হাওরে ‘দুর্নীতি’ তদন্তের নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

অকাল বন্যায় হাওরে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির জন্য বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2017, 04:06 PM
Updated : 24 May 2017, 04:32 PM

বুধবার বিকালে কমিশনের ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করতে গেলে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদকে এ নির্দেশ দেন তিনি।

বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে দুদক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, “হাওরাঞ্চলে যে সকল কাজ হয়েছে, তাতে কোনো দুর্নীতি হয়েছে কি না সে ব্যাপারে খতিয়ে দেখার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে বলেছেন। আমরাও উনাকে আশ্বস্ত করেছি, যদি হাওরে কোনো দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাহলে সেই দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

গত মার্চের শেষদিকে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তলিয়ে যায় হাওরাঞ্চল। এতে কিশোরগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ আশপাশের ছয়টি জেলার হাওর এলাকার মোট দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আট লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি পরিবার।

ওই সময় হেলিকপ্টারে করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন কিশোরগঞ্জের মিঠামঈন থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আসা আবদুল হামিদ।

হাওরে অকাল বন্যায় ফসলহানির জন্য বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে এরইমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবোর কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন দুদক কর্মকর্তারা।

গত ৪ মে পাউবোর মহাপরিচালকসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বলেন,হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সংস্থার প্রচণ্ড গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে

“তারা যথাযথভাবে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ডিজি থেকে শুরু করে সবাই তা স্বীকার করেছে।”

২০১৬ সালে সুনামগঞ্জের ৩৭টি হাওরের ডুবে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজে ৬৫ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প নেওয়া হয়।

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা দপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী,দুইজন ঠিকাদার বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ওই কাজ ঠিকমতো না করলেও এবারও তাদেরই কাজ দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ১৬ মে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা পরিদর্শন করেন

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সাক্ষাতে রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কমিশনের কাজের প্রশংসা করে একই গতিতে কাজ করতে বলেছেন।

“রাষ্ট্রপতি বলেছেন, সরকার আমাদের সকল সহযোগিতা করবেন। উনার (রাষ্ট্রপতি) পক্ষ থেকেও আমাদের কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ছেন।”

২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারকে ৬৫টি সুপারিশ করেছে দুদক। ২০১৫ সালে ৩২টি সুপারিশ করেছিল কমিশন।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবেদন দেওয়ার সময় রাষ্ট্রপতি তৃণমূল পর্যায়ে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক  আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি দুদককে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথভাবে তদন্ত করতে বলেছেন, যাতে ইতিবাচক ফল আসে।

সাক্ষাতে দুদকের চেয়ারম্যান তার প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।

তিনি জানান, গত বছর দুদক ১৩ হাজারের মতো দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৭টির বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং ৫৮৮টি অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

এই সময়ে দুদক ৩৫৯টি মামলা দায়ের করেছে, ১৩ জনকে হাতেনাতে ঘুষ নেওয়ার সময় আটক করা হয়েছে এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা তৈরিতে গত বছর দুদকের ৩০টি গণশুনানির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সরকার গতবারের সুপারিশের কয়টা বাস্তবায়ন করেছে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, “সুপারিশ কার্যকর হল কি না, তা মনিটর করার মতো সক্ষমতা দুদকের নেই।”

তবে দুদকের সুপারিশ নিয়ে সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে দাবি করে তিনি বলেন, “মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আমাদের পুরো রিপোর্টটি নিয়ে আলোচনা করেছে। সুপারিশগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়েছে। ক্যাবিনেট যখন পাঠায়, তখন বুঝতে হবে সরকারের আন্তরিকতা ছিল। ক্যাপাসিটি, রিসোর্স সমস্যা থাকতে পারে।”

রাষ্ট্রপতির কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিলের সময় দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে দুই কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ ও এএফএম আমিনুল ইসলাম এবং সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল ছিলেন।