে ষোড়শ সংশোধন এনে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংসদে পাস করে।
সংসদ সদস্য বাদল বলেন, “বিচার বিভাগ, সুপ্রিম কোর্টকে পরিষ্কারভাবে জবাব দিতে হবে ৯৬ ধারা যেটা বাতিল করেছে, যেটা অরিজিনাল সংবিধানে ছিল, সেটা কোথায় বেসিক স্ট্রাকচারকে ধাক্কা দিয়েছে?
“আমরা নির্ভরশীল জুডিশিয়ারি চাইনি। আপনি সংবিধানের কাস্টডিয়ান। এটা আমরা ডিনাই করি না। আপনি কি যে কোন আইন যেটা সংসদ তৈরি সেটা বাতিল করে দিতে পারবেন? আপনাকে সংবিধান কি সেটা দিয়েছে? বলেছে বেসিক স্ট্রাকচারকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে সেটা আপনি দেখতে পারেন। সংসদ বুঝতে চায় স্ট্রাকচার কী?”
বাদল বলেন, “আমি প্রশ্ন করতে চাই ৬৭ বছরের মেয়াদ (বিচারকদের চাকরির বয়স) কি এই সংসদ করেনি? সেখানে কি কোনো হস্তক্ষেপ আছে? এই সংসদ স্বাধীনভাবে খরচ করার জন্য অর্থ প্রদান করেনি? কিছুদিন আগে বেতন-ভাতা পাস করেনি? যতটুকু সম্ভব তা চূড়ান্ত করার চেষ্টা করেছে। বড় বড় কথা বললে হবে না। এমনভাবে করলেন সমস্ত বিচার ব্যবস্থাকে সংবিধানের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেন।
“আপনাদের রায় আছে জিয়াউর রহমানের আমল, তার ক্ষমতা দখল অবৈধ। তার হাতের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বৈধ হয়ে গেল? ন্যাচারাল জাস্টিস বলে একটা বিষয় আছে। আপনি নিজের বিচার করতে পারবেন? আপনি কি আল্লাহ হয়ে গেছেন?”
“জুতা মেরে গরু দান করে লাভ নেই। সংসদের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন? জনগণ সার্বভৌম। এই রায় জনগণের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, সেটা ইতিহাসের কাছে, ভবিতব্যের কাছে ছেড়ে দিলাম,” বলেন বাদল।
আদালতে পরিক্রমা
সংবিধানের ওই সংশোধনী নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী একটি রিট আবেদন করেন। ২০১৬ সালে হাই কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেওয়া রায়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হয়। তার বিরুদ্ধে আপিল হলে গত ৩ জুলাই হাই কোর্টের রায়ই বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় দেয় আপিল বিভাগ।
জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এই মামলায় এমিচি কিউরিদের সমালোচনা করে বলেন, “এই এমিকাস কিউরিরা সংবিধান প্রণয়নে ছিলেন। ড. কামাল অনেক রঙ পাল্টেছেন। ভোল পাল্টেছেন। তাকে সুপ্রিম কোর্ট ডাকে। তিনি কালো টাকাকে সাদা করেছেন। যখন সামরিক শাসন আসতে চায়, তাদের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়।”
সাবেক সামরিক শাসক এরশাদের দলের এই নেতা বলেন, “সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গণতন্ত্রের সাথে যায় না। জনগণ এই দেশের মালিক। আমার বিচার আমি করব, এটা হতে পারে? আমরা কোনোভাবেই স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করতে চাই না। আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
“বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত জনগণের বিপক্ষে যাবে, ৭২ এর সংবিধানের বিপক্ষে যাবে। তার বিরুদ্ধে কথা বলা আমাদের দায়িত্ব। রিভিউ করে জনগণ ও সংসদের প্রতি সম্মান দেখাবেন এটা আমরা প্রত্যাশা করি।”
বিচার বিভাগের উদ্দেশে বাবলু বলেন, “সংসদের সার্বভৌমত্ব নিয়ে খেলবেন না। রাজনীতি করবেন না। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। আল্লাহর কোনো জবাবদিহিতা নেই। আপনারা কি তার চেয়ে শক্তিশালী, যে জবাবদিহি করবেন না?”
