নিবন্ধন ফি লাখ টাকা করতে প্রস্তাব ইসিতে

নির্বাচনী আইন-বিধি সংস্কারে একগুচ্ছ প্রস্তাব পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশনের মাঠ কর্মকর্তারা, যাতে দলগুলোর নিবন্ধন ফি ১ লাখ টাকা করতে বলা হয়েছে।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2017, 06:10 PM
Updated : 14 June 2017, 06:10 PM

নিবন্ধন ফি ২০ গুণ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন তালিকা বিলোপ, ভোটের সময় সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত করা, আচরণবিধি লঙ্ঘনে অর্থদণ্ড ১০ গুণ বাড়ানো, প্রিজাডিং কর্মকর্তার কাজ কমানো ও স্মার্ট ভোট ব্যবস্থাপনার সুপারিশও রয়েছে।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সংস্কার প্রস্তাব পাঠানোর শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। এরপর ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মাঠ পর্যায়ের প্রস্তাবাবলি সম্পর্কে জানা যায়।

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলসহ অন্যদের সঙ্গে আইন সংস্কারসহ নানা বিষয়ে সংলাপের আগে নিজস্ব কর্মকর্তাদের মতামত নিল কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।

গণপ্রতিনিধিত্ব আাদেশ, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালাসহ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিষয়গুলো নিয়ে অধীনস্তদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছি ইসিতে।

ইসির সহকারী সচিব রৌশন আরা বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অন্তত ছয়টি বিষয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব পাঠিয়েছে। আমরা সুপারিশগুলো একীভূত করে কমিশনের বিবেচনার জন্যে শিগগিরই উপস্থাপন করব।”

এর আগে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসিও ২০১৫ সালে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে প্রস্তাব সংগ্রহ করেছিল। সবগুলো গুছিয়ে রাখলেও তা নিয়ে তারা আর এগোয়নি। নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণার পর নতুন করে উদ্যোগ নেয়।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও ফরিদপুরে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় রয়েছে।

রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহতাব উদ্দিন কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ নিয়ে ১৩টি, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধি ও আচরণবিধি, নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে চারটি, স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় বিদ্যমান বিধি বিলোপ, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরও আটটি সুপারিশ রয়েছে।

এ কর্মকর্তা রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ফি অফেরতযোগ্য ১ লাখ টাকা, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অর্থদণ্ড ১ লাখ করা, পরপর তিনটি সংসদে ৫ শতাংশ আসনে (১৫টি আসন) ও ৫ শতাংশ ভোট না পেলে নিবন্ধন বাতিলের সংস্কার আনার সুপারিশ করেছে।

২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন পদ্ধতি চালু করে এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি। নিবন্ধন না থাকলে রাজনৈতিক দল হিসেবে সক্রিয় থাকা গেলেও ভোটে অংশ নেওয়া যায় না।  

প্রথম বার দলগুলোর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি নিয়েছিল ইসি। পরে নতুন আরও দল নিবন্ধনের সময়ও ওই ৫ হাজার টাকাই নেওয়া হয়েছিল। তবে আবেদন করে নিবন্ধন না পাওয়া দলকে ওই অর্থ ফেরত দেওয়া হয় এখন।

বিদ্যমান আইনে আচরণবিধি লঙ্ঘনে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও পর পর দুই সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে।

একই সঙ্গে ভোটের সময় সকাল ৮টার পরিবর্তে এক ঘণ্টা এগিয়ে নেওয়ারও সুপারিশ রয়েছে সাহতাব উদ্দিনের।

ভোটের নির্বাচন নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমের পাশাপাশি ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও আচরণবিধি লঙ্ঘনে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছেন এক আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।

প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাজ সহজতর করা; ইসির ব্যবস্থাপনায় ভোটার স্লিপ বিতরণ; প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে ইসির একই মঞ্চে বিতর্ক; ভোট ৭টা থেকে ৩টা করা, ভোটকক্ষের সংখ্যা কমানো; ইভিএম ও ভোটার সচেতনতা বাড়ানো, স্বয়ংক্রিয় সিল, স্মার্ট ভোটকক্ষ তৈরিসহ একগুচ্ছ সুপারিশ রয়েছে একাধিক মাঠ কর্মকর্তার।

‘না’ ভোট চালু, কোনো নির্বাচনী আসনে ৫০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনরায় ভোট করা, দুই বা ততোধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে বিদ্যমান লটারি প্রথা বাদ দিয়ে পুনঃভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের বিধান বাদ, অনলাইনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার প্রস্তাব গতবারের মতো এবারও এসেছে।

১৯৭২ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ১১ বার সংশোধনী এসেছে। এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে অন্তত ২০৯টি বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।