গুলশান হামলার পর ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ এক বছর

এক বছর আগে ঈদ উৎসবের প্রস্তুতিতে থাকা ঢাকার কূটনীতিকপাড়ায় নজিরবিহীন যে জঙ্গি হামলা ২২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, তা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে অনেকখানি।

গোলাম মুজতবা ধ্রুবকামাল তালুকদার ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2017, 04:37 AM
Updated : 1 July 2017, 01:02 PM

বিশ্বজুড়ে উগ্রপন্থার প্রসারের এই সময়ে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ওই ঘটনা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তারের চিত্র অনেকটা স্পষ্ট করে তোলে।

জানা যায়, কেবল মাদ্রাসাপড়ুয়া গরিব ঘরের ছেলেরা নয়, নামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া ধনী পরিবারের সন্তানরাও বাড়ি পালিয়ে নিরুদ্দেশ হচ্ছে; জড়াচ্ছে জঙ্গিবাদের ভয়ঙ্কর পথে।  

২০১৫ সালের শুরু থেকে দেড় বছর ধরে লেখক, শিক্ষক, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, ভিন্নমতের অনুসারী ও বিদেশিদের ওপর একের পর এক উগ্রপন্থি হামলা যখন বাংলাদেশের মানুষকে শঙ্কিত করে তুলেছিল, তখনই ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানে পাঁচ তরুণের ওই হামলা জাতিকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়ে যায়; জানিয়ে দেয় বিপদের মাত্রা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ভাষায়, হলি আর্টিজানের ওই হামলা ছিল ‘টার্নিং পয়েন্ট’।

“টার্নিং পয়েন্ট এই জন্য যে, ওই ঘটনার পর আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এই জঙ্গিরা কী চায়? কী তাদের উদ্দেশ্য? কারা এদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা কিংবা কারা এর অর্থায়ন করছে।”

গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় লেকের তীরে হলি আর্টিজান বেকারির সবুজ লন ছিল বিদেশিদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। বিদেশিদের নিয়মিত আনাগোনা এবং শিথিল নিরাপত্তার কারণেই ওই রেস্তোরাঁকে জঙ্গিরা হামলার জন্য বেছে নিয়েছিল বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

সেই রাতে পাঁচ তরুণ অস্ত্র হাতে ওই রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ার পর শুরু হয় ভয়ঙ্কর নৃশংসতা। জবাই ও গুলি করে ২০ জনকে হত্যা করে তারা, যাদের মধ্যে ১৭ জনই ছিলেন বিদেশি নাগরিক। হামলার খবর পেয়ে সেখানে প্রবেশ করতে গিয়ে বোমায় প্রাণ হারান দুই পুলিশ কর্মকর্তা।      

কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই হামলার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনামে চলে আসে; তখনও অনেক অতিথি হলি আর্টিজানের ভেতরে কার্যত জিম্মি হয়ে আছেন।    

সারা রাত উৎকণ্ঠার পর সকালে শুরু হয় সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলের অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’। তাদের অভিযানের মধ্যে হামলাকারী পাঁচ তরুণ ও ক্যাফের এক পাচক নিহত হন। ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় মোট ১৩ জনকে। 

এরা এখন স্মৃতির পাতায়; গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন তারা

জঙ্গিমুক্ত করতে হলি আর্টিজান বেকারির সীমানা দেয়াল ভেঙে ঢুকেছিল সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান

এর সাত দিনের মাথায় রোজার ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের কাছাকাছি একটি পুলিশ চেকপোস্টে আবারও জঙ্গি হামলা হয়। বোমায় নিহত হন দুই পুলিশ সদস্য, বাড়িতে গুলি ঢুকে প্রাণ হারান এক গৃহবধূ। পুলিশের গুলিতে এক জঙ্গিও সেদিন নিহত হয়, গ্রেপ্তার হয় কয়েকজন।  

ওই দুই হামলার পর জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটনে নতুন করে উদ্যোগী হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী; শুরু হয় প্রতিরোধপর্ব।  

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, “হলি আর্টিজানে যে হামলা হয় এটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টুইন টাওয়ার হামলার মতো। যেভাবে টুইন টাওয়ার হামলা আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, হলি আর্টিজান হামলাও আমাদের দেশের জন্য একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। একসঙ্গে এতজন বিদেশি এর আগে বাংলাদেশের কোথাও মারা যায়নি।”

এরপর এক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০টি অভিযানে অন্তত ৭৪ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ। গুলশান হামলার জন্য যাদের দায়ী করা হয়, সেই নব্য জেএমবি এই এক বছরে অনেকটাই দুর্বল হয়ে এসেছে বলে কাউন্টার টেররিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আবদুল মান্নানের ভাষ্য।

ইন্সটিটিউট অব কনফ্লিক্ট ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (আইসিবিএস) নির্বাহী পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ বলেন, “আমাদের দেশে হলি আর্টিজান হামলা যুক্তরাষ্ট্রের নাইন ইলেভেনের মত হুইসেল ব্লোয়ার হিসেবে কাজ করছে।

