র‌্যানসমওয়্যারে বাংলাদেশে ‘আক্রান্ত ৩০’

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কম্পিউটার ম্যালওয়্যার ‘র‍্যানসমওয়্যারে’ বাংলাদেশে এই পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েছেন দেশের সাইবার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা।

গোলাম মুজতবা ধ্রুবও রিফাত রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2017, 01:05 PM
Updated : 15 May 2017, 04:49 PM

বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার হওয়ায় সামনে বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্ক করছেন তারা।

গত শুক্রবার বিশ্বের ১০০টির মতো দেশে একটি ‘র‌্যানসমওয়্যার’ ছড়িয়ে পড়ে, যাতে আক্রান্ত হয় স্বাস্থ্য ও টেলিকমসহ বিভিন্ন খাতের বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক।   

সোমবারও এশিয়া ও ইউরোপের অল্প কিছু নতুন কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ফেইসবুকভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা সহায়তাকারী সংগঠন ‘ক্রাইম রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশন’ এর উপদেষ্টা তানভীর হাসান জোহা বাংলাদেশেও আক্রান্ত হওয়ার খবর জানান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ পর্যন্ত ৩০ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিজস্ব কম্পিউটার আক্রান্ত হবার খবর পেয়েছি এবং সেগুলো সমাধানও করে দেওয়া হয়েছে।”

ক্যাসপারস্কি ল্যাবের বাংলাদেশ-ভুটানের পরিবেশক ‘অফিস এক্সট্রেক্ট’ সিইও প্রবীর সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এরই মধ্যে আমরা দেশের মাঝারি ধরনের পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আক্রান্ত হবার অভিযোগ পেয়েছি।”

ছবি- রয়টার্স

ইন্টারনেট গেইটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিছু পার্সোনাল কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু কী পরিমাণ ছড়িয়েছে তা জানা নেই।”

তানভীর জোহা বলেন, “আমরা দেখেছি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে এই ভাইরাসের আক্রমণ বেশি হয়, তবে মোবাইল ও ট্যাবেও হতে পারে।”

ভাইরাসের শিকার হয়ে কেউ সাহায্য চাইলে বিনামূল্যে সমাধান করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ক্র্যাফের উপদেষ্টা তানভীর।

সাইবার নিরাপত্তা ফার্ম আভাস্ট জানিয়েছে, তারা ৯৯টি দেশে ‘র‌্যানসমওয়্যার’ আক্রমণের ৭৫ হাজারটি ঘটনা শনাক্ত করেছে।

আক্রান্ত হওয়ার ধরন কেমন?

এ বিষয়ে তানভীর জোহা বলেন, “সবার সমস্যা প্রায় একই ধরনের, একই প্যাটার্ন মেনে ম্যালওয়্যারটি ছড়িয়ে পড়ছে। ভাইরাসটি সাধারণত ভুয়া নিউজ লিংক, পর্ন সাইট ও ভুয়া ই মেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।”

বোঝা যাবে কী করে?

আক্রান্ত কম্পিউটারের স্ক্রিন

র‍্যানসমওয়্যারে কম্পিউটার আক্রান্ত হলে কী করে নিশ্চিত হওয়া যাবে- জানতে চাইলে তানভীর জোহা বলেন, “র‍্যানসমওয়্যার কম্পিউটারে প্রবেশ করার পর হার্ডড্রাইভে অবস্থিত সব ফাইল একটি বড় কী দিয়ে এনক্রিপ্ট করে ফেলে। ফলে কম্পিউটার চালু করতে নিলে আপনার কম্পিউটার অটো রিস্টার্ট হবে।

“এনক্রিপশন কী ছাড়া (মুক্তিপণ না দিয়ে)  ব্যক্তিগত কম্পিউটারে ঢোকা করা যাবে না। কম্পিউটারে প্রবেশ করতে তিনশ-চারশ ‘বিট কয়েন’ পে করতে হবে, যার আনুমানিক মূল্য চার-পাঁচশ ডলার।”

প্রতিরোধে কী করণীয়?

ভাইরাস প্রতিরোধে কিছু সাবধানতা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তানভীর জোহা।

১. অপরিচিত কারও মেইল খোলা যাবে না।

২. পাইরেটেড কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে না।

৩. সফটওয়্যার অথেনটিক না হলে ডাউনলোড করা যাবে না।

৪. গুগল প্লে স্টোর ছাড়া অ্যাপ নামানো ঠিক হবে না।

আপডেটেড উইন্ডোজ ও সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার, সব তথ্য ও ফাইলের ব্যাকআপ রাখা এবং যে কোনো অপরিচিত মেইল, এটাচডমেন্ট ও ফাইল খোলা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অফিস এক্সট্রেক্টের সিইও প্রবীর সরকার।

সামনে বড় ঝুঁকি?

যুক্তরাজ্যে আক্রমণে অচল হয়ে পড়ে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের আইটি নেটওয়ার্ক- ছবি: গার্ডিয়ান

শুক্রবারের পর সোমবারও বিভিন্ন দেশে ‘র‍্যানসমওয়্যার’ ছড়িয়ে পড়ার খবর এসেছে।

বাংলাদেশেও বড় আকারের আরও দুটি আক্রমণের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এক্সট্রেক্টের সিইও প্রবীর সরকার।  

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এরই মধ্যে বিশ্বে র‍্যানসমওয়্যারের দ্বিতীয় পর্যায়ের আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশে এই ভাইরাস আক্রমণ করলে তা ঠেকানো যাবে না, কারণ আমাদের দেশের কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের অধিকাংশেরই অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার পাইরেটেড।”

“আক্রান্ত কম্পিউটারের সংখ্যা দিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হবে না। আমার শঙ্কা অনেক প্রতিষ্ঠানই হয়ত পথে বসে যাবে,” বলেন তিনি।

র‌্যানসমওয়্যার কী?

ছবি- রয়টার্স

র‌্যানসমওয়্যার হল এক ধরনের ম্যালওয়্যার, যা কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ব্যবহারকারীর কাজে বাধা দেয় এবং অনেক সময় হার্ড ড্রাইভের তথ্য একটি নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড দিয়ে এনক্রিপ্ট করে ফেলে।

এর ফলে ব্যবহারকারী ওই কম্পিউটার ব্যবহার করতে গেলে তার কাছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মুক্তিপণ বা অর্থ দাবি করা হয়। 

এ ধরনের ম্যালওয়্যার কম্পিউটার ওয়ার্ম বা ট্রোজান ভাইরাসের মতো নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

জোসেফ পোপ নামের এক হ্যাকার ১৯৮৯ সালে প্রথমবারের মত র‌্যানসমওয়্যার তৈরি করেন যা ‘এইডস’ বা ‘পিসি সাইবর্গ’ নামে পরিচিতি পায়। ২০১৩ সালে র‌্যানসমওয়্যার ব্যবহার করে বিটকয়েন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের বেশ কিছু ঘটনার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আসে।