রামপাল নিয়ে ‘অসত্য তথ্য’ কেন দিচ্ছেন, প্রশ্ন সুলতানা কামালের

সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ‘অসত্য তথ্য’ দেওয়ার অভিযোগ তুলে তার কারণ জানতে চেয়েছেন সুলতানা কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2017, 04:36 PM
Updated : 19 April 2017, 04:36 PM

যৌথ এই প্রকল্পে অর্থায়নে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের পর বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্ন রাখেন ‘সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি’র আহ্বায়ক।

রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকির মুখে পড়বে দাবি করে বিভিন্ন সংগঠনের বিরোধিতা উপেক্ষা করে এই প্রকল্পটি নিয়ে এগিয়ে চলছে সরকার।

সুলতানা কামাল বলেন, “আমরা এই প্রকল্পের দরপত্র বিশ্লেষণ করে দেখেছি, তারা (সরকার) যে কথাগুলো বলছে, সে সমস্ত যন্ত্রপাতি তারা কিনছে না। যাদেরকে ব্যবস্থাপনার ভার দেওয়া হয়েছে, তারা পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছে যে এ রকম প্রযুক্তি তারা জানে না ও বোঝেও না।

“অর্থাৎ সরকার বস্তুনিষ্ঠ কথা বলছে না। সরকার আমাদেরকে অসত্য তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রশ্নটা হচ্ছে সরকারের স্বার্থটা কোথায় এমন একগুয়েমি করার।”

সুন্দরবন রক্ষা কমিটির পাশাপাশি তেল-গ্যাস সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করছে।

সুন্দরবনের ক্ষতি না করেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দাবি করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যারা বিরোধিতা করছে, তারা না বুঝেই কথা বলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয়। ২০০ কোটি ডলারের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ১৬০ কোটি ডলার দিচ্ছে ব্যাংকটি।

এই অর্থায়নের সমালোচনা করে টিআইবির চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেন, “এক্সিম ব্যাংক কোনো রকম ন্যায়-নীতি না মেনে, কার কোথায় কী উপকার হচ্ছে, কী অপকার হচ্ছে, কার কী ক্ষতি করছে, সেসব অবস্থা না মেনে এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।

“অর্থদাতা যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে তাদেরকে বলতে চাই, তারা কিন্তু নিজেদের পকেট থেকে বের করে পয়সা দেয় না, এই সমস্ত প্রকল্পে তারা যে পয়সা দেয় সেটা কিন্তু যে কোনো দেশেরই হোক, তা সাধারণ জনগণের পয়সা।”

ভারতের পরিবেশবিদ সৌম্য দত্তকে উদ্ধৃত করে সুলতানা কামাল বলেন, ভারত তার সাড়ে সাত কোটি টন কয়লা বিক্রি করতে নেপাল ও বাংলাদেশে বাজার খুঁজছে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ সন্দেহ পোষণ করেন যে খুলনার সঙ্গে কলকাতার রেল যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্য ভারতের কয়লা আনা।

রামপাল প্রকল্পে উন্নত মানের কয়লা অন্য দেশ থেকে আনা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। 

সুলাতানা কামাল বলেন, “সরকার আমাদেরকে যে সমস্ত উত্তর দিচ্ছে, যে সমস্ত কথা বলছে ... তারা (সরকার) কিন্তু একবারও বলছে না যে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না, এটা তারা বলতে পারে না।”

সংবাদ সম্মেলনে স্কাইপে যুক্ত হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভারতীয় বংশোদ্ভূত জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. রনজিত (রন) শাহু।

রামপালের মতো কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের আগে সবদিক বিবেচনা করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়ণযোগ্য উৎসগুলোকে বিবেচনা করা উচিৎ, যাতে বায়ু, পানি, জীববৈচিত্র্য এবং মানুষের স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি না হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কয়লাভিত্তিক বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বিশ্বের খ্যাতনামা কয়েকজন বিশেষজ্ঞের গবেষণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল মতিন, সংগঠনের সদস্য ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, শরিফ জামিল প্রমুখ।