এমিচি কিউরিরা
গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির শুনানিতে আপিল বিভাগ আদালতবন্ধু হিসেবে ১০ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন। তাদের মধ্যে কামাল হোসেনসহ নয়জনই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পক্ষে অর্থাৎ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেন। তারা হলেন টি এইচ খান, এ এফ এম হাসান আরিফ, এম আমীর উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী, এম আই ফারুকী ও আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া। অন্যদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের পক্ষে অবস্থান জানান শুধু আজমালুল হোসেন কিউসি।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, সেটা নিয়ে আমার বক্তব্য নেই। আমার প্রশ্ন এমিকাস কিউরি হিসেবে যারা বক্তব্য রেখেছেন, তারা অসত্য কথা বলেছেন। ভুল তথ্য জাতিকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।”
“ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা ভারতে যেটা আছে অনুসরণ করেছি। এখন ভারতে এটা নেই। তার মতো একজন লোক এই অসত্য কথা বলতে পারে? আমীর-উল ইসলাম অত্যন্ত আপত্তিকর কথা বলেছেন। সেটা বলতে চাই না। তারা সুবিধাবাদী। ৭২ এ সংবিধান করলেন একরকম। এখন অন্য কথা বললেন।
“আইয়ূব খানের পদ্ধতি এমিকাস কিউরিদের পছন্দ। এসব করতে গিয়ে অসত্য কথা বললেন। নীতিহীন ব্যক্তিরা সমাজে ধিকৃত হয়। সমস্ত ভুল তথ্য দিয়ে এমিকাস কিউরির দায়িত্ব পালন করেছে। আমি ব্যথিত।”
প্রবীণ রাজনীতিক তোফায়েল বলেন, “বিচারকদের সম্মান করি। কিন্তু যে মন্তব্য তারা সংসদ নিয়ে করেছেন, সেগুলো উচ্চারণ করতে চাই না। সংসদ নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। নিজেদের নামের আগে বিজ্ঞ আইনজীবী, সংবিধান প্রণেতা বলেন।
“পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেছে। সেটা যদি বাতিল হয়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কীভাবে হয়? যারা বক্তব্য রেখেছে সেখানে সবাই অসত্য কথা বলেছে। অত্যন্ত নিকৃষ্টমানের বক্তৃতা দিয়েছেন। যারা বাতিলের পক্ষে ওকালতি করেছে তাদের নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।”
বিচার বিভাগের কাজে নির্বাহী বিভাগ থেকে ব্যাঘাত সৃষ্টি করার প্রধান বিচারপতির নানা অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তার সমালোচনাও করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রধান বিচারপতি সিনহার দ্বারা গুরুতর অসদাচারণের কথাই আমার বলতে হয়। কয়েকমাস আগে প্রধান বিচারপতি সিনহার আদেশে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অবৈধভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত না করার জন্য হাস্যকর কারণ তুলে বলেছিলেন- অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দায়িত্ব পালনকালে অনেক কষ্ট করে মৃত্যুদণ্ডসহ অনেক বিচারের ব্যবস্থা তিনি করেছেন, রায় দিয়েছেন, তদন্ত যদি তার বিরুদ্ধে করা হয়, সে বিচারের বিষয়ও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
“এটি করার মাধ্যমে বিচারপতি সিনহা ন্যায় বিচারের প্রতিবন্ধকতা বা বাধা হিসেবে পরিচিত অপরাধ করেছেন, যা দণ্ডবিধির অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি সুপ্রিম কোর্টের নাম শুধু ব্যবহারই করেননি, তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্যাড ব্যবহার করেছেন, যদিও এটা ছিল তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।”
মতিয়া চৌধুরী বলেন, “সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কাছাকাছি পাকিস্তানে আছে। যে পাকিস্তানকে বাংলাদেশ গোরস্থানে পাঠিয়েছে সে পাকিস্তান হল প্রধান বিচারপতির আদর্শ। জনগণ কৈফিয়ত নেবেই নেবে। কেউ বিচারের উর্ধ্বে না।”
মতিয়া চৌধুরী নিজের দলের সাবেক নেতা কামাল হোসেন ও আমীর-উল ইসলামেরও কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “কামাল হোসেন কে? ৯ এপ্রিল পাকিস্তান আর্মিকে চিঠি লিখে পাকিস্তানে অবস্থান করেছেন। ১৫ ই অগাস্টের পর শেখ রেহানা অনুরোধ করেছিলেন। আপনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারা পৃথিবীকে আহ্বান জানান মোশতাক সরকারকে যাতে স্বীকৃতি না দেয়। কামাল হোসেন জবাব না দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। এই সেই কামাল হোসেন। তার মেয়ে জামাই ডেভিড বার্গম্যান। যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, তখন ডেভিড বার্গম্যান টুরিস্ট ভিসায় বছরের পর বছর থেকে নেতিবাচক খবর দিয়েছে। এখন অবশ্য দেশে নেই।
“আমীর-উল-ইসলাম কে? তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় জন স্টোনহাউজের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। কে এই জর্জ স্টোনহাউজ? মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত তহবিল তসরুপ করেছিলো। রতনে রতন চেনে।”
স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, “প্রধান বিচারপতি গুরুতর অন্যায় করলে তার বিচার কে করবে? জনপ্রতিনিধি ছাড়া কে করবে? প্রত্যেকের জবাবদিহিতা আছে। রাষ্ট্রপতি-স্পিকারের ইমপিচমেন্ট আমরা করতে পারি।
