সেরকমই একজন ২২ বছর বয়সী ফাইরোজ মাহিন মালিহা, যাকে এখনও সেই ঘটনা তাড়িয়ে বেড়ায় বলে জানিয়েছেন তার বাবা কর আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য এ কে বোরহান উদ্দিন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “মেয়েকে এখন আমি আর শাসন করার চেষ্টা করি না। ও যে মানসিক বিড়ম্বনা, বড় ধরনের মানসিক ধাক্কা পেয়েছে... এ জন্য ওকে একটু ফ্রি ভাবে, যা মনে চায়, ওটা করুক সে স্বাধীনতা দিয়েছি।
“এটা ওর দ্বিতীয় জন্ম মনে হয়েছে আমার কাছে।”
সেদিন হলি আর্টিজান বেকারিতে চোখের সামনে কুপিয়ে ও গুলি করে মানুষ হত্যা দেখার ‘ট্রমা’র স্মৃতিচারণ থেকে মেয়েকে দূরে রাখতে অতি সতর্ক থাকেন এই রাজস্ব কর্মকর্তা।
বোরহান উদ্দিন বলেন, “আমরা ইজিভাবে মুভ করা থেকে বিরত থেকেছি। আমার মেয়ে যদি পাবলিক গ্যাদারিংয়ে যায়, অনেকে জিজ্ঞেস করবে, সেজন্য অনেক ক্ষেত্রে যেতেও পারি না। আমরা মোটামুটিভাবে সংকুচিত হয়ে গেছি বেড়ানো-বিচরণের ক্ষেত্রে।”
ঘটনার ধাক্কা সামলাতে অনেকবার মনোবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হতে হয়েছে জানিয়ে বোরহান বলেন, “আমরা বলতেও পারি না কিছু, এতো বড় সেনসিটিভ ব্যাপার।
“এই ব্যাপারটা একটু এড়িয়েই যায়, ট্রমাটাইজ হয়েছিল। পরবর্তীতে এ ব্যাপারটা যাতে তার মধ্যে সার্বক্ষণিক অনুরণন না হয় সেজন্য তাকে সাধারণত এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি না।”
বোরহান জানান, মালিহা ওই দিন বান্ধবী তাহানা তাসমীয়ার বাসায় ইফতার সেরে ওই বাড়ির সামনের হলি আর্টিজানে আইসক্রিম খেতে গিয়েছিলেন।
সেখানে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে বলে মেয়ের বরাতে তিনি বলেন, রাত ৮টার দিকে ওরা সেখানে গিয়েছিল। আইসক্রিম খাওয়ার কথা শুনে ওয়েটার তাদের বাইরের লনে বসতে বলে।
“বাইরে লনে যাওয়াটা আমার মনে হয়, ওদের জন্য বাঁচার উপায় হয়ে গিয়েছিল। ভিতরে থাকলে হয়তো ওরা এর মধ্যে পড়ে যেত।”
তাহমিদ পরিস্থিতির শিকার হয়ে ভোগান্তিতে পড়ায় মালিহার মানসিক যন্ত্রণার কথা তুলে ধরে বোরহান বলেন, “ওকে কিন্তু আমার মেয়েই দাওয়াত দিয়েছিল আইসক্রিম খাওয়ার জন্য। .. দীর্ঘদিন এটা ওকে (মালিহা) বিড়ম্বনা দিয়েছিল; কষ্ট দিয়েছিল।
“পরবর্তীতে সে রিকভার হয়ে গেছে। যখন সে দেখেছে জাস্টিস তাদের পক্ষে গিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন দেখেছে তারা নির্দোষ।”
সেদিন প্রথমে ঘটনার ভয়াবহতা বুঝতে দেরি হলেও হলি আর্টিজানের দিকে ছুটে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি। সাড়ে ১০টায় বাসা থেকে রওনা হয়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যারিকেডের মুখে পড়েন।
“যেহেতু আমার মেয়ে ওখানে ছিল, সেহেতু আমি এবং আমার মিসেস ওখানে গমনের চেষ্টা করি এবং গাড়ি ছেড়ে দিয়ে পায়ে হেঁটে ওখানে যাই। এবং তখন দেখলাম যে, বিভিন্ন মিডিয়া এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর লোকজন যাদের আনাগোনা তখন বুঝলাম ব্যপ্তি কতো গভীর! যখন আমরা স্পটে যাওয়ার চেষ্টা করলাম, সেখানে তো আমরা ঢুকতে পারি নাই।”
গুলশান হামলার ওই ঘটনায় নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিভীষিকাময় রাতটা আমাদের ভাবনার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। সেটা হলো, একটা মতো ভাবনাগত যে শক্তি সেটা যে আমাদের আছে সেটা বুঝা গিয়েছে।"
তবে মেয়ের সামনের দিনগুলো কেমন কাটবে তা নিয়ে শংকায় রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা বোরহান।
“কারণ আমার মেয়ের সামনে যেটা ঘটেছে, জীবনের প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে নিশ্চয় রিভাইভ করবে এবং এটাকে যদি চিন্তায় নিয়ে আসে তাহলে তার জন্য তা কষ্টেরই হবে।”
মেয়ের বান্ধবী তাহানা তাসমিয়াও একই রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেলেও এখন ‘মোটামুটি ভাল’ আছে বলে জানান বোরহান।