সেই হলি আর্টিজান বেকারি এখন যেমন

বাংলাদেশের যে জঙ্গি হামলা কাঁপিয়েছিল গোটা বিশ্বকে; তার সঙ্গে জড়িয়ে ঢাকার গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িটি এবং হলি আর্টিজান বেকারি নামটি।

তাবারুল হক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2017, 04:31 PM
Updated : 29 June 2017, 05:17 PM

এক বছর আগের ওই হামলার পর নতুন ঠিকানায় কাজ চালাচ্ছে হলি আর্টিজান বেকারি; আর রেস্তোরাঁ তুলে দিয়ে এখন নিজেই থাকার জন্য বাড়িটি গোছগাছ করছেন এর মালিক।

হামলার আগে ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর ওই বাড়িতেই ছিল হলি আর্টিজান বেকারি; উন্মুক্ত সবুজ লনের ওই রেস্তোরাঁটি ঢাকায় বিদেশিদের কাছে ছিল বেশ জনপ্রিয়। হামলায় নিহতদের অধিকাংশও ছিলেন বিদেশি।

জঙ্গি হামলা এবং তাদের দমনে সেনা কমান্ডোদের অভিযানের পর ভবনটির সীমানা দেয়াল ও বেকারির বেশিরভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল; নষ্ট হয়েছিল ভেতরে থাকা মালামালও।

বছর গড়ানোর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত ঘটনার সাক্ষী সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চলছে ঘষামাজা আর রঙের কাজ। আনা হচ্ছে নতুন আসবাব।

ফটকে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত বছরের ১২ নভেম্বর মালিকের হাতে ভবনটি হস্তান্তরের পর থেকে শুরু হয় সংস্কার কাজ। কাজ শেষ হলে উঠবেন মালিক সামিরা আহম্মদ ও তার স্বামী সাদাত মেহেদী।

জঙ্গি হামলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পর হলি আর্টিজান বেকারির হাল ছিল এমন

দোতলা ভবনটির পূর্বপাশে গুলশান লেক, আগে লেকের পাড় দিয়ে হাঁটার পথ থাকলেও সেটি এখন আর ব্যবহার হয় না। লেকের পাড়ের অংশে কাঁটাতারের বেড়া।

বাড়িটির সামনের অংশ (দক্ষিণ) সবুজ রঙের টিন দিয়ে ঘিরে রাখা দেখা যায়। সড়ক থেকে বাম দিকে এর প্রবেশ পথ তালাবদ্ধ।

ভবনটির দরজার-জানালা বন্ধ। তবে বারান্দায় শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে। এর দেয়ালে সাদা রঙ করা হলেও দরজা-জানালায় এখনও রঙের প্রলেপ পড়েনি।

বাড়িতে ঢোকার পথে ডানপাশে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় ছোট একটি কক্ষ রয়েছে। সেখানে পাওয়া যায় নিরাপত্তাকর্মী আকতার হোসেনকে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভবনটি এখনো ব্যবহার শুরু হয়নি। ভেতরে কাজ চলছে। আসবাবপত্র বসানো হলে মালিক নিজেই সপরিবারে বাড়িতে উঠবেন।”

বর্তমানে বাড়িটির দেখাশোনার দায়িত্বে দুজন মালিসহ পাঁচজন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন।

বাইরের কারও বাড়ির ভেতরে ঢোকায় রয়েছে কড়াকড়ি। সাংবাদিক পরিচয় দিলেও ছাড় দেয়নি নিরাপত্তাকর্মীরা।

 

আকতার বলেন, “প্রতিদিন বহু মানুষ এই বাড়ি দেখতে আসে, কিন্তু কাউকে ভেতরে যেতে দেওয়া হয় না। বাড়ির কোনো ছবিও তুলতে মানা করেছেন মালিক।”

