যুদ্ধাপরাধ: কিশোরগঞ্জের দুই ‘রাজাকারের’ রায় বুধবার

কিশোরগঞ্জের সৈয়দ মো. হুসাইন ও মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় জানা যাবে বুধবার ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2017, 05:20 AM
Updated : 19 April 2017, 05:28 AM

মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ ও নির্যাতনের ছয় অভিযোগ রয়েছে এই দুই আসামির বিরুদ্ধে।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে তাদের সাজা হবে কি না- বুধবার সেই সিদ্ধান্ত দেবে বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে।

দুই আসামির মধ্যে মোসলেম প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হলেও হুসাইন পলাতক; মালয়েশিয়ায় রয়েছেন বলে প্রসিকিউশনের তথ্য।

২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হুসাইনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়। ওই অভিযোগ তদন্তকালে মোসলেম প্রধানের নাম আসে।

ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে ২০১৫ সালের ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার কামারহাটি গ্রাম থেকে মোসলেমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর দুইজনের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে মোট ৪৭ জনকে।

গত বছরের ৯ মে মাবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করলে বিচার শুরু হয়।

সৈয়দ মো. হুসাইন ওরফে হোসেন

সৈয়দ মোসলেহ উদ্দিন ও সৈয়দা ফাতেমা বানুর ছেলে মো. হুসাইনের জন্ম ১৯৫১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর।তার স্থায়ী ঠিকানা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাছিহাতা হলেও তার সর্বশেষ বর্তমান ঠিকানা ছিল ঢাকার খিলক্ষেতের পিংক সিটির ৬ নম্বর সড়কের ২ নম্বর বাড়ি। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কিশোরগঞ্জের হয়বতনগরে থাকতেন বলে প্রসিকিউশনের তথ্য।

হুসাইন কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে এসএসসি ও ১৯৭৫ সালে বিএ পাশ করেন।  মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মতাদর্শ গ্রহণ করেন।

ওই সময় নিকলি থানা এলাকায় ‘রাজাকার দারোগা’ হিসেবে পরিচিত হুসাইন কিশোরগঞ্জ মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন বলে প্রসিকিউশনের অভিযোগ। তিনি ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক সৈয়দ মো. হাসান ওরফে হাছেন আলীর ছোটভাই।

মোসলেম প্রধান

১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের নিকলি থানার কামারহাটি গ্রামে মোসলেমের জন্ম। তার বাবা লাভু শেখ ও মা রেজিয়া আখতার। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই; তবে অক্ষরজ্ঞান আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নিকলি ইউনিয়নের রাজাকার কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং কিশোরগঞ্জ মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন বলে প্রসিকিউশনের অভিযোগ।

মোসলেম পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।

ছয় অভিযোগ

প্রথম. নিকলীর দামপাড়া গ্রাম ও নিকলী থানা ভবন, সদরের মহাশশ্মান এলাকায় একাত্তর সালের অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হোসাইনের বিরুদ্ধে ছয় নারীকে ধর্ষণ, সুধীর সুত্রধরসহ ৩৫ জনকে হত্যা ও বাদল বর্মনসহ চারজনকে নির্যাতন।

দ্বিতীয়. নিকলী বাজার ও থানা কম্পাউন্ড এলকায় হোসাইন ও মোসলেমের নেতৃত্বে একাত্তরের ২ সেপ্টম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত কাশেম আলীসহ চারজনকে আটক ও নির্যাতন।

তৃতীয়. নিকলীর গুরুই গ্রামের পূর্বপাড়ায় ১৯৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফুল মিয়াসহ ২৬ জনকে হত্যা এবং ২৫০টি বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ।

চতুর্থ. নিকলীর নানশ্রী গ্রামে একাত্তর সালের ২১ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তোফাজ্জল খান জিতুসহ সাতজনকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ হোসাইনের বিরুদ্ধে।

পঞ্চম. একাত্তর সালের ১০ অক্টোবর নিকলী সদরের পূর্বগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল মালেককে তার নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগ হোসাইন ও মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে।

ষষ্ঠ. ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান ও মো. সেলিমকে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ রাজাকার হোসাইন কিশোরগঞ্জ পৌরসদর, প্যারাভাঙা ও শোলাকিয়ায় রিকশা দিয়ে ঘুরিয়েছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহানের মাকে তার ছেলের রক্ত দেখিয়ে বিভৎসতা প্রর্দশন করেছিলেন।