বাংলাদেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইটের পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু

বাংলাদেশের তিন শিক্ষার্থীর তৈরি করা প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে উৎক্ষেপণের পর পৃথিবীর কক্ষপথে প্রদক্ষিণ শুরু করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2017, 05:50 PM
Updated : 7 July 2017, 05:53 PM

ন্যানো স্যাটেলাইটটি পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করবে, পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করতে সেটি সময় নেবে ৯০ মিনিটের মতো।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে স্যাটেলাইটটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। ঢাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

এর আগে গত ৪ জুন ন্যানো স্যাটেলাইটটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। উৎক্ষেপণের পর সেটি বাংলাদেশের উপর দিয়ে দিনে ৪ থেকে ৬ বার উড়ে যাবে।

১০ সেন্টিমিটার কিউব আকৃতির ও ১ কেজি ওজনের এ ন্যানো স্যাটেলাইট মহাকাশ সংক্রান্ত নানা বিষয়ে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের জন্য ছবি পাঠাবে, যা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যবহার করবেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, “আমাদের যেহেতু ছোট দেশ আর জনসংখ্যাও বেশি, তাই এখানে বর্তমান সরকারের মূল দর্শনই হলো আমাদের নিজেদের কর্মশক্তি বাড়াতে হবে। আর সেটা করতে হলে আমাদের বৈজ্ঞানিক যেসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মশক্তি বাড়ানো যায় তা করতে হবে।”

গত ফেব্রুয়ারিতে জাপানে এক অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ সাদ আন্দালিব কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যানো স্যাটেলাইটটি গ্রহণ করেন। একই অনুষ্ঠানে মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য ন্যানো স্যাটেলাইটটি জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পরে ন্যানো স্যাটেলাইটটির সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মহাখালী ক্যাম্পাসের ৪ নম্বর ভবনের ছাদে তৈরি গ্রাউন্ড স্টেশনটি গত ২৫ মে উদ্বোধন করেন ব্র্যাক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অফ ট্রাস্টির চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদ।

জাপানে তৈরি হওয়া এ ন্যানো স্যাটেলাইটের নকশা, উপকরণ সংগ্রহ ও তা বানানোর সব কাজই করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী- রায়হানা শামস ইসলাম অন্তরা, আবদুল্লা হিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মনোয়ার।

এই তিন তরুণের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, “টেকনোলোজি শুধু জানলেই হবে না, সেই আইডিয়াটা শেয়ার করতে জানতে হবে। আমরা এখন পুরো নির্ভরশীল আমাদের তরুণ প্রজন্মের ওপর। আমাদের প্রতিভা আছে, কিন্তু সে প্রতিভাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে।”

এই সম্ভাবনাময় তরুণদের বিপথগামী হওয়া থেকে বিরত রাখতে পরিবারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ইয়াফেস ওসমান বলেন, “আমরা দেখছি আমাদের অনেকের সন্তান সন্ত্রাসী হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক, অভিভাবক, বাবা-মা সবাইকে তাদের ভালোবাসতে হবে। বাবা-মা যদি অসৎ পথে আয় করে তাহলে সে সন্তান কখনও ভালো হয় না।”

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, এ বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশের প্রথম নিজস্ব স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উদ্বোধন করা হবে।

“আমরা আমাদের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এ বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুতে লঞ্চ করব। এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে এটি উদ্বোধন করা হবে। সেটা তৈরির কাজ চলছে এখন।”

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান নিয়ে সমালোচনা করেন।

“দেশের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আছে, এর মধ্যে কয়েকটি কেবল সার্টিফিকেট বিক্রি করে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় আমরা বন্ধ করে দিচ্ছি। এমনও হয়েছে যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় নানা সময় হুমকি-ধমকি আসে। বন্ধ করে দিলে বাসায় এসে হুমকি দিয়ে যায়।”

জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি আয়োজিত এ ভিডিও কনফারেন্সে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি তোশিয়ুকি নগুচি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সৈয়দ সাদ আন্দালিব।