শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবনের দুবলার চর উপকূল থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের নতুন এই দ্বীপে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ফলাফল তুলে ধরে এ সম্ভাবনার কথা জানান তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল রিসার্চ ইউনিটের অধীনে ২৮ সদস্যের একটি গবেষক দল বঙ্গবন্ধু দ্বীপ নিয়ে গবেষণা করে; বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন সিনেট কক্ষের সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন গবেষক দলের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম।
আশেপাশের পরিচিত পর্যটন স্থানের সঙ্গে মিলিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপটিকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসাবে তুলে ধরার পরামর্শ দেন তিনি।
অধ্যাপক শহীদুল বলেন, বঙ্গবন্ধু দ্বীপের আশেপাশের আরো বেশ কয়েকটি পরিচিত ট্যুরিস্ট স্পট রয়েছে, যার মধ্যে কটকা এবং দুবলার চর অন্যতম। তবে এই স্থানগুলোর তুলনায় বঙ্গবন্ধু দ্বীপে ট্যুরিজম বিকাশের সম্ভাবনা বহুগুণ বেশি। এছাড়া নিকটবর্তী পুতনির চরেও প্রশস্ত সমুদ্র সৈকত রয়েছে।
“ফলে এই সম্ভাবনাময় সৈকত সমূহকে একটি মাস্টার প্ল্যানের আওতায় এনে এই অঞ্চলে ইকো-ট্যুরিজম বিকাশের কার্যকর ভূমিকা নেওয়া যেতে পারে।”
মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরের বঙ্গবন্ধু দ্বীপে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দ্বীপটির স্থায়িত্ব, জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশগত নানা দিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক শহীদুল জানান, বর্তমানে দ্বীপটির আয়তন ৭ দশমিক ৮৪ বর্গকিলোমিটার এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ মিটার উচ্চে অবস্থিত। দ্বীপটির চারিদিকে গড়ে উঠেছে প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫০০ মিটার প্রশস্ত সি বিচ।
এর সঙ্গে ছোট ছোট বালিয়াড়ি এবং এক দশকের কম সময়ে গড়ে ওঠা সবুজ শ্যামল বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল রিসার্চ ইউনিটের এই গবেষক।
১৯৯২ সালে মালেক ফরাজি নামে একজন প্রথম সেই দ্বীপে অবতরণ করেছিলেন জানিয়ে অধ্যাপক শহীদুল বলেন, “মৎস শিকারি মালেক ফরাজি বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ ভক্ত হওয়ায় তখনকার বৈরি পরিবেশেও বঙ্গবন্ধুর নামে দ্বীপটির নামকরণ করেন।
“তখন এর আয়তন ছিল মাত্র ২ একর এবং সেটি ছিল সম্পূর্ণ কাদা ও বালুময়। এরপর দীর্ঘদিন এর কোনো ক্রমবৃদ্ধি না হলেও ২০০৪ সালের পর থেকে দ্বীপটি দ্রুত বাড়তে থাকে এবং ২০১৩ সালের দিকে এসে বর্তমান অবয়ব লাভ করে।”
পর্যটন আকর্ষণে কীভাবে এই দ্বীপ সম্ভাবনাময় হতে পারে তার ব্যাখ্যায় গবেষক দলের প্রধান বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ সবুজ শ্যামল বনাঞ্চল, প্রশস্ত বালুকাভূমি বা বিচ, স্বচ্ছ পানি, সাঁতারের জন্য উপযোগী স্থান ও সমুদ্র জীববৈচিত্র্য। বঙ্গবন্ধু দ্বীপে এর প্রায় সবগুলোরই সন্নিবেশ রয়েছে।
প্রশস্ত বালুকাভূমিতে সব ধরনের বিচ গেইমস এবং সূর্যস্নানের ব্যবস্থা করা যাবে বলে জানান অধ্যাপক শহীদুল।
“বালিয়াড়িকে অপরিবর্তিত রেখে পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা যাবে পরিবেশবান্ধব আবাসস্থল।”
তিনি জানান, চারটি ধাপে গড়ে ওঠা এই দ্বীপ বর্তমানে পূর্ণতা লাভ করেছে। দ্বীপটির কোথাও চোরাবালি নেই। চারিদিকের পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং পানির গুণগত মানও আদর্শিক পর্যায়ের।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, গবেষণালব্ধ ফলাফল বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদ, উপকূলীয় অঞ্চলের সম্পদ ব্যবহার, সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতি এবং পর্যটন নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কার্যক্রমের সম্ভাবনা সৃষ্টি হল। এটা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার আর্থিক সীমাবদ্ধতা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, গবেষণাগারের অপ্রতুলতার মধ্য দিয়েও অত্যন্ত নীরবে নানা বিষয়ে বহুমাত্রিক মূল্যবান গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। তবে এখানকার গবেষকরা প্রচারবিমুখ হওয়ায় ও গণমাধ্যমের অনাগ্রহের কারণে সেটা সেভাবে প্রকাশ পাচ্ছে না।”
অধ্যাপক শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে ২৮ সদস্যের একটি অনুসন্ধানী দল ১১ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা বঙ্গবন্ধু দ্বীপে সর্বপ্রথম একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে।
গবেষণা দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নিয়ামুল নাসের, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং গবেষণার আর্থিক সহযোগী অ্যাম্বিয়ান্স বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিদ্যা বরণ (শিমুল) সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।