“এখানে প্রথমে যে সংগঠনগুলো সংগঠিত হচ্ছিল তাদের উপর আমরা খবরদারি করতে সক্ষম হইনি। কিন্তু গুলশান হামলার পর খুব বড় করে আমরা সচেতনতা দেখলাম। তারপর দেখলাম অনেক জঙ্গি ধরা পড়ল, মারা গেল, পুলিশ তাদের আস্তানাগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম হল। কিন্তু একটা বিষয় হল, জঙ্গিবাদী সংগঠনের ধর্মই হল কৌশল পরিবর্তন করা।”

 

বাড়ি ছেড়ে জঙ্গিবাদে

গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর সশস্ত্র বাহিনীর অভিযানে নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করেছিল আইএস, যারা কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন বা পরিবারের যোগাযোগের বাইরে ছিলেন বলে স্বজনরা সে সময় জানান।

এরপর শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় পুলিশের গুলিতে নিহত যুবকও চার মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়।

আইএস প্রকাশিত গুলশানের পাঁচ হামলাকারীর ছবি

ওই ছয়জনের মধ্যে চারজনই ব্যয়বহুল বিভিন্ন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। তাদের দুইজন ঢাকার নামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন, একজন ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের।

তুলনামূলক স্বচ্ছল পরিবারের ছেলেদের বাড়ি পালিয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার খবরে উদ্বেগ নতুন মাত্রা পায়। তদন্তের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে। 

জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথমে দশজনের এবং পরে আরও সাতজনের দুটি তালিকা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ।   এরপর ২০ জুলাই র‌্যাবের পক্ষ থেকে ২৬১ জনের একটি তালিকা দেওয়া হয়। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে এদের অনেকেরই সন্ধান পাওয়া যায়। তাদের কাউকে কর্মস্থলে, কাউকে বাড়িতে, আবার কাউকে কারাগারেও পাওয়া যায়।

পরে দুই দফা এই তালিকা হালনাগাদ করা হয়। ২৫ জুলাই প্রথম হালনাগাদ তালিকায় ৬৮ জনকে নিখোঁজ দেখানো হয়। ৯ অগাস্ট আরেক তালিকায় নিখোঁজের সংখ্যা বলা হয় ৭০ জন।

এরপর ৩১ অগাস্ট পুলিশ মহাপরিদর্শক শহীদুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, র‌্যাব আর এসবির তালিকা যাচাই-বাছাই করে তারা দেখেছেন, সারা দেশে নিখোঁজের সংখ্যা ৪০ জন।

জঙ্গিবাদের বিস্তারের এই দিকটি আলোয় আসার পর সরকারের তরফ থেকে নানামুখী তৎপরতা শুরু হয়। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টানা ১০ দিনের বেশি কোনো শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তার তালিকা চাওয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। অভিভাবক, শিক্ষক, আলেমসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে দফায় দফায় হয় মতবিনিময় সভা।

অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়াতেও নেওয়া হয় নানামুখী উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার তাগিদ দেন বার বার। 

সেই সঙ্গে চলে সাঁড়াশি অভিযান। গুলশান হামলার ২৬ দিনের মাথায় কল্যাণপুরের ‘তাজ মঞ্জিল’ নামের একটি ভবনে নয়জন, ২৭ অগাস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় নব্য জেএমবির শীর্ষনেতা তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিনজন, ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার রূপনগরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রশিক্ষক জঙ্গি জাহিদুল ইসলাম, ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে তানভির কাদেরী নিহত হন।

এরপর ৮ অক্টোবর গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও আশুলিয়ায় একদিনে র‌্যাব ও পুলিশের পৃথক চার অভিযানে সন্দেহভাজন ১২ জঙ্গি নিহত হন। বছরের শেষ দিকে ২৪ ডিসেম্বর দক্ষিণখান থানার পূর্ব আশকোনায় এক বাড়িতে অভিযানে এক নারী জঙ্গি গ্রেনেড ফাটিয়ে আত্মঘাতী হন, নিহত হয় এক কিশোর জঙ্গি।

আত্মীয়তা, বিস্ফোরকের মজুদ, আত্মঘাতী

ব্যাপক অভিযানের মধ্যে বছরের শুরুতে কিছুদিন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও চলতি বছর মার্চে জঙ্গিরা নতুন করে তাদের তৎপরতার জানান দিতে শুরু করে। প্রকাশ পায় তাদের নতুন কৌশল, প্রস্তুতির নতুন ধরন।

৭ মার্চ কুমিল্লায় একটি বাসে তল্লাশির সময় পুলিশের দিকে বোমা ছোড়ার মধ্যে দিয়ে এই নতুন পর্বের সূচনা। এরপর ১৫ মার্চ সীতাকুণ্ডের দুই বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এর মধ্যে এক বাড়িতে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে এক নারীসহ পাঁচজন নিহত হয়।