ভবনটির ফটক রয়েছে বন্ধ; কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না

সাদাত মেহেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা এখন আমার বাড়ি, সেখানে এখন কাউকে ক্যামেরা নিয়ে আমি যেতে দিতে পারছি না।”

সাদাতের স্ত্রী সামিরা উত্তরাধিকার সূত্রে এই বাড়ির মালিক। ১৯৭৯ সালে ‘আবাসিক ভবন কাম ক্লিনিক গড়ে তোলার জন্য’ ডা. সুরাইয়া জাবিনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল বাড়িটি। ১৯৮২ সালে ওই প্লটের একপাশে গড়ে তোলা হয় লেকভিউ ক্লিনিক।

সুরাইয়ার মৃত্যুর পর প্লটের মালিক হন তার মেয়ে সামিরা ও সারা আহম্মদ। সামিরার স্বামী সাদাত মেহেদী তার বন্ধু নাসিমুল আলম পরাগসহ কয়েকজন মিলে ২০১৪ সালের জুনে গড়ে তোলেন হলি আর্টিজান বেকারি।

জঙ্গি হামলার ছয় মাস পর গত ১০ জানুয়ারি থেকে গুলশান এভিনিউর ‌র‌্যাংগস আর্কেডের দ্বিতীয় তলায় স্বল্প পরিসরে হলি আর্টিজান বেকারিটি নতুন করে চালু হয়।

নতুন ঠিকানায় স্বল্প পরিসরে সচল হলি আর্টিজান বেকারি

সুপারশপ গোর্মেট বাজারের এক পাশে ৫০০ বর্গফুটের নতুন জায়গায় শুধু বেকারি পণ্য করছে হলি আর্টিজান। সেখানে একসাথে ২০ জন অতিথি বসতে পারছেন।

আগের ঠিকানায় ৫০ জন অতিথির বসার ব্যবস্থার পাশাপাশি রেস্তোরাঁও ছিল। কিন্তু নতুনভাবে খোলা হলি আর্টিজানে রেস্তোরাঁ এখনও করা হয়নি।

 

নতুন বেকারিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দেশি ক্রেতার চেয়ে বিদেশিরাই বেশি।

বেকারির নতুন কর্মীদের সঙ্গে পুরনোও রয়েছেন কয়েকজন। তবে মালিকের ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে’ তারা মুখ খুলতে চাননি।

নতুন বেকারির নিরাপত্তার দায়িত্ব পারণ করছেন র‌্যাংগস আর্কেড ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরাই।

এখনও বিদেশি ক্রেতারাই আসছেন বেশি হলি আর্টিজান বেকারিতে

নতুনভাবে চালু করলেও এখনও আগের অবস্থায় পৌঁছতে পারেননি বলে জানান বেকারিরও মালিক সাদাত মেহেদী।

“হলি আর্টিজানের শুধু যে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে উঠতে দুই-তিন বছর লাগবে।”

এদিকে আগের ভবনটির উত্তর পাশের দোতলা ভবনটিতে ছিল হলি আর্টিজান বেকারি, আর দক্ষিণপাশে ছিল ‘লেকভিউ ক্লিনিক’। জঙ্গিদের বুলেটে ক্লিনিকের সামনে অংশের একটি কাচ ভেঙে যায়।

লেকভিউ হোটেলে ক্লিনিকে ঢোকার পথ

লেকভিউ ক্লিনিকের চিকিৎসক মাহবুব উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হামলার পর ক্লিনিকটিও বন্ধ ছিল।”

গত বছরের ১৩ নভেম্বর ক্লিনিকটি খোলার পর ২৩ নভেম্বর থেকে রোগী ভর্তি শুরু হয় বলে জানান ডা. মাহবুব।

“হামলার ঘটনার পর পুরো এলাকায় নিরাপত্তায় কড়াকড়ি এবং তল্লাশির কারণে আমরা আগের চেয়ে রোগী কম পাচ্ছি,” বলেন তিনি।