পাসের হার কমেছে মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তনে

আগে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে পরীক্ষকদের গাফিলতি ছিল জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, এবার নতুন পদ্ধতিতে যথাযথ মূল্যায়ন হওয়ায় মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার কিছুটা কমেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2017, 07:47 AM
Updated : 4 May 2017, 03:26 PM

তিনি বলেছেন, “আমাদের কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক এবং এজন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু যারা শুনে অভ্যস্ত তাদের কাছে একটু বিস্ময় হতে পারে। যেহেতু এটা একটা আমাদের অগ্রগতি, সেই কারণে জিনিসটা আমি সবাইকে স্বাভাবিকভাবে নিতে অনুরোধ জানাব।”

স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের এই সমাপনী পরীক্ষায় এবার ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, যা গতবারের তুলনায় ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ পয়েন্ট কম।

এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন শিক্ষার্থী, যা গতবারের তুলনায় পাঁচ হাজার কম।

শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এই ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী।

প্রতিবারের মত এবারও ২৩টি বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সব কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে, নকলমুক্তভাবে, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা হয়েছে; বড় ধরনের কোনো সঙ্কট কোথাও হয়নি।

“অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কম হয়েছে। এটা কারও মনে প্রশ্ন আসতে পারে কেন কম হল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যথাযথভাবে যেন মূল্যায়ন হয় শিক্ষার্থীদের। এটাও একটা বড় অগ্রগতি হওয়া উচিৎ।”

মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণ তুলে ধরে নাহিদ বলেন, পরীক্ষার পর পরীক্ষকরা খাতা নিয়ে যান এবং ফলাফল জমা দেন। কিন্তু ‘অভিজ্ঞতায় দেখা যায়’- তারা ভালো করে খাতা দেখেন না।

এ কারণে একটি পরীক্ষা পর্যালোচনা পর্ষদ করে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার ব্যবস্থা হয়। একই খাতা ২০টি ফটোকপি করে দেওয়া হয় দেশের ২০ জন সেরা পরীক্ষককে। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে আলাদাভাবে নম্বর নেওয়া হয়।

“দেখা যায়, ২০ জনই ২০ ধরনের নম্বর দিয়েছেন। দুইজনও একরকম দেননি। একজন ছাত্র ৪ পাচ্ছে, আরেকজন ছাত্র এখানে সাত পেয়ে যাচ্ছে। তাহলে কত পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে!”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আগেই আমরা বলেছি, যিনি প্রধান পরীক্ষক, তিনি আসলে খাতা দেখেন না। এই একটা রিপোর্ট দিয়ে দেন। আবার যিনি খাতা দেখেন, তিনিও ভালো করে দেখেন না। বোঝা যায়, অনেক সময় তিনি এটা ওজন করে দিয়ে দিলেন, কত পাতা লিখেছে সেই পরিমাণে। 

“এটা হলে তো সত্যিকার অর্থে আমাদের ছেলেমেয়েদের মূল্যায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে না। এতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কিংবা সে একটা বাড়তি সুযোগও পেয়ে যেতে পারে। ”

খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির উন্নয়নে তিন বছর ধরে কাজ করার কথা জানিয়ে নাহিদ বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রথমে প্রধান পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে তাদের মাধ্যমে সারা দেশে সব পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সবশেষে এ বছর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ‘একটি মান’ বজায় রাখার এই ব্যবস্থা চালু হয়।

“এ জন্য আমরা এই খাতাগুলো দেখে একটা উত্তরপত্র আগেই বাছাই করে আমাদের হেড এক্সামিনাররা বসে এবং দুই বার চেক করে একটা সাধারণ মান ঠিক করে দেন। সে অনুযায়ী পরীক্ষকরা খাতা মূল্যায়ন করেন।”

নাহিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি এবং দেশের শিক্ষাবিদদের সহযোগিতা নিয়েই মূল্যায়ন ব্যবস্থার এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

“আমাদের তিন বছরের এই প্রচেষ্টার ফলাফল হচ্ছে, সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে খাতা দেখে আমরা ফলাফল আনতে পারছি। এতে ছেলেমেয়েরা আরও সিরিয়াস হবে। শিক্ষকরাও খাতা দেখা এবং পড়ানোর ক্ষেত্রে সিরিয়াস হবেন এবং এখানে আমরা সঠিক বাস্তবতা দেখতে পাব।” 

ফলাফল গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এ বছর পাসের হার একটু কম, কারণ খাতা দেখার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। খাতা দেখার পদ্ধতি অত্যন্ত সময়োপযোগী, সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ, যথেষ্ট প্রয়োজনও আছে। এর ফলে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক যারা পাঠদান করছেন তারা আরও সচেতন হবে বলে মনে করি।”