মূল্যায়নের ‘ত্রুটি সারাতে’ পাসের হারে ধাক্কা

উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতির রোগ সারানোর চেষ্টায় চলতি বছর মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় সার্বিক পাসের হার নেমে এসেছে ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশে, যা গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2017, 05:52 PM
Updated : 4 May 2017, 05:52 PM

সেই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ জিপিএ, অর্থাৎ পাঁচে পাঁচ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের তুলনায় পাঁচ হাজার কমে এবার ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ হয়েছে।  

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, এবারের ফলাফল দেখে কেউ বিস্মিত হতে পারে, কারও কারও কাছে ধাক্কা বলে মনে হতে পারে, কিন্তু তার কাছে এটা প্রত্যাশিতই ছিল।

গতবছর ৮৮ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করার পর এই হার আরও বাড়ার প্রত্যাশার কথা বলেছিলেন তিনি। বছর বছর পাস বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়ছে না- এমন অভিযোগ তিনি প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন জোরের সঙ্গে।

তবে নাহিদ এবার স্বীকার করে নিয়েছেন, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে আগে পরীক্ষকদের গাফিলতি আর পদ্ধতিতে ত্রুটি ছিল। এবার নতুন পদ্ধতিতে ‘যথাযথ’ মূল্যায়ন হওয়ায় পাসের হার কিছুটা কমেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এবারের ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এটা আমাদের অগ্রগতি, সেই কারণে জিনিসটা আমি সবাইকে স্বাভাবিকভাবে নিতে অনুরোধ জানাব।”

তার বক্তব্যের সার কথা হল- আগে পরীক্ষকরা দায়সারাভাবে খাতা দেখতেন, তাদের মূল্যায়নের পার্থক্যও হত অনেক বেশি। ফলে শিক্ষার্থীদের কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হত, কেউ আবার বাড়তি সুযোগ পেয়ে যেত।

 

তিন বছর গবেষণা করে এবার একটি নমুনা ও মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়নে ‘সমরূপতা’ এসেছে বলে দাবি আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানের, যিনি বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটেরও (বিইডিইউ) প্রধান।   

এসএসসির ফল প্রকাশের পর এই মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে সাধুবাদ ও সমালোচনা- দুই ধরনের প্রতিক্রিয়াই এসেছে।

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা অনেক দিন ধরেই পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতির সংস্কারের কথা বলে আসছিলেন। আগের ত্রুটি স্বীকার করে নিয়ে সরকার দেরিতে হলেও তা ‘সারানোর’ পথে এল।

অন্যদিকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতির সমালোচনায় বলেছেন, এতে ‘শিক্ষার আমলাতান্ত্রিকরণ চূড়ান্ত পর্যায়ে’ পৌঁছাল।

 

এবারের ফলাফল

# ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত এবারের এসএসসির তত্ত্বীয় এবং ৪ থেকে ১১ মার্চ ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়।

# দশ বোর্ডে মোট ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৯৬২ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন।

# আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসিতে ৮১ দশমিক ২১ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে ৭৬ দশমিক ২০ শতাংশ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৭৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

# আট বোর্ডে ৯৭ হাজার ৯৬৪ জন, দাখিলে ২ হাজার ৬১০ জন এবং কারিগরিতে ৪ হাজার ১৮৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। 

# পাসের হারে এবারও ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে। ৭৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছাত্রের বিপরীতে ৮০ দশমিক ৭৮ শতাংশ ছাত্রী মাধ্যমিকে পাস করেছে।

# ছাত্রদের মধ্যে ৫৩ হাজার ৪৮৮ জন এবং ৫১ হাজার ২৭৩ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। শতকরা হিসেবে এ দিক দিয়ে দুই পক্ষই সমান।

# ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ পাসের হার নিয়ে দশ বোর্ডে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রাজশাহী বোর্ড। আর সবচেয়ে বেশি ৪৯ হাজার ৪৮১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা বোর্ড।

