নরসিংদীর আস্তানায় ‘আতিয়া মহলের জঙ্গিরা’

নরসিংদী সদরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িতে পাঁচ থেকে ছয়জন থাকার কথা জানিয়ে র‌্যাব বলছে, তাদের মধ্যে সিলেটের আতিয়া মহল থেকে পালিয়ে আসা তিন থেকে চারজন ‘জঙ্গি’ রয়েছেন।

ওবায়দুর মাসুম লিটন হায়দার ও নরসিংদী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2017, 01:07 PM
Updated : 20 May 2017, 10:06 PM

শনিবার সন্ধ্যার দিকে নরসিংদীর গাবতলীর চিনিসপুর ইউনিয়নের উত্তর গাবতলী গোরস্থানের উত্তর পাশের একতলা বাড়িটি ঘেরাও করে র‌্যাব।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান রাত সোয়া ৮টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাড়ির ভিতরে পাঁচ থেকে ছয়জন জঙ্গি আছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। আমরা প্রাথমিকভাবে তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলব। পর্যায়ক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

এর ঘণ্টা দুয়েক পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আতিয়া মহল থেকে পালিয়ে আসা তিন থেকে চারজন এখানে আছেন। তারা ঢাকা যাওয়ার চেষ্টা করছিল। আমরা তাদের অবস্থান সর্ম্পকে নিশ্চিত হয়ে এই বাড়ি ঘেরাও করেছি। ”

ওই বাড়িতে অবস্থানকারীদের একজন মাসুদুর রহমান গাবতলীর জামেয়া কাসেমিয়া কামেল মাদ্রাসার ছাত্র বলে তার বাবা আব্দুল মজিদ জানিয়েছেন।

ছেলের বরাত দিয়ে তিনি বলেন,  সেখানে আবু জাফর, মুজিবুর রহমান, মসিউর রহমান ও সালাহউদ্দিন নামে আরও চারজন আছেন।

গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকার বাসিন্দা মজিদ বলেন, “মাসুদ দাখিল পরীক্ষার্থী। সে জাফরের কাছে প্রাইভেট পড়তে ওই বাড়িতে গিয়েছিল।”

তিনি জানান, মাসুদ আগে গাজীপুরের পোড়াবাড়ির একটি মাদ্রাসায় পড়ত। বছর দুই আগে সে এই মাদ্রাসায় এসে ভর্তি হয়।

তার ছেলে জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত নয় দাবি করে মজিদ বলেন, “তাকে জীবিত অবস্থায় বের করে আনেন। অপরাধী হলে প্রচলিত আইনে তার বিচার করেন।”

মাসুদের ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অবস্থানের খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে বাবা মজিদের সঙ্গে বড় ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুর রহমান মাসুম ঘটনাস্থলে পৌঁছান।

নরসিংদী শহর থেকে কিছু দূরে জামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসার কাছে ওই বাড়ি গত ৩ মে তিন অবিবাহিত পুরুষ ভাড়া নেন বলে ঘটনাস্থলে বাড়ির মালিকের ভাই জাকারিয়া সাংবাদিকদের জানান।

তিনি বলেন, “তাদের পরিচয় সম্বলিত ফরম থানায় দেওয়া হয়েছে। আজ আরও দুইজন ওই বাসায় ওঠে। তাদের তথ্য জানানো হয়নি।”

তার এই বক্তব্যের পরই জাকারিয়াকে আটক করে পুলিশ।

রাতে মাসুদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে মজিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাসুদ বলেছে, প্রাইভেট পড়তে এসে সাড়ে ৪টার দিকে দরজায় আওয়াজ শুনি। গিয়া দেখি বাইরে দিয়া লাগানো। জানালা দিয়া বাইরে তাকাইয়া দেখি চারদিকে পুলিশ ঘেরাও কইরা রাখছে। আমি মনে করছি,হয়ত বাইরে কোনো ঘটনা ঘটছে এই জন্য পুলিশ দরজা লাগাইছে।

“আমি এরপরও দেড় ঘণ্টার মতো পড়েছি। কিন্তু দেখি মাগরিব পার হইয়া গেলে দেখি আস্তে আস্তে বাড়ির সামনে আরও পুলিশ জড়ো হচ্ছে। বাইরে থেকে ফোন দিতেছে, এইখানে নাকি জঙ্গি পাওয়া গেছে। আমরা জানিও না। ফোন দেওয়ার পর জানতে পারলাম। পরে সবাইকে ফোন দিলাম। জঙ্গিবাদ তো দূরের কথা। ‘জ’ শব্দটার সঙ্গে কোনোদিন সম্পৃক্ত ছিলাম না।”

ওই বাড়িতে থাকা সালাহউদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস এবং রোববার আবু জাফরের মাস্টার্স পরীক্ষা বলে ছেলের বরাত দিয়ে জানান মজিদ।

তিনি বলেন, “ছেলে বলেছে, আবু জাফরের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের আগুয়ানদী গ্রামে। সে ওই এলাকার সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুর আত্মীয়,নরসিংদী আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের এক নেতার ভাগ্নে।

“তারা সবাই আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত। তারা যদি চুল পরিমাণও অপরাধী হয় তাহলে যে কোনো শাস্তি মেনে নেব। সন্দেহ হলে ওনারা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে আসুক।”

ওই বাড়ি ঘিরে ১৪৪ ধারা জারি করার কথা জানিয়েছেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস।

রাত সাড়ে ১২টার ‍দিকে বাড়িটির কাছ থেকে সাংবাদিকদের সরিয়ে দেয় র‌্যাব। তবে রাতে সেখানে অভিযান চালানো হবে না বলে র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা রাতে আর কিছু করব না। সকালে অভিযান চালাব।

“সবাইকে জীবিত ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাব।”

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ‘আতিয়া মহলে’ জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলাকালে পাশেই গত ২৫ মার্চ রাতে বোমার বিস্ফোরণে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদসহ সাতজন নিহত হন।

এরপর মৌলভীবাজারে দুটি বাড়িতে পুলিশ-র‌্যাবের অভিযানে ১০ জন নিহত হয়, যারা সিলেটের ওই বোমার বিস্ফোরণে জড়িত ছিল বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য।