রামপাল: ‘কয়লা ও ড্রেজিংয়ের ঝুঁকি উপেক্ষিত’

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে সরকারের তৈরি প্রতিবেদনে কয়লা পরিবহন ও নদী খননের ফলে জলজ পরিবেশের ওপর সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে মত দিয়েছেন দুই বিদেশি বিশেষজ্ঞ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2017, 11:32 AM
Updated : 10 June 2017, 11:53 AM

সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির অনুরোধে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে জলজ পরিবেশবিদ যুক্তরাষ্ট্রের ড. উইলিয়াম ক্লায়েন্ডল ও অস্ট্রেলিয়ার ড. জন ব্রুডির মূল্যায়ন প্রতিবেদনের সারাংশ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন।

অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, বঙ্গোপসাগর ও পশুর নদী খননের ফলে সৃষ্ট পরিবেশের হুমকিগুলোর বিষয়ে সরকার পর্যাপ্ত মূল্যায়ন করেনি; সেগুলি নিরসন ও হ্রাস করার জন্য পর্যাপ্ত পরিকল্পনাও নেওয়া হয়নি।

 “বাংলাদেশ সরকার ড্রেজিং করা পলি-কাদা কোথায় ডাম্পিং করবে তা সুনির্দিষ্ট করেনি এবং খননের ফলে জলজ প্রজাতিসমূহের উপর হুমকিও মূল্যায়ন করেনি।”

রামপাল প্রকল্পের পরিবশেগত প্রভাব পর্যালোচনা (ইআইএ) প্রতিবেদনে বঙ্গোপসাগর ও পশুর নদী দিয়ে কয়লা পরিবহনের হুমকি চিহ্নিত করে সেগুলো জরুরি ভিত্তিতে মোকাবেলা করার বিষয়ে সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা নেই বলে মন্তব্য করেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “কয়লা পরিবহনে দুর্ঘটনা জরুরিভাবে মোকাবেলার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আকরাম পয়েন্টে কয়লা ট্রান্সশিপমেন্ট থেকে উদ্ভূত ঝুঁকি মোকাবেলার ব্যবস্থাগুলো নিয়ে পর্যাপ্ত পর্যালোচনা করা হয়নি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে সংবাদ সম্মেলন যৌথভাবে আয়োজন করে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।

সুন্দরবনের কাছে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ ও ভারত নির্মাণ করছে।

বাম দলগুলোর পাশাপাশি পরিবেশবাদীদের একটি অংশের আশঙ্কা, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। তবে সরকার তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বরাবরই বলে আসছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে বাপার সাধারণ সম্পাদক ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আবদুল মতিন বলেন, “এ প্রকল্পের কয়লা পরিবহন ও নদী ড্রেজিংয়ের জন্য সরকার যে ইআইএ রিপোর্ট করেছে তা সঠিকভাবে করা হয়নি। এটি আজ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত।”

বাপার সহ-সভাপতি রাশেদা কে চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম ও ভূগোল পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম ও বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস এসময় উপস্থিত ছিলেন।