# মোট ২৮ হাজার ৩৫৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এবার মাধ্যমিকে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৬৬টি স্কুল ও মাদ্রাসায় পাস করেছে সবাই। ৫৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেনি। 

# মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাজে ফলের সঙ্গে গণিত ও ইংরেজিতে পাসের হার কমায় কুমিল্লা বোর্ডে এবার ফল বিপর্যয় ঘটেছে। এ বোর্ডের মাত্র ৫৯ দশমিক ০৩ শতাংশ এবার পাস করতে পেরেছে, যেখানে গতবছরও এ হার ছিল ৮৪ শতাংশ।

এক নজরে ১০ বোর্ড

 

২০১৭

২০১৬

বোর্ড

পাসের হার (%)

জিপিএ-৫

পাসের হার (%)

ঢাকা বোর্ড

৮৬.৩৯

৪৯,৪৮১

৮৮.৬৭

রাজশাহী

৯০.৭০

১৭,৩৪৯

৯৫.৭০

কুমিল্লা

৫৯.০৩

৪,৪৫০

৮৪.০০

যশোর

৮০.০৪

৬,৪৬০

৯১.৮৫

চট্টগ্রাম

৮৩.৯৯

৮,৩৪৪

৯০.৪৪

বরিশাল

৭৭.২৪

২,২৮৮

৭৯.৪১

সিলেট

৮০.২৬

২,৬৬৩

৮৪.৭৭

দিনাজপুর

৮৩.৯৮

৬,৯২৯

৮৯.৫৯

মাদ্রাসা বোর্ড

৭৬.২০

২,৬১০

৮৮.২২

কারিগরি বোর্ড

৭৮.৬৯

৪,১৮৭

৮৩.১১

মোট

৮০.৩৫

১,০৪,৭৬১

৮৮.২৯

নতুন পদ্ধতি কী

সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফলাফল হস্তান্তরের সময় এবং দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে দুই দফা খাতা মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ।  

তিনি বলেন, “আমাদের পরীক্ষার খাতা দেখার যে রেওয়াজ অতীতকাল থেকে চলে আসছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের সামনে। বোর্ড থেকে তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা খাতা নিয়ে যেতেন, সেই খাতা দেখে আবার জমা দিতে যেতেন, এখানেই শেষ। এটার কোনো মনিটরিং ছিল না, কোনো নিয়ম-রীতি আমাদের ছিল না।”

তিনি জানান, তিন বছর ধরে গবেষণা করে শিক্ষকরা কীভাবে খাতা মূল্যায়ন করেন তা দেখেছে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বিইডিইউ)। সেখানে দেখা যায়, প্রধান পরীক্ষকরা আসলে খাতা ‘দেখতেন না’, কোনোরকমে একটি প্রতিবেদন দিয়ে দিতেন। আর যারা খাতা দেখতেন, তারাও ‘ভালো করে দেখতেন না’। অনেক সময় নম্বর দেওয়া হত ‘ওজন করে, কত পাতা লিখেছে সেই পরিমাণে’। 

এতে পরীক্ষায় বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হত জানিয়ে তিনি বলেন, “একটা খাতা বাছাই করে ২০টি কপি করে ২০ জন শিক্ষককে দেওয়া হল। দেখা গেল খাতায় ২০ ধরনের নম্বর দেওয়া হয়েছে। ১০ এর মধ্যে কেউ দিয়েছেন ৮, কেউ ৬, কেউ ৫, কেউ ৭ নম্বর। এমন তারতম্য হয়ে যাচ্ছে।”

তিন বছরের গবেষণার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, এবার এসএসসির উত্তরপত্র মূল্যায়নে তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান নাহিদ।

