জনগণকে আর্কাইভস সম্পর্কে ধারণা দিতে মন্ত্রীর তাগাদা

জাতীয় আর্কাইভস নিয়ে সাধারণ মানুষের স্পষ্ট ধারণা নেই বলে মনে করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2017, 06:50 PM
Updated : 8 June 2017, 06:50 PM

আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় আর্কাইভস ভবনের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আর্কাইভস প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে নানা পরামর্শ দেন।

৯ জুন আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস হলেও সংস্কৃতিমন্ত্রীর ইউনেস্কো সদরদপ্তরে সফর থাকায় একদিন আগেই এই দিবসটি উদযাপন করছে আর্কাইভস অধিদপ্তর। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আর্কাইভস, সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইন্টারকালচারালিজম’।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলতে হয়, আর্কাইভস নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা স্পষ্ট নয়। আর্কাইভস কেন স্থাপন হল, এতে কী আছে, কী কাজ হয়- তা সাধারণ মানুষ কি শিক্ষিত সমাজই সঠিকভাবে অবহিত নন।”

আর্কাইভসের গুরুত্ব জনগণকে সঠিকভাবে বোঝাতে না পারলে ইতিহাসের সংরক্ষিত দলিল-দস্তাবেজ ‘ধূলিধূসর হয়ে পড়ে থাকবে’ বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

মন্ত্রী অভিযোগ করেন, নিয়ম অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সরকারি দপ্তরের দলিল দস্তাবেজ সংরক্ষণের জন্য আর্কাইভসে দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ দপ্তর তা করছে না।

“এগুলো দিলে আর্কাইভস আরও সমৃদ্ধ হত। আজ থেকে ৫০ বা ১০০ বছর পরে এ ‍ডকুমেন্টগুলোর অসাধারণ মূল্য হবে।”

ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান গবেষণায় আর্কাইভসের ‘বড় ভূমিকা’ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী।

প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া পুরানো নথিপত্রগুলোকে স্ক্যান করে তার রেপ্লিকা সংরক্ষণ ও সফট কপিগুলো ওয়েবসাইটে আপলোড করার নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। পাশাপাশি প্রাপ্ত ডকুমেন্টগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের জন্য একটি আধুনিক প্রকল্প শুরু করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আর্কাইভস ভিজিট কারযক্রমকে আরও বেগবান করার আহ্বান জানান তিনি।

আর্কাইভসের পরিচালক মজিবর রহমান আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. ইব্রাহীম হোসেন খান।

মজিবর রহমান আল মামুন জানান, ২৫ লাখ নথিপত্রের মধ্যে তারা তিন লাখ নথি ‘শিগগিরই’ স্ক্যান করে অনলাইনে প্রকাশ করবেন।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আর্কাইভাল গুণসম্পন্ন সরকারি ও বেসরকারি নথিপত্রের গবেষণা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় আর্কাইভস।

প্রতিষ্ঠানটির সংরক্ষণে রয়েছে ১৮৫৪ সাল থেকে এ যাবৎকালের সরকার, পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের নথিপত্র, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নথিপত্র, ১৭৬০ সাল থেকে ১৯১৫ পর্যন্ত সময়কালের কয়েক হাজার জেলা রেকর্ডস। 

সংরিক্ষত আছে পূর্ববাংলা সরকারের ৯১৮৫৯-১৯৬৪ সময়কালের বিপুল সংখ্যক প্রডিসিংস ও ফাইলপত্র, ১৮২৬-১৯৯৫ সময়কালের ঢাকার ঐতিহাসিক নথিপত্র। জমিদার ও জমিদারি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নথিপত্রও রয়েছে এখানে।

জাতীয় আর্কাইভস ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস এবং দেশের বিভিন্ন জেলা কালেক্টরেট রেকর্ডরুম থেকে ১৮৫৪-১৯৬৭ সময়কালের বাংলা প্রদেশ তথা বিভিন্ন বিভাগ জেলা ও থানাওয়ারি বিপুল সংখ্যক ম্যাপ সংগ্রহ করেছে।

প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহে রয়েছে  ১৮০০-১৯৭২ সময়কালের বিপুল সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ ও দুষ্প্রাপ্য প্রশাসনিক রিপোর্ট, অধ্যাদেশ, পার্লামেন্টারি দলিলপত্র, ১৮৩২-২০১০ সময়কালের কলকাতা গেজেট, পাকিস্তান গেজেট ও বাংলাদেশ গেজেট।

১৯৪৭-২০১৩ সময়কালের জাতীয় সংবাদপত্রগুলোর পাশাপাশি এখানে ১৮৭৪-১৯১৬ সময়কালের বাংলা সংবাদপত্রের কিছু অংশের ৫৭টি মাইক্রোফিল্ম রোল সংগ্রহ করেছে আর্কাইভস।

১৯৮৭ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতার পরিবেশিত দৈনিক রেডিও মনিটরিং রিপোর্টও রয়েছে এখানে।