১৭ মার্চ আশকোনায় র‌্যাবের একটি ব্যারাকে ঢুকে পড়ার পর শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণে নিহত হয় সন্দেহভাজন এক জঙ্গি। ১৮ মার্চ মোটর সাইকেল আরোহী এক ব্যক্তি ভোর সাড়ে ৪টার দিকে খিলগাঁওয়ের ‘শেখের জায়গা’ মোড়ের কাছে চেক পোস্টে ঢুকে পড়ার পর র‌্যাব সদস্যদের গুলিতে নিহত হন। ২৪ মার্চ ঢাকার বিমানবন্দর পুলিশ বক্সের সামনে বিস্ফোরণে নিহত হন এক যুবক। তার সঙ্গে থাকা ট্রলি ব্যাগে পাওয়া যায় আরও বিস্ফোরক।

মিরসরাইয়ে উদ্ধার বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে; গত এক বছরে এই রকম বহু বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ

ওইদিনই সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় এক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলার পর চার দিন ধরে অভিযান চলে যাতে অংশ নেয় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা। ওই অভিযান শেষে বাড়ির ভেতর থেকে এক নারীসহ চার জঙ্গির লাশ পাওয়া যায়। তার আগে ঘটনাস্থলের কাছে বোমা বিস্ফোরণে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান ও দুই পুলিশসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়।

সিলেটের অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই মৌলভীবাজারের নাসিরপুর ও বড়হাটে দুই বাড়িতে শুরু হয় অভিযান। এর মধ্যে নাসিরপুরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিনাজপুরের নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা লোকমান হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলিয়ে সাতজন নিহত হয়। আর বড়হাটে এক নারীসহ তিন জঙ্গির লাশ পাওয়া যায়

৩১ মার্চ কুমিল্লার কোটবাড়ীতে এক আস্তানায় পাওয়া যায় বিপুল পরিমান বিস্ফোরক। ২৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে আরেক বাবুসহ চার জঙ্গি নিহত হয়। ৭ মে ঝিনাইদহের মহেশপুরে অভিযানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি নিহত হয়। ১১ মে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর হাবাসপুরে এক অভিযানে দুই নারীসহ এক পরিবারের পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এসব অভিযানে তারা জঙ্গিদের ব্যবহৃত বিস্ফোরকের শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা বাড়তে দেখেছেন।

কাউন্টার টেরোরিজমের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, “এখন তারা ‘মেরে মরো’ নীতি গ্রহণ করেছে। যার অর্থ হল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের কোনো আস্তানায় অভিযান চালালে তারা আত্মসমর্পণ না করে বরং আত্মঘাতী হামলা করে। তাতে নিজেরা মরলেও যাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষতি করা যায়।”

সিলেটের শিববাড়িতে জঙ্গি আস্তানা থেকে জিম্মিদের উদ্ধারে এরকম অভিযানে দেখা যায় সেনা কমান্ডোদের

জঙ্গিদের সাম্প্রতিক প্রবণতা বিশ্লেষণ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নব্য জেএমবির সদস্যরা নতুন কৌশলে সদস্য সংগ্রহ করছে।

“প্রধানত তিনটি উপায়ে তারা সদস্য সংগ্রহ করে। প্রথমত আত্মীয়তা গড়ে তুলে, বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে এবং ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে।”

আর যোগাযোগ ও প্রচারের মাধ্যম হিসেবে জঙ্গিরা অনেক বেশি ব্যবহার করছে ইন্টারনেট।

এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রশীদ বলেন, “নব্য জেএমবিকে দেখা গেছে অনেকটা পরিবারকেন্দ্রিক। তারা নিজেদের পরিচয় লুকাতে পরিবারকে ব্যবহার করেছে, আবার সদস্য সংগ্রহের জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের মোটিভেট করেছে। সর্বশেষ দেখা গেছে এক জঙ্গির বোনকে আরেক জঙ্গির সঙ্গে বিয়ে দিয়ে সদস্য বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। জাঙ্গিরা যখন আক্রমণের মুখে পড়েছে পরিবারের অন্য সদস্যরাও তখন পাল্টা আক্রমণে চেষ্টা করেছে।”

তার মতে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে জঙ্গি মতবাদের প্রচার ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও সামর্থ্য ও পরিসরের দিক দিয়ে তা এখনও সীমিত। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সেই সামর্থ্য বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা নিয়মিত ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ফোন অ্যাপে নজরদারি করছেন। সাধারণ মানুষকে জঙ্গি মতাদর্শের দিকে প্রভাবিত করতে পারে- এমন শতাধিক ফেইসবুক পেইজের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগিয়ে উগ্রবাদ আর হিংসার মতাদর্শ প্রচারের বিপরীতে ‘কাউন্টার র‌্যাডিক্যালাইজেশন বা ডির‌্যাডিক্যালাইজেশন’ প্রক্রিয়া যতদিন জোরদার করা না যাচ্ছে, ততদিন ঝুঁকি থেকেই যাবে বলে মনে করেন আবদুর রশীদ।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বাড়াতে পারলে প্রতিটা স্কুল কলেজে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে আরও সচেতনতা তৈরি হবে, পরিবার উদ্বুদ্ধ হবে। তাহলেই তারা যাদের সদস্য করতে টার্গেট করেছে, তা বন্ধ করা যাবে।”

গুলশান হামলার বার্ষিকীতে বিশেষ প্রতিবেদন