“এটা থেকে বেরিয়ে আসতে আমারা প্রধান পরীক্ষকদের ওই মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রস্তুত করেছি, একটা ট্রেনিংও দিয়েছি। তাদের অধীনে যে পরীক্ষক তাদেরও সংক্ষিপ্ত ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। এবার পরীক্ষায় বাস্তবে প্রয়োগ করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা অগ্রসর হই। পদক্ষেপ যখন আমরা নিতে গেছি তখন ভাল করে বুঝতে পারছি এটার একটা প্রভাব হয়তো আমাদের ফলাফলে পড়তে পারে।”

নাহিদ বলেন, সব পরীক্ষক চাপের মধ্যে ছিলেন, সেজন্য এবার খাতা মূল্যায়নে ‘ফাঁকি দেওয়ার’ সুযোগ ছিল না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কীভাবে খাতা মূল্যায়ন করতে হবে সে বিষয়ে প্রথমে একটি নির্দেশনা জারি করা হয় গত ৩১ জানুয়ারি। তার আলোকে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট ছয় পৃষ্ঠার একটি নির্দেশনা পরীক্ষকদের দেয়।

নাহিদ বলেন, “পরীক্ষার পর প্রধান পরীক্ষকরা ও ভাল শিক্ষকরা বসে মোটামুটি উত্তরটা কি হওয়া উচিত, এর উত্তরটা তারা তৈরি করেন। বলা হচ্ছে এটা হচ্ছে সাধারণ উত্তর। এটাকে মানদণ্ড ধরে শিক্ষক নম্বর দিয়েছেন। এর চেয়েও ভাল কেউ লিখতে পারে। এটা আমরা এবার কার্যকর করেছি। এজন্য এবার খাতা ভালভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের ফলাফল দেখে মনে হবে অনেক বেশি ফেল করেছে কিংবা জিপিএ-৫ কম পেয়েছে ইত্যাদি। বিস্ময় হতে পারে যে আমাদের লেখাপড়া খারাপ হচ্ছে, ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় খারাপ করছে।… কিন্তু বিষয়টা ঠিক এইভাবে নয়, আমরা এজন্য প্রস্তুত ছিলাম। কারণ জানি আমরা যে পদক্ষেপগুলো নিতে যাচ্ছি তার প্রভাবে প্রথম দিকের পরীক্ষায় এভাবেই পড়তে পারে।”

আর যা যা নিয়ামক

পাসের হার এবার সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হলেও তা সার্বিক গড়ে তা আশির ওপরে আছে। কিন্তু কুমিল্লায় সেই হার ৫৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশে নেমে আসার পেছনে মূলত তিনটি কারণ দেখছেন শিক্ষক ও বোর্ড কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, মানবিক ও ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের বাজে ফল, এমসিকিউ অংশের নম্বর কমিয়ে দেওয়া এবং সার্বিকভাবে খাতা মূল্যায়নে কড়াকড়ি এই বিপর্যয়ে ভূমিকা রেখেছে। 

এ বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষায় ৫৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ পাস করলেও মানবিকে পাসের হার নেমেছে ৪১ দশমিক ১৪ শতাংশে।

কুমিল্লার শিক্ষার্থীদের ১৪ শতাংশ ইংরেজিতে এবং ১৯ শতাংশ গণিতে ফেল করেছে। এর সঙ্গে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বিষয় ব্যবসায় উদ্যোগ, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং মানবিকের বিষয় ভূগোল, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা ও অর্থনীতিতে গতবারের তুলনায় পাসের হার কম হওয়ায় সার্বিকভাবে ফল বিপর্যয় ঘটেছে।  

কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ বলেন, এবার পাসের হার কমার ক্ষেত্রে এমসিকিউয়ের নম্বর কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও প্রভাব রেখে থাকতে পারে।

২০১৬ সাল পর্যন্ত ১০০ নম্বরের মধ্যে মধ্যে ৬০ নম্বর সৃজনশীল ও ৪০ নম্বর এমসিকিউ অংশের জন্য বরাদ্দ ছিল। আর যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক অংশ আছে সেগুলোর এমসিকিউ অংশে ছিল ৩৫ নম্বর। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় এমসিকিউ অংশের নম্বর গতবারের চেয়ে ১০ করে কমেছে। ওই ১০ নম্বর যোগ হয়েছে সৃজনশীল অংশে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এমসিকিউ অংশের নম্বর কমিয়ে দেওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী এবার ওই অংশে ফেল করেছে। অনেকে আন্দাজে পূরণ করেও আগে নম্বর পেত, এখন সেই সুযোগ কিছুটা কমেছে।

গুণগত পরিবর্তন আসবে?

