ইয়াবা পাচারকারীদের শাস্তি পেতেই হবে: প্রধানমন্ত্রী

মাদক পাচারের বদনাম থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারকে তুলে আনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2017, 11:19 AM
Updated : 6 May 2017, 01:55 PM

শনিবার এই জেলায় কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের পর জনসভায় তিনি বলেছেন, “আমি শুনেছি কক্সবাজারের বদনাম রয়েছে, এখান থেকে নাকি ইয়াবা সাপ্লাই হয়।

“এটা বন্ধ করতে হবে। যেই এর সাথে জড়িত তাকে শাস্তি পেতেই হবে।”

কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কয়েক বছর আগে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনেও তার নাম আসে।

তবে বদি তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা একটা জিনিসই চাই। শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষক জনগণ সবার কাছে চাই... সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

শনিবার সকালে বোয়িং বিমানে চেপে কক্সবাজার পৌঁছে পর্যটন শহরটিতে সুপরিসর বিমান চলাচল উদ্বোধনের পরে ইনানীতে গিয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর বিকালে কক্সবাজার শহরে ফিরে জনসভাস্থল শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ছয়টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং নয়টির ভিত্তিস্থাপন করেন তিনি।

কক্সবাজারের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “খালি হাতে আমি আসিনি, উপহারও নিয়ে এসেছি।”

কক্সবাজার বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে আরও পরিকল্পনার কথা জানান সরকার প্রধান। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন এবং চার লেইনের সড়ক করার আশ্বাস দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজার গড়ে উঠবে।

মহেশখালীতে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা। এই দ্বীপটিকে ডিজিটাল উপজেলা ঘোষণার কথাও বলেন তিনি। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও তিনি বলেন।

বক্তব্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দল বিএনপির সমালোচনাও করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

কক্সবাজারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের হত্যার জন্য বিএনপি দায়ী করেন তিনি। ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচাল ও এর পরে সরকার পতনের আন্দোলনে গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার কথাও বলেন তিনি।

১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের সময় শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা হিসেবে কক্সবাজারের জনগণের মাঝে ছুটে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, তারা (বিএনপি) শুধু লুটপাট-দুর্নীতি করেছে।

“ঘূর্ণিঝড়ে লক্ষ লক্ষ লোক মারা গেছে। কোনো খবর বিএনপি নেত্রী জানত না। তখন আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ে ছুটে এসেছিলাম। বিএনপির সরকারের কেউ আসেনি। বিএনপি মানুষের দুর্দিনেও নাই, উন্নয়নেও নাই। আছে কিসে? লুটপাট, নিজেদের বিলাস বাড়ানোতে।”

“যখনই নৌকা ভোট পায় তখনই দেশের উন্নয়ন হয়,” মন্তব্য করে আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দিতে আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফার সভাপতিত্বে জনসভায় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও রাশেদ খান মেনন বক্তব্য রাখেন।

উদ্বোধন-উন্মোচন

প্রধানমন্ত্রী এই সফরে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের ১০০ শয্যার ছাত্রী নিবাস, কক্সবাজার সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবন কাম এক্সামিনেশন হল, কক্সবাজার সরকারি কলেজের ১০০ শয্যার ছাত্রী নিবাস, উখিয়ার বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব মহিলা কলেজের দ্বিতল একাডেমিক ভবন এবং মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইনের উদ্বোধন করেন।

এছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), এলজিইডির আওতায় কক্সবাজার সদর উপজেলার বাকখালী নদীর উপর খুরুস্কুল ঘাটে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্সগার্ডার ব্রিজ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার আইটি পার্ক, মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, মহেশখালীতে ইনস্টলেশন অব সিংগেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প, নাফ ট্যুরিজম পার্ক, কুতুবদিয়া কলেজের একাডেমিক ভবন এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিস ভবনের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।