সাম্প্রদায়িক হুমকির জবাব দিতে জাতীয় কনভেনশনের ডাক

বাঙালির অসাম্প্রদায়িক উৎসব-পার্বণ ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের ‍বিরুদ্ধে ধর্মীয় গোষ্ঠীর হুমকির জবাব দিতে ঢাকায় সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী জাতীয় কনভেনশনের ডাক দিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2017, 04:38 PM
Updated : 19 April 2017, 04:38 PM

বুধবার বিকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক প্রতিবাদী সমাবেশে জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আগামী ২০ মে এই কনভেনশনে জাতীয় পর্যায়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সারা দেশের জেলা-উপজেলা থেকেও সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠনগুলো আসবে।

তিনি বলেন, “পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করায় আমরা দেশব্যাপী তা পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন আমরা দেখেছি আবার সেই পশ্চাৎপদ শক্তি মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য হুঙ্কার দিয়েছে।

“তারা দেশব্যাপী বাংলা নববর্ষ আয়োজনের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। একই কারণে পহেলা বৈশাখের আয়োজনকে সংকুচিত করা হয়েছে।”

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সব পশ্চাৎপদ ও সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জাতীয় কনভেনশনের বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বলেন, “এই কনভেনশনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদের আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম আরও জোরদার হবে।”

সমাবেশের শুরুতে জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ হেফাজতে ইসলামকে ‘দানবের দল’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “এরা জামায়াতে ইসলামীর উত্তরসূরি। এরা ধর্মকে ব্যবহার করে এই দেশকে এক নতুন পাকিস্তানে পরিণত করতে চায়।”

পহেলা বৈশাখের আগের রাতে চট্টগ্রামে চারুকলা ইনস্টিটিউটের দেয়ালচিত্র নষ্ট করা, ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে হেফাজতসহ ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর সোচ্চার হয়ে উঠার প্রসঙ্গও উঠে আসে তার বক্তব্যে।

হাসান আরিফ বলেন, “আমরা চট্টগ্রামের চারুকলা অনুষদের দেয়ালে সেই কালো দাগ রেখে দেব। সুন্দরের প্রতিচ্ছবি যেমন আঁকছি, তেমনি আমরা জানোয়ার আর দানবের মুখ আঁকতেও ভুল করব না।”

মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক বিপ্লব গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে নির্মাতা গাজী রাকায়েত বলেন, “রমনার বটমূলের মতো দেশের প্রতিটি গ্রামে আমাদের বটমূলকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। গ্রাম থেকেই শুরু করতে হবে আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন।”

হেফাজত নিয়ে অভিনেতা নাদের চৌধুরী বলেন, “ওরা তো আসলে দেশের সব ভাস্কর্যকে ভাঙতে চায় না। ওরা চাইছে আসল ভাস্কর্যকে ভেঙে ফেলতে, অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক সেই ভাস্কর্য হচ্ছে শেখ হাসিনা।”

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম, অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে আরও অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, রামেন্দু মজুমদার, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর ও অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি।