প্রধানমন্ত্রীর ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ ঘোষণা প্রত্যাহার দাবিতে স্মারকলিপি

কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে স্নাতকোত্তরের মর্যাদা দেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2017, 02:31 PM
Updated : 20 April 2017, 02:31 PM

এই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেওয়া এক স্মারকলিপিতে এক নীতি ও কারিকুলামের ভিত্তিতে আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সরকারি সনদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পাঠায় সুন্নিদের সংগঠনটি। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কওমি সনদের স্বীকৃতি বাতিলের দাবিতে দেশের সব জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিটি দেওয়া হয়েছে।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের প্রধান সমন্বয়ক এম এ মতিন এবং সদস্য সচিব মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিনের কাছে দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, এদেশের সুফি ঘরানার সুন্নিদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত সমন্বয় কমিটি’ সব সময় সরকারের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী পদক্ষেপের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও থাকতে চায়।

তবে গত ১১ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামির আমির শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কওমির দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তরের সমমানের ঘোষণা তাদের হতবাক করেছে।

“দেশের সুন্নি জনতাকে শুধু নয়, বরং সকল বিবেকবান সচেতন শিক্ষিত মানুষকে, এমনকি আপনার দল ও জোটের বুদ্ধিজীবী নির্বিশেষে সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে। আমরা আপনার এমন অবিবেচনাপ্রসূত, অযৌক্তিক ঘোষণার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আহলে সুন্নাত বলছে, কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত সরকারিভাবেই মুসলমানদের ও ইসলামি শিক্ষাকে বিভক্ত করার শামিল।

“তাই দেশে এক নীতি ও কারিকুলামের মাদ্রাসা শিক্ষা প্রণয়ন করে আলিয়া-কওমিদের একই সরকারি সনদ প্রদান করা হোক।”

এজন্য সুন্নি ও কওমিদের মধ্য থেকে ১০ জন করে মোট ২০ জন প্রতিনিধির ঐক্যমতে বই ও সিলেবাস তৈরি করে সরকারিভাবে ওই সিলেবাসের আলোকে একটি সরকারি বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষা নেওয়ায় দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।

এতে বলা হয়, “তাহলে অর্জিত সনদ সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে গ্রহণযোগ্য হবে, যা দেশে বিদ্যমান দুই ধারার মাদ্রাসা শিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ওহাবি-সুন্নি বিতর্কের শত বছরের কলঙ্কজনক অধ্যায়কেও অনেকটা মুছে ফেলতে পারবে।

“দেশ ও মুসলিম জাতির জন্য একটি সুসংবাদ হবে। আর এ ঐতিহাসিক অবদানের জন্য আপনিও হাজার বছর প্রশংসিত হবেন সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে।”

জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়ার আগে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় সমাবেশ করেন।

এতে প্রধান সমন্বয়ক এম এ মতিন বলেন, “সরকার সনদ দেবে কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করবে না, এমন নীতি সম্পূর্ণ একপেশে।

“সরকারি কোনো টাকা না নিলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুল-কলেজগুলোতে যদি সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি থাকে তাহলে কওমি মাদ্রাসার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা রহস্যজনক, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত।”

এম এ মতিন বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারলে কওমি মাদ্রাসা কেন নিয়ন্ত্রণহীন থাকবে?

“হেফাজতি তাণ্ডবের পুরস্কার দিতে গিয়ে এমন সামঞ্জস্যহীন সনদ প্রদানের মতো ভোটের রাজনীতির কারণে দেশের ইসলামপন্থিদের মধ্যে নতুন করে বিবাদ বাড়বে।”

সমাবেশে মোছাহের উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, “জনগণ জানতে চায়- যাদের নিজেদের কোনো সনদ নেই তারা কীভাবে মাস্টার্স সনদ দেওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়?

“এভাবে কওমি সনদ প্রদানের ঘোষণায় দেশে আধুনিকায়নের পরিবর্তে মগের মুল্লুকের দিকেই ঝুঁকে পড়ছে।”

কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রত্যহারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন আহলে সুন্নাত নেতারা।

এর অংশ হিসেবে ২১ এপ্রিল থেকে ২০ মে পর্যন্ত মাসব্যাপী সারা দেশের আলিয়া মাদ্রাসা এবং দরবার-খলিফায় মতবিনিময় সভা, ঢাকা-চট্টগ্রামে গোলটেবিল আলোচনা ও প্রতিবাদ সমাবেশ হবে।

এরপর ২১ মে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সমাবেশে জানানো হয়।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী, মাওলানা গোলামুর রহমান আশরাফ, মাওলানা রেজাউল করিম তালুকদার, প্রকৌশলী নূর হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ফজলুল করিম তালুকদার, নাসির উদ্দিন মাহমুদ, মুহাম্মদ আলী হোসেন, এনামুল হক ছিদ্দিকী ও ফোরকানুল আলম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।