আগে গবেষণা, পরে সমুদ্র সম্পদ আহরণ: দীপু মনি

উপকূলীয় অঞ্চলের ৩৫ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টি মাথায় রেখে বঙ্গোপসাগরের সম্পদ আহরণের তাগিদ দিলেও তার আগে গবেষণার পক্ষপাতি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।   

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2017, 04:26 PM
Updated : 4 June 2017, 04:36 PM

রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বঙ্গোপসাগর নিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ক এক সেমিনারে আলোচনা করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি দীপু মনি।

তিনি বলেন, “উপকূল অঞ্চলের ৩৫ লাখ মানুষের জীবন সাগরের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাদেরকে মাথায় রেখে আমাদের এর উন্নয়ন চিন্তা করতে হবে। একই সাথে সমুদ্রের সম্পদের বিষয়টির সঙ্গে জড়িত ১৬ কোটি মানুষকেও মাথায় রাখতে হবে।”

বঙ্গোপসাগরে গবেষণা ছাড়া কোনো সম্পদ আহরণ না করার পক্ষে অবস্থান জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “সমুদ্রে কী সম্পদ আছে, সেই গবেষণা যেমন করতে হবে, তার পাশাপাশি সেই সম্পদ কীভাবে আহরণ করতে পারবো, আহরণের পদ্ধতি কী হবে এবং সেই আহরণ যেন টেকসই হয়, সেই গবেষণাও আমাদের করতে হবে।”

বিষয়টি সরকারের মাথায় আছে বলে জানান সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে একই তালে পরিবেশের সুরক্ষার উপর জোর দেন তিনি।

দীপু মনি বলেন, উপকূলে বনায়ন, সুন্দরবনকে সুরক্ষা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি ‘সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে’ এগিয়ে যাচ্ছে।

‘ব্লু-ইকোনমি: বাংলাদেশ এবং বে অব-বেঙ্গল রিজিওনাল কো-অপারেশন’ বিষয়ক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন দীপু মনি।

তিনি বলেন, “সমুদ্রে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হলে, সেই অধিকার কাজে লাগিয়ে কীভাবে মানুষের উন্নয়ন করা যায়, সেই বিষয়টি আমরা ভেবেছি।

“ভেবেছি বলেই ২০০৯ সালে বাংলাদেশে মাত্র দুইটি মেরিন একাডেমি ছিল, কিন্তু এখন দেশে ২২ টি মেরিন একাডেমি। সিদ্ধান্ত নিয়েই এগুলো স্থাপন করা হয়েছে।”

সমুদ্র বিষয়ক এসব প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে নিজের ভূমিকার কথাও বলেন দীপু মনি।

আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্র বিজয়ের তিন বছর পরও ‘ব্লু ইকোনমির’ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না- সেমিনারে এক বক্তার এ অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে ব্লু ইকোনমি নতুন ধারণা। ২০১২ সালের আগে আমাদের দেশে ব্লু ইকোনমি নিয়ে কথা হয়নি। ব্লু ইকোনমি ধারণাটা বিশ্বেও বেশিদিন হয়নি।”

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ‘ব্লু ইকোনমির’ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। এই বিষয়ে এগুতে গেলে সময়ের প্রয়োজন। এখানে অনেক মন্ত্রণালয় জড়িত, সব মন্ত্রণালয় যৌথভাবে ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এককভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে একটি জাহাজ অনুসন্ধানের জন্য আনা হয়েছে। সেটি কার্যক্রমও শুরু করেছে।

“গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ আমাদের অভিজ্ঞতায় ছিল না। আমাদের বঙ্গোপসাগর অত্যন্ত রাফ। এখানে ১২ মাস অনুসন্ধান চালানো যায় না। এমনভাবে সম্পদ আহরণের চিন্তা করছি- যাতে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ইতিবাচক হয়। সেই চিন্তা করে সরকার সমুদ্রে অনুসন্ধান কাজ করছে।”

গভীর সমুদ্রে গবেষণা ছাড়া মাছ আহরণ করা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গবেষণার মাধ্যমে টেকসই পদ্ধতিতে মাছ আহরণ করা হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজও শুরু করেছি। আমরা আশা করি- সেই কাজ শেষ করে অনতিবিলম্বে মাছ ধরার কাজও শুরু করতে পারব।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স ও ফিশারিজ ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক এম শাহাদাত হোসাইন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

বিমসটেকের মহাসচিব সুমিত নাকালডালা, শ্রীলঙ্কার হাই কমিশনার ইয়াসোজা গুনাসেকেরা, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর প্রতিনিধি কমোডর এ এম মামুন চৌধুরী, কোস্টগার্ডের প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন মামুনুর রশিদ এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফরোজা পারভিন সেমিনারে বক্তব্য দেন।