প্রধান বিচারপতিরা প্রকাশ্যে এত কথা বলেন না: আইনমন্ত্রী

কোনো দেশে প্রধান বিচারপতিরা ‘প্রকাশ্যে এত কথা বলেন না’ মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘কোনো কষ্ট থাকলে’ তা নির্বাহী বিভাগকে জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2017, 09:02 AM
Updated : 26 April 2017, 12:58 PM

প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বুধবার আইন মন্ত্রণালয়ে এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “আমি আপনাদেরকে সবিনয়ে এবং মাননীয় প্রধান বিচারপতির প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল হয়ে বলব, আপনারা অনেক উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ দেখেছেন, আপনারা প্রতিবেশী দেশও দেখেছেন। কোনো দেশে বিচারকাজ ছাড়া মাননীয় প্রধান বিচারপতিরা এত উষ্মা, এত কথা পাবলিকলি বলেন না।”

আনিসুল হক বলেন, “আমার কথা হচ্ছে, নিশ্চয়ই উনি প্রয়োজনে বলেন, আমি এটা অস্বীকার করি না। কিন্তু উনি এই সব কথাগুলি, উনার যদি কোনো দুঃখ কষ্ট থেকে থাকে, এই সব কথাগুলি যদি উনি পাবলিকলি না বলে আমাদেরকে জানান, তাহলে আমরা হয়ত সেগুলো সুরাহা করার চেষ্টা করতে পারি।”

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান দিবস উপলক্ষে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন আইনমন্ত্রী। সেখানেই এক সাংবাদিক প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চান। 

ওই সাংবাদিক বলেন, “গতকাল প্রধান বিচারপতি বলেছেন, প্রশাসন বিচার বিভাগকে স্বাধীন হতে দিতে চায় না। বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের সঙ্কটটা আসলে কোথায়?”

জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতিকে তিনি ‘অত্যন্ত সম্মান’ করেন। প্রধান বিচারপতি যদি তার ওই বক্তব্যের কারণটা বলতেন, তাহলে অনেক ‘সুবিধা হত’।

এরপর শেখ হাসিনার সরকারের সময় বিচারকদের বেতন বৃদ্ধিসহ বিচার বিভাগের জন্য নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন আনিসুল হক।

তিনি বলেন, হাই কোর্টের বিচারকদের বেতন ৪৯ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। অন্যান্য সুবিধা যোগ করলে এই পরিমাণ এক লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হবে।

আপিল বিভাগের বিচারকদের বেতন ৫৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। সুবিধাদিসহ মোট আর্থিক পরিমাণ হবে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি।

প্রধান বিচারপতির বেতন ৫৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা হয়েছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের বেতনও বাড়ানো হয়েছে।

“আনুষঙ্গিক সুবিধাদি যা একজন বিচারপতির মর্যাদা রক্ষার জন্য দরকার, সেটা দেওয়া হয়েছে। এটা হচ্ছে অবকাঠামো বৃদ্ধির প্রথম পদক্ষেপ। আমি বলছি না, বিচার বিভাগকে বিরাট কিছু দিয়ে খুশি করার জন্য এটা করা হয়েছে।”

প্রধান বিচারপতির বক্তব্য প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, “গুরুত্ব আরোপে যে কথাটা এসেছে যে স্টেপ মাদারলি বিহেভিয়ার। আমার কথা হচ্ছে, স্টেপ মাদারলি বিহেভিয়ার যদি এই সরকারের আচরণের মধ্যে থাকত, তাহলে প্রধানমন্ত্রী এই সব জিনিসগুলো বিচারপতিদের জন্য করতেন না।

বিচারকরা যাতে স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারেন, সেজন্যই অবকাঠামো শক্ত করা হচ্ছে মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী বলেন, “সেটা শক্ত করছেন কে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।

“তাহলে কেউ যদি বলে আমরা এই সরকার, তিনি অন্যান্য সরকারের কথা কী বলেছেন, তাদেরকে ডিফেন্ড করার দরকার আমার নাই। এই সরকার বিচার বিভাগের সাথে সৎ মা সুলভ আচরণ করে (বলা), সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

ফাইল ছবি

আইনমন্ত্রী দাবি করেন, শেখ হাসিনার সরকার বিচার কাজে কখনাই হস্তক্ষেপ করে না এবং কখনোই হস্তক্ষেপ করবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন।

“আমি এই টুকু আহ্বান জানাব, আমি সব সময়ই কিন্তু আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সব কিছু নিরসন হোক-সেটা চাই। আমিতো কোনো দ্বন্দ্ব দেখি না। আমাদের আচরণে কোনো সৎ মা সুলভ ব্যবহার দেখি না। সেটা যদি উনি পয়েন্ট আউট করে দেন, সেটা আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয়ই নিষ্পত্তি করতে পারব।”

প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশের মধ্যেই নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের দূরত্বের ইঙ্গিত আছে কি না- এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমি কোনো দূরত্ব দেখি না।”

আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকও এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।