পাহাড় ধসের পর রাঙামাটির ১৫টি সরকারি ভবন ঝুঁকিতে

রাঙামাটি সদর থেকে উপজেলার মানিকছড়ি যাওয়ার পথেই ডান পাশে উঁচু পাহাড়ের উপর বাংলাদেশ টেলিভিশনের রাঙামাটি উপকেন্দ্রের অবস্থান। মূল ভবন লাগোয়া পাহাড়ের একাংশ দুর্যোগের সময় ধসে গেছে।

মিন্টু চৌধুরী রাঙামাটি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2017, 04:07 PM
Updated : 18 June 2017, 06:13 PM

টেলিভিশন উপকেন্দ্রটির দোতলা ভবনটির ডান দিকের পাহাড়ের অংশটি খাড়াভাবে ধসে গেছে। এখন ঝুঁকি নিয়েই ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে।

শিমুলতলীতে অবস্থিত জেলা পাসপোর্ট অফিসের তিনতলা ভবনও একইরকম ঝুঁকিতে রয়েছে। যে পাহাড়ে এটি অবস্থিত তার পাশেই একাংশ দুর্যোগে খাড়াভাবে ধসেছে।

রাঙামাটিতে গত মঙ্গলবারে ভয়াবহ পাহাড় ধসের শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি এমন ঝুঁকিতে জেলার কমপক্ষে ১৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় অথবা বাংলো রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান জানান।

এদের মধ্যে ভেদভেদি এলাকার সার্কিট হাউজ, শিমুলতলী এলাকার রেডিও স্টেশন ও পাসপোর্ট অফিস বেশি ঝুঁকিতে আছে।

ঝুঁকিমুক্ত নয় পাসপোর্ট অফিসটিও- ছবি: সুমন বাবু

রোববার বিকালে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা সার্কিট হাউজের পেছনে তিন থেকে চার হাত দূরে পাহাড় ধসেছে।

শিমুলতলীতে বাংলাদেশ বেতার রাঙামাটি কেন্দ্রের চতুর্দিকে পাহাড় ধস হয়েছে। বেতারের দুটি টাওয়ারের গোড়ার মাটি সরে গেছে।

বেতার ভবনটিও রয়েছে ঝুঁকিতে- ছবি: সুমন বাবু

বাংলাদেশ বেতার রাঙামাটি কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রকৌশলী ভাস্কর দেওয়ান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চতুর্দিকে পাহাড় ধসে যাওয়া বেতার ভবন পুরোপুরি ঝুঁকিতে আছে। এছাড়া আমাদের তিনটি টাওয়ারও ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে।”  

বেতার ভবন স্থানান্তর করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

বেতার ভবনের প্রবেশ মুখের সড়কও ধসের ঝুঁকিতে আছে জানিয়ে ভাস্কর বলেন, ভবনের পাম্প হাউজটিও ধসের মাটিতে তলিয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব স্থাপনাই তো পাহাড়ের উপরে, এমনিতেই তো ঝুঁকি থাকে। কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনায় বেশ কয়েকটি সরকারি অফিস ও বাংলো ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।”

মাটি ধসে গেছে সার্কিট হাউজের পেছনেও- ছবি: সুমন বাবু

ডিসি বাংলো, টিঅ্যান্ডটি এলাকার এলজিইডি কার্যালয়, রিজার্ভ বাজার এলাকার এসপি বাংলো, ফিশারি ঘাট এলাকার মৎস্য ভবন বাংলোও ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান তিনি।

পাহাড়ধস ও অধিক বৃষ্টিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও নিরূপণ করা হয়নি বলে জানান জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, “বিপর্যয়ের পর আমরা প্রথমেই উদ্ধার তৎপরতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। তা শেষ হয়েছে। এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের পরিস্থিতি জানাতে।”

ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারের সদস্যকে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, সে কারণে প্রকৃত ক্ষতির হিসাবও ঠিক করা যাচ্ছে না।

সোমবারের মধ্যেই ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে

রাঙামাটির পরিস্থিতি দিন দিন উন্নতি হচ্ছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মান্নান বলেন, “উদ্ধার তৎপরতা শেষ হওয়ায় আমরা এখন পুনর্বাসনের দিকে মনোযোগ দিয়েছি। রাঙামাটির সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে। বিদ্যুৎ-পানি আছে।”

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দামও বেশি নিচ্ছে না দোকানিরা। ৩০ হাজার লিটার অকটেন এসেছে, যা দিয়ে ৩০দিন চলবে। অটোরিকশা ভাড়াও স্বাভাবিক আছে।

চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে পণ্য নৌপথে এখন রাঙামাটিতে আসছে।

এদিকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভারি বর্ষণের কারণে ঝুঁকি বিবেচনায় রাঙামাটি সদরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়।

১৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও আছেন বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।