মোরা পরিণত স্থল নিম্নচাপে, কমেছে সংকেত

উপকূল অতিক্রম করার পর স্থলভাগে এসে ক্রমশ শক্তি হারিয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোরা পরিণত হয়েছে স্থল নিম্নচাপে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2017, 11:44 AM
Updated : 30 May 2017, 02:44 PM

ঝড়ের বিপদ কেটে যাওয়ায় দেশের চার সমুদ্র বন্দরকে মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে দুপুরেই স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছিল। আরও উত্তরে সরে গিয়ে সন্ধ্যার দিকে সেটি অবস্থান করছিল ভারতের ত্রিপুরায়।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় যে বৃষ্টি হচ্ছে, বুধবার নাগাদ তা কমে যেতে পারে বলে জানান তিনি।   

মোরা নিয়ে আবহাওয়ার শেষ বুলেটিনে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে তারপর সাবধানে চলাচল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গত ২৬ মে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর ২৮ মে সকালে তা নিম্নচাপে এবং মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। সোমবার সন্ধ্যায় তা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলে আবহাওয়া অফিস।

অনুমিত সময়েই মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি শক্তির বাতাস নিয়ে কক্সবাজার-চট্রগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করে মোরা।

তার ঘণ্টা পাঁচেক পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ মোরার শক্তি কমে আসার কথা জানান।

ঘূর্ণিঝড়টি আরও দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হলে মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হবে বলে তখনই জানিয়েছিলেন তিনি। 

দুপুরে ঝড়ের দাপট কমে এলে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝড়ে প্রায় ২০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পাওয়ার কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

কক্সবাজার ও রাঙামাটিতে গাছচাপা পড়ে চারজন এবং ভোলায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কক্সবাজার শহরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।

মোরার প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে আভাস দিয়ে রেখেছিল আবহাওয়া অফিস। তবে ভাটার সময় ঝড়টি উপকূল অতিক্রম শুরু করায় জলোচ্ছ্বাস ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেনি বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এনডিসি তাহমিদুর রহমান জানিয়েছেন।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সোমবার থেকে বন্ধ থাকা চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম মঙ্গলবার বিকাল ৪টা থেকে চালু হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ সোমবার বিকাল থেকে সারা দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার বেলা ২টার পর।

নিরাপত্তার কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও কক্সবাজার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠা-নামাও শুরু হয়েছে।

উপকূলীয় বিভিন্ন জেলার ৪ লাখ ৬৮ হাজার মানুষকে রাতে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ঝড় কেটে যাওয়ার তারাও বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।