দুই তরুণী ধর্ষণ: বনানী থানা পুলিশের ‘গাফিলতির প্রমাণ’

বনানীর হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা, ধর্ষিতাদের সঙ্গে আচরণ এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে থানা পুলিশের গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশেরই তদন্ত কমিটি।

লিটন হায়দার অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2017, 03:34 PM
Updated : 20 May 2017, 04:01 PM

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার কমিটি করে দেওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় শনিবার তদন্ত গুছিয়ে আনার কথা জানিয়েছেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববারই পুলিশ কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেন তারা।

তদন্তে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নিতে গড়িমসির অভিযোগ, পুলিশ আসামিদের কাছ থেকে কোনো সুবিধা নিয়েছে কি না, আসামিদের গ্রেপ্তারে তাদের ভূমিকা কী ছিল এবং ‘ভিকটিমদের’ সঙ্গে তাদের আচরণের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান কমিটি প্রধান।

তদন্তে কী পাওয়া গেছে তা এই মুহূর্তে বলা ঠিক হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যেসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হবে, তাদের শাস্তি পেতেই হবে।”

জন্মদিনের পার্টির কথা বলে গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে ঢাকার দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।

বাংলাদেশে স্বর্নালঙ্কারের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার দুই বন্ধু এবং তার দেহরক্ষী ও গাড়িচালককে এই মামলায় আসামি করা হয়।   

এই মামলা নিতে বনানী থানা পুলিশ গড়িমসি করে দুই দিন পার করে দেয় এবং তাদের হয়রানি করে বলে অভিযোগ করেন ওই দুই শিক্ষার্থী। বনানী থানার ওসি ফরমান আলীর বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ থেকে মোটা অংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগও আসে সংবাদমাধ্যমে।

পুলিশের ওই ভূমিকার সমালোচনা করে এই বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

বনানী থানা, ছবি: গুগল স্ট্রিট ভিউ থেকে

এই প্রেক্ষাপটে মামলা তদন্তের ভার বনানী থানা থেকে পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশনে দেওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে কমিটি করেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।  

মামলার তদন্তের দায়িত্ব উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশনে দেওয়ার দুই দিনের মাথায় ১১ মে সিলেট থেকে সাফাত ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় ‘দোষ স্বীকার’ করে এরইমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তারা। পরে মামলার অপর তিন আসামিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বনানী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে গঠিত ওই তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় (ক্রাইম) ও যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন।

এই কমিটিকে সহায়তার জন্য গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম, উপ-কমিশনার (উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন) ফরিদা ইয়াসমিন, উপ-কমিশনার (গুলশান) মুস্তাক আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একজন সদস্য শনিবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তদন্ত সংশ্লিষ্ট প্রায় সবার সঙ্গে কথা বলেছেন তারা।

“তদন্তে বনানী থানা পুলিশের বেশ গাফলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলার নেই।”