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা অনেক দিন ধরেই পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের কথা বলে আসছিলেন। এবার সেই ‘ক্রটি সারানোর’ চেষ্টাই করা হচ্ছে।

“বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বিইডিইউ) দেখিয়েছে, একই উত্তরপত্র ১০ জনে মূল্যায়ন করলে আকাশ-পাতাল পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে। সেখানে যারা জেনুইন নম্বর পাওয়ার কথা তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বৈষম্য দূর করার প্রথম পদক্ষেপ এবার ছিল।”

নতুন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা ফলাফল ‘একটু এদিক-ওদিক হয়েছে’ মন্তব্য করে রাশেদা বলেন, “এই প্রক্রিয়া অনেক আগে শুরু করা উচিত ছিল। এই যে ঢালাও পাস, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারা… সেই প্রশ্ন তো বার বারই সামনে আসছিল।”

তিনি বলেন, শিক্ষার মান বাড়াতে হলে পরীক্ষা পদ্ধতি ও শিক্ষাক্রম সংস্কারের কাজে হাত দিতেই হবে। এখন সেগুলোই করা হচ্ছে।

“এর ফলে উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ বলে যে ধারণা ছিল, সেটাই প্রমাণিত হল।”

তবে এমসিকিউ এর নম্বর কমিয়ে দেওয়ায় প্রভাব এসএসসির ফলাফলে পড়েছে বলে মনে করেন না রাশেদা কে চৌধুরী।

“শিক্ষার্থীরা তো গাইড বইভিত্তিক পড়ালেখা করত এবং কোচিংয়ে যেত। সেটা থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনভাবে উত্তর দেবে এই জায়গাটায় ধরা খেয়েছে।”

শহরাঞ্চলের বাইরের শিক্ষার্থীরা এবার ইংরেজি ও গণিতে বেশি ফেল করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব বিষয়ের ভালো শিক্ষক সেখানে আদৌ আছে কি না? মাধ্যমিক পর্যায়ের বড় চ্যালেঞ্জ হল যোগ্যতা ও দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষক স্বল্পতা।”

উত্তরপত্র মূল্যায়নে শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়ে যে নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে, তা মানসম্মত শিক্ষক তৈরিতে কতুটুকু ভূমিকা রাখবে সেই প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান।

প্রশ্ন ফাঁসের ধারাবাহিকতা চলছে মন্তব্য করে হোসেন জিল্লুর বলেন, “পাসের হার কেন কমল সেটি ভালোভাবে দেখতে হবে। কারণ শিক্ষার্থীরা হঠাৎ করে কম বুদ্ধির হয়ে গেল বিষয়টি কিন্তু তা নয়।”

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, তারা শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন আনতে চান, সেজন্যই পরীক্ষা পদ্ধতি ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ।

“সারা দেশে ইউনিফর্ম মূল্যায়ন পদ্ধতি হয়েছে। শিক্ষকরা আগে ঢালাওভাবে নম্বর দিতেন এবার সেই সুযোগ রাখিনি।… এবার উত্তরপত্রের কোয়ালিটি মূল্যায়ন হয়েছে, এটা অব্যাহত থাকবে।”

পাস-ফেল নিয়ে বিচলিত নন মন্তব্য করে অধ্যাপক মাহবুব বলেন, “আরও নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হবে। সব পাবলিক পরীক্ষার খাতা নতুন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে।”