অভিযান স্থগিত, ঢাকায় সিটিং বাস আপাতত চলবে

বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনার পর সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2017, 12:35 PM
Updated : 19 April 2017, 02:48 PM

আগামী ১৫ দিন সিটিং সার্ভিস চলতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। তবে এসব বাসে সরকার নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।

১৫ দিন পর পরিবহন মালিক, যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিটিং সার্ভিসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান।

বিআরটিএর দেওয়া রুট পারমিটে সিটিং বাস চালানোর বৈধতা না থাকলেও রাজধানীতে বহু দিন ধরেই চলছে এই ধরনের বাস। এই বাসের ভাড়া বেশি রাখা হলেও সেবা নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ বরাবরই ছিল।

বাস মালিকরা ঘোষণা দিয়ে গত রোববার সিটিং সার্ভিসের বাস চালানো বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত এর বিরুদ্ধে অভিযানে নামে।

এতে অনেক বাস মালিক সড়কে গাড়ি না নামালে দেখা দেয় পরিবহন সঙ্কট। ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের বচসার মধ্যে বাস সঙ্কটের দুর্ভোগ চলছে গত তিন দিন ধরে।  

এই অবস্থার মধ্যে বুধবার বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের এলেনবাড়ীতে বিআরটিএর কার্যালয়ে বৈঠকে ডাকা হয় পরিবহন শ্রমিকদের।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১৫ দিন সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ থাকবে। তারপর সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসে এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এই সময়ের মধ্যে বিআরটিএ নির্ধারিত চার্ট অনুযায়ী সব বাসের ভাড়া নিতে হবে বলে জানান তিনি। তা না করলে সড়কে কার্যরত ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি জানান।

“কোনো অবস্থাতেই ভাড়ার ব্যাপারে আপস করব না। সরকারি হিসাবে কিলোমিটার প্রতি যা ভাড়া আছে, তা নিতে হবে।”

এই পদক্ষেপ থেকে সরে আসার বিষয়ে মশিয়ার বলেন, “একটা উদ্দেশ্য নিয়েই মালিকরা সিটিং সার্ভিস বন্ধ করেছিলেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাদের সে উদ্যোগে সহায়তা করেছি।

“তবে সিটিং সার্ভিস বন্ধ হওয়ার পর নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের অসুবিধার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তাদের গাড়িতে উঠতে সমস্যা হচ্ছে।”

সিটিং সার্ভিস বাস আটকাতে অভিযানে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত

বৈঠকের পর ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, অভিযান স্থগিতের সিদ্ধান্ত পরিবহন মালিকদের নয়।

“আপনারা হয়তো বলতে পারেন আমরা যুক্তি করে এটা করেছি, কিন্তু তা না। এখানে মালিকদের কেউ কথা বলেনি। এটা মালিকদের সিদ্ধান্ত না। সবার কথা শুনে বিআরটিএ চেয়ারম্যান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

বৈঠকে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের নেতা অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনও ছিলেন। তবে বৈঠক শেষে তিনি কোনো কথা বলেননি।

বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইলিয়াস কাঞ্চন সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পক্ষে ছিলেন।”

বৈঠকে সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান, ট্রাক কভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি রুস্তম আলী, ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রতিনিধি এবং পরিবহন মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এনায়েত উল্লাহ দাবি করেন, তারা সড়কে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে সিটিং সার্ভিস বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

“আমরা কাজটা ধরেছিলাম যে জিনিসটাকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসি। শৃঙ্খলা এলে দরকার হলে এই ভাড়া দিয়েই সিটিং সার্ভিস চালু করে দিতাম। কিন্তু তারপরও আমরা সমালোচনার পাত্র হচ্ছিলাম।”

সিটিং সার্ভিস ‘আইনি কাঠামোতে’

যাত্রীরা যদি চায়, তাহলে সিটিং সার্ভিসকে একটি আইনি কাঠামোয় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “আমরা ১৫ দিন পরে একটি বৈঠক করব, সেখানে সবাই থাকবেন। পরিবহন ও যোগাযোগ বিটের সাংবাদিকরাও তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন।

এই সিটিং সার্ভিস প্রায় বন্ধ হয়ে ছিল গত ক’দিন

“সবাই যদি মনে করেন সিটিং সার্ভিস হিসেবে একটি আলাদা কাঠামো দাঁড় করানো যায়, তাহলে তা করা হবে। সিটিং সার্ভিসকে একটা আইনের মধ্যে আনতে চাই।”

ঢাকা শহরে একটি আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা করার পক্ষে মত জানান সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, “ঢাকার নাগরিকদের জন্য একটি ভালো পরিবহন সেবা দরকার, যেখানে স্ট্যান্ডিং প্যাসেঞ্জার নেওয়া হবে না। এমন একটি রেগুলার বাস সার্ভিসের মনে হচ্ছে প্রয়োজন আছে। কিছু কিছু মানুষ এরকম একটা সার্ভিস চায়। কিন্তু এটার আইনি কাঠামো নাই।

“আমি বলেছি এরকম একটা সার্ভিস হতে পারে। যেটা আলাদা কালার করা থাকবে। যেখানে একজন যাত্রীও দাঁড়িয়ে যাবে না। তবে এটার ভাড়া থাকবে সহনীয়। এটা আমার প্রস্তাব।”

বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেন, সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সেসব কোম্পানি বাস বন্ধ রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“আমরা তাদের তালিকা তৈরি করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান শিথিল করা হলেও যানবাহনের বাম্পার, হুক ও এঙ্গেল খুলে ফেলার বিরুদ্ধে অভিযান চলবে বলে তিনি জানান।

অভিযানের সময় সড়ক থেকে বাস উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে এনায়েত উল্লাহ বলেন, “সব পরিবহনের বাস বন্ধ ছিল না। অনেক পরিবহন মালিক তাদের এঙ্গেল, বাম্পার খোলার জন্য বাস গ্যারেজে রাখায় সড়কে গাড়ি কম ছিল।

“আমার জানামতে একটি পরিবহন তাদের বাস বন্ধ রেখেছিল। অন্যরা গাড়ি নামিয়েছে। গত তিন দিন ২০ শতাংশ গাড়ি সড়কে অনুপস্থিত ছিল। তবে পরিস্থিতি আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছিল।”