আপন জুয়েলার্সের সাড়ে ১৩ মণ সোনা জব্দ

আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শো-রুম থেকে আটক করা সাড়ে ১৩ মণ সোনা ও ও ৪২৭ গ্রাম হীরা জব্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

লিটন হায়দারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2017, 04:29 PM
Updated : 2 March 2021, 03:20 PM

রোববার এসব স্বর্ণালঙ্কার বাংলাদেশ ব্যাংকে হস্তান্তর করা হবে বলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানিয়েছেন।

শনিবার রাতে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপন জুয়েলার্সের মালিকরা স্বর্ণের বৈধতার পক্ষে কোনো কাগজ দেখাতে না পারায় আনুষ্ঠানিকভাবে সেগুলো জব্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

“আগামীকাল সকালে সংশ্লিষ্ট সকলের উপস্থিতিতে এসব সোনা জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পৌঁছে দেওয়া হবে।”

আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ এবং তার দুই ভাই গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদ

বনানীতে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের বাবা দিলদার আহমেদ আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক। এই পরিবারের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানের অভিযোগ থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে একটি অনুসন্ধান কমিটি করে তদন্ত শুরু করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

শুল্ক গোয়েন্দারা গত ১৪ ও ১৫ মে আপন জুয়েলার্সের গুলশান ডিসিসি মার্কেট, গুলশান এভিনিউ, উত্তরা, সীমান্ত স্কয়ার ও মৌচাকের পাঁচটি শো-রুমে অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ১৩ মণ সোনা ও ৪২৭ গ্রাম হীরা আটক করেন, যার দাম প্রায় ১৭৯ কোটি টাকা।

পরে এসব স্বর্ণালঙ্কার আপন জুয়েলার্সের মালিকদের জিম্মায় দিয়ে শো-রুমগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়। সোনা-গহনার বৈধতার কাগজপত্র দেখাতে আপন জুয়েলার্সের মালিকপক্ষকে তলব করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

দুই দফায় শুল্ক গোয়েন্দাদের মুখোমুখি হয়েও স্বর্ণালঙ্কারের বৈধতার পক্ষে তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি বলে মইনুল খান আগেই জানিয়েছিলেন।

দিলদারের বড় ছেলে সাফাত আহমেদ বনানী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি

গত মঙ্গলবার দিলদারদের তিন ভাইকে শেষবার জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০০ জন ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে ২০০ গ্রাম করে স্বর্ণ বহন (ব্যাগেজ রুলে) করেছেন এমন কাগজের ফটোকপি দেখিয়েছে তারা। কিন্তু ওই ব্যক্তিদের কাছ থেকে তারা এই সোনাগুলো কিনে নিয়েছেন কি না এমন কোনো রশিদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।

“ব্যাগেজ রুলসে আনা স্বর্ণ কমার্শিয়াল কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় না। তাদের অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা এই কাগজগুলো সংগ্রহ করেছে।”

এছাড়া আপন জুয়েলার্সের মালিকরা আয়কর ও ভ্যাটের দলিলে যে পরিমাণ স্বর্ণ মজুদ থাকার কথা বলেছেন, তার সঙ্গে আটক স্বর্ণের পরিমাণের বিস্তর ফাঁরাক রয়েছে বলে জানান মইনুল খান।

আপন জুয়েলার্সের মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ চলার মধ্যেই তাদের কাছে সোনা গচ্ছিত রাখা ব্যক্তিদের সোনা বুঝে নিতে বলে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। ১৮২ জন সেখানে সোনা রাখার দাবি করেন। তাদের ৮৫ জনকে আটক সোনার মধ্য থেকে ২ দশমিক ৩৩ কেজি সোনা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

ধর্ষণের ঘটনায় দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন সাফাত (কালো টি-শার্ট)

বাকিদের দাবিকৃত সোনা-গহনা আপন জুয়েলার্সের জিম্মায় রাখা হবে জানিয়ে মইনুল খান বলেন, এর পরিমাণ খুব বেশি হবে না।

স্বর্ণালঙ্কার জব্দের এই সিদ্ধান্তের পর বক্তব্য জানতে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদারের মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

দিলদারের ছেলে সাফাত ও তার বন্ধুরা গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করে অভিযোগ তুলে গত ৬ মে থানায় মামলা হয়।

এই মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ ও সাদমান সাকিফ এবং সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও তার দেহরক্ষী রহমত আলী।

সাফাতের বন্ধু নাঈমও আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন

এদের মধ্যে সাফাত ও নাঈমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দুই ছাত্রীর। বাকিরা তাদের সহযোগিতা করেন বলে মামলায় বলা হয়।

সাফাতসহ পাঁচ আসামিকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাফাত ও নাঈম ‘দোষ স্বীকার’ করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।