“রিভিউতে এটা সংশোধিত হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী এখানে আছেন। তার নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এই রায় সংসদের উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। এই রায় সংসদ মানতে বাধ্য নয়। সাংবিধানিক ষড়যন্ত্রের পূর্বাভাস। তার লাগাম টেনে ধরার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “৯৬ অনুচ্ছেদে সংবিধানের মূল ভিত্তির সাথে কোনো অসামঞ্জস্য নেই। তারা নিজেরাই সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ রায় দিয়েছে।
“রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী-স্পিকার সংসদে জবাবদিহি করেন। আপনাকে করা যাবে না, আপনি আইনের ঊর্ধ্বে? কোন ধরনের জাজমেন্ট? এই সব জাজমেন্ট করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, “সেমিনারে গিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দেন। ওখানে গিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেন। কী কারণে? অতীতে পূর্বসূরিরা যে আশায় দিয়েছেন সেই আশায়? অশুভ শক্তিদের সাথে হাত মেলানোর জন্য। ও আশা পূর্ণ হবে না। যে কোনো অপরাধ করলে বিচার হবে। যা করবেন, ভেবেচিন্তে করবেন।
“বিচার বিভাগের রাজনীতি করার অধিকার নেই। তারা বিভিন্ন বক্তৃতা দিচ্ছে, সীমা লঙ্ঘন করছে। এ ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী উদার, হজম করছেন। এরা জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছে। শত্রুকে শত্রু মনে করতে হবে। কঠোর হস্তে ... যেই হোক না কেন বিচারপতি হোক, প্রধান বিচারপতি হোক, ইমপিচমেন্ট করতে হবে।”
এমিচি কিউরিদের সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, “একজন আছে ড. কামাল হোসেন। কোথাকার ডাক্তার? মুরগির, ছাগলের না ভেড়ার। সে প্রেসক্রিপশন দিয়ে দিয়েছে। সংসদ পারবে না।
“আমীর-উল-ইসলাম। কত বড় মোনাফেক, না সুবিধাভোগী। সংসদের সাথে কনফ্লিক্ট লাগাইয়া যদি সুবিধা রেজাল্ট পাওয়া যায়।”
বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, “নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের সংবিধানের বাইরে যাওয়ার অধিকার নেই। আদালত ষোড়শ সংশোধন বাতিল করে বললেন, এটা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এটা কোথায় সাংঘর্ষিক সেটা বলেনি। প্রিম্যাচিওরলি তারা ধরে নিয়েছেন, বিষয়টি তাদের বিরুদ্ধে যাবে। তাদের উদ্দেশ্য সংসদকে তাদের ইচ্ছার অধীনে নিয়ে আসা। বিচারকরা নিজেদের বিচার নিজেরা করবে। নিজেদের স্বার্থকে তারা দেখেছেন।”
এমিচি কিউরিদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সংবিধান প্রণয়নের সময়কার রিপোর্ট আমি দেখেছি। সেই সময় ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে নোট অব ডিসেন্ট ছিল, অন্য কিছুর উপর ছিলো না। ড. কামাল হোসেন এখন কেন কথা বলছেন? সময় যখন আসে তখন তারা রঙ বদলান।
“কামাল হোসেন রঙ বদলিয়েছেন। ১/১১ এর সময় সেনা কর্তৃপক্ষের সময় আঁতাত করে মাইনাস টু থিওরির সপক্ষে মতামত দিয়েছিলেন। আমীর-উল-ইসলাম যে তথ্য দিয়েছেন, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সংসদ ও বিচার বিভাগের মধ্যে বিভাজন তৈরীর প্রচেষ্টা চলছে। এটা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা তা ভেবে দেখতে হবে।”
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, “সংসদ যদি সংবিধানের বাইরে যায় সেটা দেখার দায়িত্ব বিচার বিভাগের ওপর রয়েছে। তারপরও ক্ষমতায় মদমত্ত হয়ে তারা ভুল করতে পারেন। এটা প্রিম্যাচিওর জাজমেন্ট। যে আইনটা করার কথা ছিল, সেটা হলে তা দেখার পরে তারা আলোচনা করতে পারতেন। দূরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পর্যালোচনা করেছেন।”
সাবেক ডেপুটি স্পিকার আলী আশরাফ বলেন, “বিচার বিভাগের কোনো কাজে কি সংসদ হস্তক্ষেপ করেছে? আমার মনে হয় এটা গভীর ষড়যন্ত্র।”
সবার ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আলোচনা শেষে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “আজকের আলোচনায় উত্থাপিত বিষয় সম্পর্কে জাতীয় সংসদে পরবর্তীতে আলোচনার সুযোগ প্রদানের বিষয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী বিষয়ক যে রায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক গত ৩ জুলাই ২০১৭ ঘোষণা করা হয়েছে তা গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক বিষয় সম্পর্কিত।
“বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা বা জাতীয় সংসদ ও বিচার বিভাগ। এই তিনটি অঙ্গ স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করে সংবিধান অনুসারে। এই তিনটি অঙ্গের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আইনের শাসন নিশ্চিত হয়, মানবাধিকার সমুন্নত থাকে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত হয় ও সুশাসন নিশ্চিত হয়- যা গণতন্ত্রকে সুসংহত করে।”
“পয়েন্ট অব অর্ডারে উত্থাপিত আলোচনায় সাংবিধানিক বিষয় সম্পর্কিত হওয়ায় জাতীয় সংসদে এই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে নির্ধারিত দিনে জাতীয় সংসদে আলোচনার সুযোগ থাকবে,” ইতি টানেন স্পিকার।