মানবিক ও ব্যবসায় প্রশাসনের ধাক্কায় কুমিল্লায় ফল বিপর্যয়

মাধ্যমিক পরীক্ষায় ইংরেজি ও গণিতের সঙ্গে মানবিক ও ব্যবসায় প্রশাসনের পাঁচ বিষয়ে বড় ধাক্কা কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলে বড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে এবার।

শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2017, 02:50 PM
Updated : 4 May 2017, 05:03 PM

দশ বোর্ডে সার্বিকভাবে ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করলেও কুমিল্লা বোর্ডে সবচেয়ে কম ৫৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী এবার উত্তীর্ণ হয়েছে।

গত বছরও যেখানে কুমিল্লার ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল, সেখানে এবারের বিপর্যয়ের পেছনে মূলত তিনটি কারণ দেখছেন শিক্ষক ও বোর্ড কর্মকর্তারা।

এগুলো হল- ১. মানবিক ও ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের বাজে ফল, ২. এমসিকিউ অংশের নম্বর কমিয়ে দেওয়া এবং ৩. সার্বিকভাবে খাতা মূল্যায়নে কড়াকড়ি।

বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, এ বোর্ডের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি শিক্ষার্থী ইংরেজি ও গণিতে ফেল করেছে, সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমিল্লা বোর্ড থেকে এবার যে এক লাখ ৮২ হাজার ৯৭৯ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল, তাদের ৭৪ শতাংশই মানবিক ও ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থী; বাকিরা বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী।  

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, তিন বিভাগ মিলিয়ে মোট এক লাখ ৮ হাজার ১১ জন এবার পাস করেছে। যে ৪১ শতাংশ ফেল করেছে, তার মধ্যে ৩৭ শতাংশই মানবিক ও ব্যবসায় প্রশাসনের।

বিজ্ঞান বিভাগে ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষায় ৫৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ পাস করলেও মানবিকে পাসের হার নেমেছে ৪১ দশমিক ১৪ শতাংশে। মানবিক ও ব্যবসায় প্রশাসনে শিক্ষর্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সার্বিকভাবে এ বোর্ডের পাসের হার অনেকটা নেমে এসেছে। 

এ বোর্ডে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪ হাজার ৪৫০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। অথচ গতবছর ৬ হাজার ৯৫৪ জন এ বোর্ড থেকে পূর্ণ জিপিএ পেয়েছিল।

কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল খালেক জানান, তার বোর্ডে ইংরেজিতে ২৫ হাজার ৬০৬ জন এবং গণিতে ৩৪ হাজার ৯৮৯ জন শিক্ষার্থী এবার ফেল করেছে। এই সংখ্যা মোট পরীক্ষার্থীর যথাক্রমে ১৪ ও ১৯ শতাংশ।

অথচ গত বছরও ইংরেজিতে ৯৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং গণিতে ৯২ দশমিক ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল বলে কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী গণিতে পাস করলেও ইংরেজিতে ফেল করেছে। আবার অনেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটেছে। সব মিলিয়ে এ দুই বিষয়ের ধাক্কা তিন বিভাগেই কম বেশি লেগেছে।”

এর সঙ্গে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বিষয় ব্যবসায় উদ্যোগ, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং মানবিকের বিষয় ভূগোল, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা ও অর্থনীতিতে গতবারের তুলনায় পাসের হার কম হওয়ায় সার্বিকভাবে ফল বিপর্যয় ঘটেছে।

কায়সার আহমেদ বলেন, “যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি শিক্ষার্থী ইংরেজি ও গণিতে ফেল করেছে সেগুলোকে চিহ্নিত করে আমরা ওইসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে বসব, আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।”

মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় কুমিল্লা বোর্ডে যেন অনিয়ম না হয়, ‘জান প্রাণ’ দিয়ে সেই চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে এবার উত্তরপত্র মূল্যায়ন হওয়ায় অতিমূল্যায়ন বা অবমূল্যায়ন হয়নি।”

এবার সব বোর্ডেই পাসের হার কমার প্রসঙ্গ তুলে ধরে কায়সার আহমেদ বলেন, “এমসিকিউয়ে নম্বর কমে যাওয়ায় পাসের হারে এর প্রভাব পড়তে পারে।”

যেসব বিষয়ে রচনামূলক ও এমসিকিউ অংশ রয়েছে উভয় অংশের পরীক্ষায় আলাদা করে পাস করতে হয়। আর এক বিষয়ে ফেল করলেও সার্বিক ফলাফলে তা ফেল।

২০১৬ সাল পর্যন্ত ১০০ নম্বরের মধ্যে মধ্যে ৬০ নম্বর সৃজনশীল ও ৪০ নম্বর এমসিকিউ অংশের জন্য বরাদ্দ ছিল। আর যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক অংশ আছে সেগুলোর এমসিকিউ অংশে ছিল ৩৫ নম্বর।

এবারের এসএসসি পরীক্ষায় এমসিকিউ অংশের নম্বর গতবারের চেয়ে ১০ করে কমেছে। ওই ১০ নম্বর যোগ হয়েছে সৃজনশীল অংশে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমসিকিউ অংশের নম্বর কমিয়ে দেওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী এবার ওই অংশে ফেল করেছে। অনেকে আন্দাজে পূরণ করেও আগে নম্বর পেত, এখন সেই সুযোগ কিছুটা কমেছে।”

সারা দেশে এবার সার্বিকভাবে পাসের হার কমার পেছনে উত্তরপত্র মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতির পাশাপাশি পরীক্ষার হলে কড়া নজরদারির কথা বলছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। একই সুর শোনা গেছে কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল খালেকের কথায়।

“সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেছি, বোর্ড কর্তৃপক্ষের তদারকি ছিল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা অনুসারে যথাযথভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেছি।

তিনি জানান, গতবছর যেখানে ৮১১ জন বহিষ্কার হয়েছিল, এবার হয়েছে এক হাজার ১৪৩ জন। পরীক্ষার হলে যেন অনিয়ম না হয়, সেজন্য এবার ‘বেশি কড়াকড়ি’ ছিল। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের ব্যাপারেও সতর্কতা ছিল, যাতে ‘কেউ সুযোগ নিতে না পারে’।

“এখন বিদ্যালয় পরিদর্শককে বলেছি কোন কোন বিদ্যালয়ে এই অবস্থা (বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছে) হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে। সার্বিক বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে জানাব।”

আর সার্বিকভাবে পাসের হার কেন কমল শিক্ষাবোর্ডগুলো তা মূল্যায়ন করে খতিয়ে দেখবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড এবং মন্ত্রণালয় থেকেও বিষয়গুলো দেখা হবে।

এবার পাসের হার আরও কম ছিল, গ্রেস নম্বর দিয়ে তা বাড়ানো হয়েছে- এমন গুঞ্জনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নাহিদ বলেন, “নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”